May 3, 2024
আন্তর্জাতিকলেটেস্ট

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির প্রয়াণ

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি, বাংলাদেশের বন্ধু প্রণব মুখার্জি আর নেই। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। তিন সপ্তাহ দিল্লির আর্মি হসপিটাল রিসার্চ অ্যান্ড রেফারেলে চিকিৎসাধীন থাকার পর সোমবার সন্ধ্যায় মৃত্যু হয় ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে সব পক্ষের শ্রদ্ধা পাওয়া এই রাজনীতিবিদের।
বাথরুমে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পাওয়ার পর গত ১০ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন প্রণব। অস্ত্রোপচার করতে গিয়ে তার শরীরে করোণাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এক পর্যায়ে তিনি চলে যান গভীর কোমায়। সেখান থেকে আর ফিরতে পারেননি।
তার ছেলে অভিজিত মুখার্জি সন্ধ্যায় এক টুইটে বলেন, দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আজ সবাইকে জানাতে হচ্ছে, আর আর হাসপাতালের চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টা আর সমগ্র ভারতবাসীর দোয়া ও প্রার্থনার পরও আমার বাবা শ্রী প্রণব মুখার্জি এইমাত্র মারা গেলেন।
২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ভারতের ত্রয়োদশ রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা প্রণব মুখার্জি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের ভাষায় ছিলেন ‘আ ম্যান অব অল সিজনস’।
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক টুইটে বলেন, “ভারতরত্ন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে ভারত আজ শোকগ্রস্ত”।
পাঁচ দশকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় কংগ্রেসে কাটানো প্রণবের পদধূলি নেওয়ার ছবি শেয়ার করে বিপরীত রাজনৈতিক দর্শনের দল বিজেপির নেতা মোদী লিখেছেন, দেশের উন্নয়নের গতিপ্রকৃতিতে তিনি এক অবিস্মরণীয় ছাপ রেখে গেছেন। একজন আগধারণ পণ্ডিত, এক গৌরবময় রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতির সব মহল আর সমাজের সব শ্রেণিতে তিনি শ্রদ্ধা পেয়েছেন।
একাত্তরে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যসভার সদস্য থাকাকালে তখনকার কংগ্রেস নেতা প্রণব যেমন মুক্তিকামী বাঙালির পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন, তেমনি তিনি বাংলাদেশের বন্ধু ছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি হয়েও। তার স্ত্রী রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী শুভ্রা মুখার্জি ছিলেন বাংলাদেশের নড়াইলের মেয়ে।
মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা বিদেশি বন্ধু হিসেবে ২০১৩ সালের ৪ মার্চ প্রণবের হাতে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ তুলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের তখনকার রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান।
বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এক শোকবার্তায় বলেছেন, প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতির জন্যই এক ‘অপূরণীয় ক্ষতি’।
প্রণব মুখার্জি ছিলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে প্রণব মুখার্জির ভূমিকা আমাদের বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জনমত তৈরিতে তার ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ‘পরম সুহৃদ’ প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ‘আগমান্য অবদানের’ কথা স্মরণ করার পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনে একজন ‘অভিভাবক ও পারিবারিক বন্ধুকে’ হারানোর কষ্টের কথা বলেছেন তার শোকবার্তায়।
১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ভারতে নির্বাসিত থাকাকালীন প্রণব মুখার্জি আমাদের সবসময় সহযোগিতা করেছেন। এমন দুঃসময়ে তিনি আমার পরিবারের খোঁজখবর রাখতেন এবং যে কোনো প্রয়োজনে আমার ছোট বোন শেখ রেহানা ও আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। দেশে ফেরার পরও প্রণব মুখার্জি সহযোগিতা এবং উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি আমাদের অভিভাবক ও পারিবারিক বন্ধু। যে কোনো সঙ্কটে তিনি সাহস যুগিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রণব মুখার্জির মৃত্যুতে ভারত হারালো একজন বিজ্ঞ ও দেশপ্রেমিক নেতাকে আর বাংলাদেশ হারালো একজন আপনজনকে। তিনি উপমহাদেশের রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে বেঁচে থাকবেন।

দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *