May 1, 2024
আঞ্চলিকলেটেস্ট

সাড়ে ৫ ঘণ্টা পর খুলে দেওয়া হলো প্রশাসনিক ভবনের তালা

খুবি শিক্ষার্থীদের ৫ দফা দাবিতে আন্দোলন

 

দ: প্রতিবেদক

বেতন-ফি প্রত্যাহারসহ পাঁচ দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ প্রশাসনিক ভবনের ফটকগুলোতে তালা লাগিয়ে দেয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীরা। এতে উপাচার্যসহ শতাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

পরে একটি গেটের তালা খুললেও উপাচার্যের বহির্গমন পথের ক্লোপসিবল গেট তখনও বন্ধ ছিলো। এ অবস্থায় ডিনবৃন্দ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদেরকে উপাচার্যের অফিসের বহির্গমন পথের ক্লোপসিবল গেটের তালা খুলে দেওয়ার জন্য আহবান জানান। এ পরিপ্রেক্ষিতে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সকল ডিন ও দুই শতাধিক শিক্ষকের উপস্থিতিতে তারা তালা খুলে দেয়। এ সময় উপাচার্য অফিস থেকে বের হয়ে বাসভবন অভিমুখে রওনা হলে সকল শিক্ষক তাঁর সাথে যান। বাসভবনের সামনে পৌঁছে উপাচার্য এই সহমর্মিতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষককে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান।

এসময় উপাচার্য বলেন, এটা প্রকৃত অর্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি তাদের কমিটমেন্ট এবং ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে সবাই মিলে আমরা যে অবস্থান ও সুনামের জায়গায় নিয়ে এসেছি তা যেন অক্ষুন্ন থাকে এবং ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কোনো প্রতিপক্ষ নেই। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও এগিয়ে নিতে চাই।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তানতুল্য। তাদের কোনো সমস্যা হোক বা থাকুক এটা আমাদের কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমাদের সকল প্রচেষ্টা তাদেরকে ঘিরেই, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ তারাই। অভিভাবক হিসেবে আমরা পর্যায়ক্রমে তাদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। তিনি আশা করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বোধোদয় হবে এবং তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ ধারা ও সুষ্ঠু একাডেমিক পরিবেশ রক্ষায় অবদান রাখবে।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সব ফটকগুলোতে তালা লাগিয়ে দেন এবং প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। এর আগে সকালে ক্যাম্পাসে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রয়োজনে এই মুহূর্তে মিটিং বসিয়ে তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের লিখিত আশ্বাস দেওয়া হোক। দাবি না মানা পর্যন্ত এ অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে যাবেন তারা।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো- আবাসন সংকটের দূরকরণ, বেতন ফিসের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বেতন কমানো, দ্বিতীয় পরীক্ষণের ব্যবস্থা ও কোডিং পদ্ধতির ব্যবস্থাকরণ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থি অধ্যাদেশের সংস্কার তথা সাংস্কৃতিক অবরুদ্ধতা থেকে মুক্তি ও মুক্তচিন্তা বিকাশে অধ্যাদেশের ব্যবস্থাকরণ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত যেসব দুর্নীতির তথ্য পাওয়া গেছে তার প্রতিকার করা।

শিক্ষার্থীরা জানান, গত কয়েক বছরে বেতন ফি অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। তারা নতুন টার্ম রেজিস্ট্রেশনের আগেই বেতন-ফি সহনীয় মাত্রায় কমানোর দাবি জানান। এ সময় রেজিস্ট্রেশন ফি কমিয়ে সহনীয় মাত্রায় আনা না হলে তারা রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবেন না বলেও জানান।

জানা যায়, গত ১৩ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে শিক্ষার্থীরা ছাত্র-বিষয়ক পরিচালকের মাধ্যমে উপাচার্য কাছে একটি স্মারকলিপি দেন। এরপর ২১ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেয়। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যাশিত সাড়া না পাওয়ায় বুধবার সকাল ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাদি চত্বরে সমবেত এ বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে দুপুর ১২টায় তারা শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটক অবরুদ্ধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আবার দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মসূচি শুরু করেন তারা। যা দিনভর অব্যাহত থাকে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *