May 20, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

খাদ্যে ভেজাল বন্ধে মাদকের মত ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ চায় হাই কোর্ট

 

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

খাদ্যনিরাপত্তা প্রশ্নেও মাদকবিরোধী অভিযানের মত ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করে ভেজাল বা নিম্নমানের খাদ্যপণ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে সরকার ও সরকারপ্রধানের প্রতি আহŸান জানিয়েছে হাই কোর্ট। এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল রোববার ভেজাল ও নিম্নমানের খাদ্যপণ্য অপসারণের আদেশ দিতে গিয়ে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ এই আহŸান জানায়।

বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন, সরকার ও সরকার প্রধানের প্রতি আহŸান জানাচ্ছি, তারা যেন খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। প্রয়োজনে খাদ্য নিরাপত্তা প্রশ্নে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন, যেমন মাদকবিরোধী অভিযানের ক্ষেত্রে করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতবছর মে মাসে এক অনুষ্ঠানে জঙ্গি দমনের মত ‘মাদক ব্যবসায়ী’ দমনে ‘বিশেষ অভিযান’ শুরুর কথা জানান। ওই অভিযান সফল করতে সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা নিয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পরে বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণ না হওয়া পর্যন্ত এই ‘যুদ্ধ’ চলবে।

শুরুতে র‌্যাব এই অভিযানে থাকলেও পরে গোয়েন্দা পুলিশ, রেল পুলিশ, থানা পুলিশ এবং বিজিবিকেও মাদকবিরোধী অভিযানে দেখা যায়। এই ‘যুদ্ধের’ অংশ হিসেবে গত এক বছরে প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলেছে। মাদক উদ্ধার, আটক-গ্রেপ্তারের পাশাপাশি কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে সন্দেহভাজন বহু মানুষ।

এবার রোজার আগে বাজারের বিভিন্ন পণ্যের নমুনা পরীক্ষা করে বিএসটিআই ১৮ কোম্পানির ৫২টি পণ্যে নির্ধারিত মান না পাওয়ার কথা জানালে বিষয়টি হাই কোর্টে আনে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনশাস কনজ্যুমার সোসাইটি (সিসিএস)।

তাদের রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে হাই কোর্ট রবিবার যে আদেশ দিয়েছে, সেখানে বিএসটিআইয়ের মান পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ ১৮ কোম্পানির ৪৬টি ব্র্যান্ডের ৫২টি পণ্য বাজার থেকে অপসারণ করে উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

বাজারে থাকা এসব পণ্য দ্রুত অপসারণ করে ধ্বংস করার পাশাপাশি মানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত উৎপাদন বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে এসব নির্দেশ বাস্তবায়ন করে আগামী ১০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। মামলাটি আগামী ২৩ মে পরবর্তী আদেশের জন্য রেখেছে আদালত।

আদালত আদেশে বলেছে, খাদ্য মানের এই পরীক্ষা শুধু রোজার মাসেই হওয়া উচিৎ না। সারা বছরই এ অভিযান থাকা উচিত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা শুধুমাত্র একজন কর্মকর্তা হিসেবে না, একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে জনসাধারণের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে যেন তাদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন। আদালত সেটাই প্রত্যাশা করে।

নির্বাহী বিভাগের দায়িত্ব প্রসঙ্গে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেন,“যদিও এ বিষয়গুলো দেখার দায়িত্ব নির্বাহী বিভাগের। আদালতের এগুলো দেখার বিষয় না। তারপরও জনস্বার্থ বিবেচনায় এ বিষয়গুলো আদালত এড়িয়ে যেতে পারে না।

খাদ্য নিরাপত্তার ব্যপারে আপস বা বরদাস্ত করার কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য প্রত্যেকটা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানর সমন্বিতভাবে কাজ করা উচিত।

খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার আহŸান জানিয়ে বিচারক বলেন, খাদ্যে ভেজাল আর চলতে পারে না। নির্বাহী কর্তৃপক্ষ কোন দিকে অগ্রাধিকার দেবে যদিও তা আদালতের বলে দেওয়ার বিষয় না, তবে খাদ্যে ভেজালের বিষয়টিকে এক নম্বর অগ্রাধিকার দিয়েই কাজে নামা উচিত। পাশাপাশি ঢাকা ওয়াসা যেন সাধারণ মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করে, সে বিষয়েও নজর দিতে বলেছে আদালত।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *