April 20, 2024
আঞ্চলিককরোনালেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

খুলনায় হাসপাতালে বাড়ছে করোনা রোগীর চাপ, আরও ১১৫ শয্যা বৃদ্ধি

* শনিবার থেকে আবু নাসের হাসপাতালে ৪৫ শয্যায় করোনা রোগী ভর্তি

দ. প্রতিবেদক
খুলনায় করোনা রোগীদের বাড়তি চাপ সামলাতে আরও ১১৪ শয্যা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে নতুন করে নগরীর শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ৪৫ শয্যার করোনার নতুন ইউনিট চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালিত ১৩০ শয্যার ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল ২০০ শয্যায় উন্নীত করা হচ্ছে। এখানেও বাড়ছে ৭০ শয্যা। সবমিলিয়ে খুলনার দু’টি হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য বাড়ছে আরও ১১৫ শয্যা। শনিবার থেকে শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে তৃতীয় এ করোনা ইউনিটটি চালু হচ্ছে। এমনটাই জানিয়েছেন স্বাস্থ্যবিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খুলনা অঞ্চলে সংক্রমণ ঊর্দ্ধমুখী হওয়ায় করোনা হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে। করোনা হাসপাতালে ধারণক্ষমতার বাইরে রোগী ভর্তি হচ্ছে। ফলে শয্যা সংকট দেখা দিয়েছে। রোগীর চাপ সামলাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও খুলনা জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিট চালু করা হয়েছে। তবুও রোগীর সংখ্যা বেশিই থাকছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত ২৯ জুনের এক পত্রের আলোকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালুর নির্দেশ দেয়া হয়। ওই নির্দেশের আলোকে বুধবার সকালে হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে সকল বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা: এস এম মোর্শেদ সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই হাসপাতালের উত্তর পাশের জরুরি বিভাগ সংলগ্ন প্লাস্টিক এন্ড বার্ন ইউনিটের ২০টি এবং ফিজিক্যাল মেডিসিন এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগে ১৫টি বেড স্থাপন কার্যক্রম শুরু হয়। ওই ৩৫টি বেড ছাড়াও চতুর্থ তলার আইসিইউ বিভাগের ১০টি বেডও করোনার রোগীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়। তবে সেখানে বৃহস্পতিবার দু’জন রোগী থাকায় একজনের অবস্থা ভালো থাকায় তাকে নিউরোলজী বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। অপর রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন থাকায় তাকে নিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। তবে যদি তিনি অন্য কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে না যেতে পারেন সে ক্ষেত্রে তার আত্মীয়-স্বজন চাইলে করোনা রোগীদের পাশাপাশি তাকেও সেখানে রাখা যেতে পারে বলেও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানিয়েছেন।
ওই রোগী সম্পর্কে অপর একটি সূত্র জানায়, আবু নাসের হাসপাতালে নেয়ার আগে তাকে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছিল। তিনি একজন চিকিৎসকের চাচা এবং সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মালিক পক্ষীয় একজনের বন্ধু। কিন্তু খরচ বাঁচাতে তাকে সিটি মেডিকেল থেকে সম্প্রতি আবু নাসেরের আইসিইউতে নেয়া হয়। অথচ সেখানেও এখন করোনা রোগী ভর্তি করার ফলে অন্য রোগীদের রাখা যাচ্ছে না।
আবু নাসের হাসপাতালের করোনা ইউনিটের প্রস্তুতি সম্পর্কে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা: এস এম মোর্শেদ জানান, শনিবার থেকেই করোনা পজেটিভ রোগীদেরই শুধু এখানে ভর্তি করা হবে। যেহেতু আগে থেকেই প্রতিটি বেডের সাথে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন টানা ছিল সেহেতু এখন সেখানে শুধুমাত্র বেডগুলো বসিয়েই রোগী রাখার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আইসিইউ’র ১০টিসহ মোট ৪৫টি বেডে রোগী ভর্তি করা হবে।
আপাতত যে জনবল আছে তা দিয়েই যাত্রা শুরু হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে আরও কিছু জনবল চেয়ে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পত্র দেয়া হয়েছে। নতুন প্রস্তাবনায় ২০জন ডাক্তার, ৫০জন নার্স এবং ৫০জন আউটসোর্সিং কর্মচারী চাওয়া হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী এ জনবল না দেয়া হলে করোনা ইউনিট চালিয়ে রাখা অসম্ভব হতে পারে বলেও তিনি আশংকা করেন।
হাসপাতালের অপর একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে সেখানে কার্ডিওলজি, নেফ্রোলজিসহ অন্যান্য বিভাগে ১৩০ জনের মতো রোগী ভর্তি আছেন। তবে এর মধ্যে কারও আইসিইউর প্রয়োজন হলে তাকে ওই হাসপাতালে স্থান দেয়া সম্ভব হবে না।
এ ক্ষেত্রে খুলনায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে আর কোন রোগীকে আইসিইউ সাপোর্ট দেয়া সম্ভব হবে না উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মুমূর্ষু রোগীদের জন্য একমাত্র খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পোষ্ট অপারেটিভের মধ্যে থাকা চারটি আইসিইউ বেড ছাড়া খুলনায় আর কোন সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ সেবা থাকলো না। অর্থাৎ এখন থেকে আবারো বেসরকারি হাসপাতালের গলাকাটা মূল্যে মুমূর্ষু রোগীদের রাখতে বাধ্য হতে হবে। কিন্তু যাদের সে সঙ্গতি নেই তাদের জন্য সেবার দুয়ার অনেকটা বন্ধের পথে।
শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) এবং করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা: প্রকাশ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, শনিবার থেকে যাতে করোনা রোগী ভর্তি করা যায় সেজন্য চেষ্টা চলছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শুক্রবারের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করে সংশ্লিষ্টদের হাসপাতালে থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। যেটুকু কাজ বাকী রয়েছে তা আজকের মধ্যে শেষ হবে বলেও তিনি আশা করছেন।
করোনা ইউনিটে শুধুমাত্র পজেটিভ হয়েছে এমন রোগীদের ভর্তি করা হবে। এজন্য ইউনিটটি সম্পূর্ণ আলাদা থাকবে। নিচ তলা থেকে রোগীদের চতুর্থ তলার আইসিইউতে নেয়ার জন্যও ব্যবহার করা হবে পৃথক লিফট।
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) খুলনার সাধারণ সম্পাদক ডা: মো: মেহেদী নেওয়াজ বলেন, গতকাল তিনি শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালটি পরিদর্শন করেছেন। করোনা ইউনিটের বিভিন্ন বিষয়ে তিনি খোঁজ খবর নেন। সর্বশেষ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ও অন্যান্যদের সাথে বৈঠক করেন।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় শনিবার থেকে শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ শয্যাসহ মোট ৪৫ শয্যা বাড়ানো হচ্ছে। করোনা হাসপাতালে বৃদ্ধি পাচ্ছে আরও ৭০টি শয্যা। এতে করে রোগীদের আরও ভালোভাবে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *