April 25, 2024
জাতীয়লেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

তেল চিনি আটা কোথাও আছে কোথাও নেই

বাজারে কোনো পণ্যেই স্বস্তি মিলছে না। হু হু করে বাড়ছে দাম। কোথাওবা আছে পণ্য সংকট। মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য নিয়ে। দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতির মধ্যে সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষের ঘোষণা আসার পর বাজারে পণ্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ অবস্থায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে সীমিত আয়ের মানুষের। সবচেয়ে বেশি নাজেহাল নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্তরা।

শুক্রবার (১১ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে রাজধানীর একাধিক বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে প্রধান প্রধান প্রায় সবধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। এরমধ্যে আবার বাড়তি দামেও মিলছে না কোনো কোনো পণ্য। সেগুলো কোথাও আছে, কোথাও নেই। এ তালিকায় রয়েছে চিনি, সয়াবিন তেল, আটা ও ময়দা। পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানগুলোতেও দেখা গেছে একই চিত্র।

দেখা যায়, ক্রেতারা কোনো একটি দোকানে আটা-ময়দা পেলেও হয়তো চিনি পাচ্ছেন না। আবার কোথাও গিয়ে চিনি মিললেও সেখানে নেই সয়াবিন তেল কিংবা আটা। আবার কোথাও এসব পণ্যের মোড়কজাত দু-একটি প্যাকেট থাকলেও নেই খোলা পণ্য। এ কারণে কাঙ্ক্ষিত পণ্য পেতে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ছুটতে হচ্ছে ক্রেতাদের। কেউ আবার বাধ্য হয়ে বেশি দামে পণ্য কিনছেন।

রামপুরা কাঁচা বাজারের গলিতে ছয়টি মুদি দোকান রয়েছে। এরমধ্যে দু-একটি দোকান বাদে অধিকাংশ দোকানেই কোনো না কোনো পণ্য নেই। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি সংকট সয়াবিন তেলের। মাত্র একটি দোকানে ভোজ্যতেল পাওয়া গেলেও সেখানে বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে। নেই খোলা কোনো সয়াবিন বা পাম তেল।

সেখানের মুদি দোকানি এজাজ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, কয়েকদিন থেকে কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা আসছেন না। মাঝেমধ্যে এলেও কাঙ্ক্ষিত পণ্য দিতে পারছেন না। বিশেষ করে তেল দেওয়া প্রায় বন্ধ রেখেছে কোম্পানিগুলো। যাদের কাছে আগের কেনা তেল রয়েছে, তারা কিছু কিছু করে বিক্রি করছেন এখন।

তিনি বলেন, রেগুলার কাস্টমারদের কাছে তেল বিক্রি করছি। পাইকারি অথবা একজন ক্রেতার কাছে বেশি পণ্য বিক্রি বন্ধ এখন।

বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, একেক দোকানে একেক দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। কোথাও রূপচাঁদার ২ লিটারের তেলের বোতল ৩৬০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে, আবার কোথাও একই তেল ৩৮৪ টাকা। একই পরিমাণ তেল বসুন্ধরা ব্র্যান্ডের দাম ৪১০ টাকাও বিক্রি হতে দেখা গেছে। তীর ব্র্যান্ডের এক লিটার বোতলজাত তেল ১৭৮ টাকা আবার কোথাও একই তেল ১৯২ টাকাও লেখা বোতলের গায়ে।

বিক্রেতারা বলছেন, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে তিন দফা তেলের দাম বেড়েছে। ভিন্ন ভিন্ন সময়ের তেলগুলো ভিন্ন ভিন্ন রেটের। একেক দোকান একেক দামে এসব তেল কেনায় বিক্রিও করতে হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন দামে। এটিই দামে তারতম্যের কারণ।

 

রাজধানীর তালতলা বাজারে এসবি স্টোরের শিমুল নামের এক বিক্রেতা বলেন, সর্বশেষ ২০৫ টাকা লিটার দরে তেলও বাজারে এসেছে। দাম আরও বাড়বে বলে কোম্পানিগুলো জানিয়েছে। সে কারণে তেলের বাজারে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে তারা।

বাজারে আসা স্কুলশিক্ষক শামসুদ্দিন জোহা জাগো নিউজকে বলেন, তেল, চিনি ও আটা-ময়দা যেসব পণ্যের সংকট রয়েছে, সেগুলোর বাজার কয়েকটি কোম্পানির দখলে। তারা বিশ্ববাজার এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে অজুহাত করে বাজারে সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। স্থানীয় বাজারে পণ্যের দাম যেভাবে বাড়ানো হয়েছে বিশ্ববাজারে তা ততটা বাড়েনি।

তিনি বলেন, এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে সরকার কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না বলেই তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। এ পরিস্থিতিতে ভোক্তারা একদম নাজেহাল।

মালিবাগ বাজারে নোয়াখালী স্টোরের মালিক এনামুল হক বলেন, ১৬ বছরের ব্যবসায়িক জীবনে পণ্যের এমন সংকট কখনো দেখিনি। সরকার যখন থেকে দুর্ভিক্ষের কথা বলেছে তখন থেকে বাজারে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। পণ্য সরবরাহ ঠিকমত না দিয়ে বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে জিম্মি করে রেখেছে কিছু কোম্পানি। প্রকৃতপক্ষে পরিস্থিতি কী, সেটা জানার উপায় তো আর আমাদের নেই।

এদিকে খুচরা বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। তিনদিন আগেও এ চিনির দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা কম ছিল। আর প্রতি কেজি খোলা আটা ৬৫ টাকার নিচে মিলছে না। যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।

 

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর তথ্য মতে, গত এক বছরের ব্যবধানে বাজারে আটার দাম ৭৯ দশমিক ১০ শতাংশ বেড়েছে। মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ।

শুধু আটা নয়, একইভাবে ময়দার দামও বেড়েছে বাজারে। খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে। টিসিবি বলছে, বছরের ব্যবধানে ময়দার দাম ৭০ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেড়েছে। মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১৬ শতাংশ।

দোকানিরা বলছেন, প্যাকেটজাত আটার সরবরাহ কিছুটা কম। এক সপ্তাহ আগে খুচরা ব্যবসায়ীরা ডিলারদের কাছ থেকে যেসব আটা ও ময়দা সংগ্রহ করেছেন, সেগুলোই বিক্রি করছেন দোকানিরা। অন্যদিকে পাইকারি বাজারে খোলা আটা-ময়দার চড়া দামের কারণে অনেকে রাখছেন না।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া ডিমের ডজন ১৪০-১৪৫ টাকা। এ দুই পণ্য আটকে আছে বাড়তি দামে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *