April 27, 2024
আঞ্চলিকলেটেস্ট

সাতক্ষীরার যশোরেশ্বরী কালী মন্দির যে কারণে মোদির কাছে তাৎপর্যপূর্ণ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সফরকে ঘিরে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুরে যশোরেশ্বরী কালীমন্দির সংস্কার থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আগামী ২৭ মার্চ তিনি সেখানে আসবেন। সফরটি খুবই সংক্ষিপ্ত হলেও আয়োজনে কোনো ঘাটতি রাখছেনা জেলা প্রশাসন। এমনকি তার বিশ্রামের বিষয়টিও মাথায় রেখে স্থানীয় ভুমি অফিসকেও সাজানো হচ্ছে নতুন আঙ্গিকে। ভারতের পশ্চিম বাংলার নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি’র এ সফরটি অনেক তাৎপর্যপূর্ণ হলেও তিনি বাংলার সর্ব দক্ষিনের জেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগরকে বেঁছে নিয়েছেন একটি ধর্মীয় অনুভুতি থেকে। ইতিমধ্যে সেখানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ শহীদ উল্লাহ খন্দকার, ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার রাজেশ কুমার রায়না, জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালসহ প্রশাসনের উদ্ধর্তন কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন।
অনসুসন্ধানে জানা গেছে, সাড়ে ৪‘শ বছরের পুরান সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলায় যশোরেশ্বরী কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা ইতিহাস। ১৫৬০ থেকে ১৫৮০ সাল পর্যন্ত রাজা লক্ষ্মণ সেনের রাজত্বকালে তিনি স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে ঈশ্বরীপুর এলাকায় একটি মন্দির নির্মাণ করেন। মন্দিরটি নির্মাণের পর সেটি বন্ধ রাখারও নির্দেশ দেয়া হয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে মন্দিরটি জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে ওঠে। সে সময় শ্যামনগরের ধুমঘাট ছিল বাংলার ১২ ভূঁইয়ার এক ভূঁইয়া রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজধানী। রাজা প্রতাপাদিত্য এসময় দেখতে পান, ওই জঙ্গল থেকে এক আলোকরশ্মি বেরিয়ে আসছে। তিনি তখন মন্দিরটি খোলার নির্দেশ দেন। মন্দিরটি খুলেই সেখানে দেখা মেলে চন্ডভৈরবের আবক্ষ শিলামূর্তি। তখন থেকে সেখানে পূজা-অর্চনা শুরু হয়।
ইতিহাসের তথ্য মতে, দক্ষ রাজার কনিষ্ঠ কন্যার নাম ছিল সতীবালা। তিনি জন্ম থেকে মহাদেবের পূজারিণী ছিলেন। একপর্যায়ে তিনি স্বেচ্ছায় মহাদেবকে বিবাহ করেন। এতে দক্ষ রাজার ঘোর আপত্তি ছিল। এক অনুষ্ঠানে দক্ষ রাজার উপস্থিতিতে মহাদেব আসেন। কিন্তু মহাদেব রাজাকে তার শ্বশুর বলে পরিচয় দেননি। এতে তিনি চরম অপমানবোধ করেন। পরে শুরু করেন দক্ষযজ্ঞ। এতে সতীবালা ও মহাদেব নিমন্ত্রিত ছিলেন না। এতে অপমান বোধ করেন সতীবালা। কিছুক্ষণ পরেই সতীবালা দেহত্যাগ করেন।
এ খবর পেয়ে কৈলাস থেকে দ্রুতবেগে নেমে আসেন মহাদেব। তিনি দক্ষ রাজার মুণ্ডু কর্তন করে বলির জন্য নিয়ে আসা ছাগলের মুণ্ডু কেটে সেখানে বসিয়ে দিয়ে দক্ষযজ্ঞ লণ্ডভণ্ড করে দেন। পরে তিনি মৃত স্ত্রী সতীবালাকে কাঁধে নিয়ে কৈলাস পাহাড়ে চলে গিয়ে ক্ষোভে ও দুঃখে ব্রহ্মান্ড ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেন। এ খবর পেয়ে ব্রহ্ম ও নারায়ণ সিদ্ধান্ত নিলেন মহাদেবকে ঠান্ডা করতে হলে তার কাছ থেকে সতীবালার মৃতদেহ সরিয়ে নিতে হবে। সে অনুযায়ী ত্রিশূল দিয়ে সতীবালাকে ৫১ খণ্ড করে ত্রিশূলে ঘোরানো হয়। এর একখণ্ড এসে পড়ে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামে। সেখানেই প্রতিষ্ঠিত হয় যশোরেশ্বরী কালীমন্দির। অপর খণ্ডগুলো পশ্চিমবঙ্গের কালীঘাট, আফগানিস্তান, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল।
শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরের পুরোহিত দিলীপ মুখার্জী জানান, প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এ মন্দিরে পূজা অর্চনা অনুষ্ঠিত হয়। এদু’দিন পূজা উপলক্ষে শত শত ভক্তের সমাগম ঘটে এখানে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও শনিবার আসছেন।
সাতক্ষীরা জেলা মতুয়া সম্প্রদায়ের সভাপতি কৃষ্ণান্দ মুখার্জী জানান, নরেন্দ্র মোদির আগমনকে সামনে রেখে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরাজ উৎসবের আমেজ।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নরেন্দ্র মোদির নিরাপত্তার বিষয়টি এসএসএফ এর তত্ত্বাবধানে মুলত পরিচালিত হচ্ছে। পুলিশের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি মহিদ উদ্দীন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তার সার্বিক নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। গত ১মার্চ থেকে মন্দিরসহ আশপাশের এলাকায় পুলিশী নিরাপত্তা বেস্টনীর আওতায় আনা হয়েছে। চেকপোস্ট তৈরী করে সাধারনের চলাচলের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। স্থানীয় হোটেল, ছাত্রাবাসসহ বিভিন্ন স্থানে গোয়েন্দা নজরদারীর আওতায় আনা হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্বিঘ্ন করতে সকল বিভাগের সাথে সমন্বয় করে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালায় ও বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা কয়েক দফা শ্যামনগর পরিদর্শন করেছেন। যেহেতু এটি রাষ্ট্রিয় সফর তার মর্যদা অক্ষুন্ন রাখতে কোনো কিছুই কমতি রাখা হবেনা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সামনে বাংলাদেশ তথা সাতক্ষীরার ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরতে জেলা প্রশাসন দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। রাস্তাঘাট, হেলিপ্যাড নির্মানসহ সব ধরনের কাজ দ্রুত শেষ করা হচ্ছে। তার সফরের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা সজাগ থাকবে।

দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *