May 20, 2024
জাতীয়

একাদশে ভর্তি শুরু, লাগবে অভিভাবকের এনআইডি নম্বর

 

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

দেশের সব সরকারি-বেসরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল গতকাল রবিবার দুপুরে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড মিলনায়তনে অনলাইনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।

তিনি বলেন, কেউ যেন ‘প্রতারণার’ আশ্রয় নিতে না পারে সেজন্য এবার একাদশের ভর্তি প্রক্রিয়ায় ‘অনেক পরিবর্তন’ আনা হয়েছে। প্রথমবারের মত অভিভাবকের ন্যাশনাল আইডি কার্ডের নম্বর বাধ্যতামূলক করেছি। এরপরও যদি কেউ প্রতারণা করে, তাহলে তাকে দমন করার জন্য আমরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক জানান, পাসের হারের ওপর ভিত্তি করে কলেজগুলোকে এবার তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানে পাসের হার ৭০ শতাংশ, সেগুলোকে ‘এ’ শ্রেণি, ৫০-৭০ শতাংশ পাসের হার প্রতিষ্ঠানকে ‘বি’ শ্রেণি এবং যেসব প্রতিষ্ঠানের পাসের হার ৫০ শতাংশের কম সেগুলোকে ‘সি’ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে।

ফলে একজন শিক্ষার্থী আবেদন করার সময় জানতে পারবে, তার পছন্দের কলেজটি কোন শ্রেণিতে পড়েছে। এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে তার ওই কলেজে ভর্তি হওয়ার সযোগ কতটা, সেই ধারণাও সে পাবে।

ভর্তি অনলাইনে : গত কয়েক বছরের মত এবারও মাধ্যমিকের ফলাফলের ভিত্তিতে একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। আটটি সাধারণ বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ড থেকে ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারবেন।

আর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে উত্তীর্ণরা একাদশে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভর্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়স হবে ২২ বছর। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে অনলাইনে (িি.িীরপষধংংধফসরংংরড়হ.মড়া.নফ) শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হবে। পাশাপাশি টেলিটক মোবাইল থেকে এসএমএস করে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করা যাবে।

সময় সূচি : ভর্তির আবেদন করা যাবে আগামী ২৩ মে পর্যন্ত। যারা এসএসসির ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করেছেন, তাদেরকেও ওই সময়ের মধ্যে আবেদন করতে হবে।

২৪ থেকে ২৬ মের মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবেদন যাচাই-বাছাই ও আপত্তি নিষ্পত্তি করা হবে। পুনঃনিরীক্ষণে যাদের ফল পরিবর্তন হবে তারা ৩ থেকে ৪ জুন পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন। পছন্দক্রম পরিবর্তন করা যাবে ৫ জুন থেকে।

১০ জুন প্রথম পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হবে। প্রথম তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীদের ১১ থেকে ১৮ জুনের মধ্যে এসএমএস করে নিশ্চিত করতে হবে, যে কলেজের তালিকায় তার নাম এসেছে, সেই কলেজেই তিনি ভর্তি হবেন।

এরপর ২১ জুন দ্বিতীয় পর্যায়েন এবং ২৫ জুন তৃতীয় পর্যায়ের ফল প্রকাশ করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ের তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীরা ২২-২৩ জুন এবং তৃতীয় পর্যায়ের তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীরা ২৬ জুন কলেজ সিলেকশন নিশ্চিত করবেন। ২৭ থেকে ৩০ জুন শিক্ষার্থী ভর্তি শেষে আগামী ১ জুলাই কলেজগুলোতে একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরুর সময়সূচি ঠিক করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

আবেদনে খরচ কত? : অনলাইনে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন করতে ফি দিতে হবে ১৫০ টাকা। টেলিটক/বিকাশ/শিওরক্যাশ/গ্রামীণফোন-এর মাধ্যমে এই টাকা জমা দিয়ে আবেদন করতে হবে অনলাইনে। আবেদনে একজন শিক্ষার্থী সর্বনিম্ন ৫টি এবং সর্বোচ্চ ১০টি কলেজের পছন্দক্রম ঠিক করে দিতে পারবেন।

এসএমএসের মাধ্যমে আবেদনের ক্ষেত্রে ফি হবে প্রতি কলেজের জন্য ১২০ টাকা। একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে আবেদন করতে পারবেন। এসএমএসে আবেদন করা যাবে কেবল টেলিটক মোবাইল থেকে।

কীভাবে ভর্তি : একজন শিক্ষার্থী যতগুলো কলেজে আবেদন করুক না কেন, এসএসসির ফলাফল এবং পছন্দক্রমের ভিত্তিতে তার ভর্তির জন্য একটি কলেজ নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। কলেজ ভর্তি নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিভাগীয় এবং জেলা সদরের কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কলেজের শতভাগ আসন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। শিক্ষার্থী ভর্তি হবে মেধার ভিত্তিতে।

মেধার ভিত্তিতে ভর্তির পরে যদি বিশেষ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত কোনো আবেদনকারী থাকে তাহলে মোট আসনের অতিরিক্ত ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য, ৩ শতাংশ বিভাগীয় ও জেলা সদরের বাইরের শিক্ষার্থীদের জন্য, ২ শতাংশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্ত দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী এবং স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের সন্তানদের জন্য, ০.৫০ শতাংশ বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য এবং ০.৫০ শতাংশ প্রবাসীদের সন্তানদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। উপযুক্ত কোটায় যদি প্রার্থী পাওয়া ন যায় তবে ওই আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে না।

মেধাক্রম : বিজ্ঞান শাখা থেকে উত্তীর্ণরা যে কোনো বিভাগে ভর্তির আবেদন করতে পারবে। মানবিক শাখা থেকে উত্তীর্ণরা মানবিকের পাশাপাশি ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ভর্তি হতে পারবে। ব্যবসায় শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগে ভর্তি হতে পারবে। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সর্বমোট প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম নির্ধারণ করা হবে।

বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে সমান জিপিএ প্রাপ্তদের মেধাক্রম ঠিক করতে সাধারণ গণিত, উচ্চতর গণিত অথবা জীববিজ্ঞানে প্রাপ্ত গ্রেড পয়েন্ট বিবেচনায় আনা হবে। এরপরেও একই নম্বরপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের ভর্তির বিষয়ে সুরাহা না এলে পর্যায়ক্রমে ইংরেজি, পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়নে প্রাপ্ত নম্বর বিবেচনায় আনতে হবে। আর মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে সমান জিপিএ প্রাপ্তদের ভর্তির ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে ইংরেজি, গণিত ও বাংলায় অর্জিত গ্রেড পয়েন্ট বিবেচনা করা হবে। এক বিভাগের প্রার্থী অন্য বিভাগে ভর্তির ক্ষেত্রে মোট গ্রেড পয়েন্ট একই হলে পর্যায়ক্রমে ইংরেজি, গণিত ও বাংলা বিষয়ে অর্জিত গ্রেড পয়েন্ট বিবেচনায় আনতে হবে।

ভর্তি ফি : মফস্বল/পৌর (উপজেলা) এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেশনচার্জসহ সর্বসাকুল্যে এক হাজার টাকা, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় দুই হাজার টাকা এবং ঢাকা ছাড়া অন্য মেট্রোপলিটন এলাকায় তিন হাজার টাকার বেশি ফি নেওয়া যাবে না।

ঢাকা মহানগর এলাকায় এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তিতে পাঁচ হাজার টাকার বেশি নেওয়া যাবে না। ঢাকা মহানগর এলাকায় আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও এমপিও বর্হিভূত শিক্ষকদের বেতনভাতা দেওয়ার জন্য ভর্তির সময় মাসিক বেতন, সেশন চার্জ ও উন্নয়ন ফি বাবদ বাংলা মাধ্যমে নয় হাজার টাকা এবং ইংরেজি মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার।

নীতিমালা অনুযায়ী, উন্নয়ন খাতে কোনো এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান তিন হাজার টাকার বেশি নিতে পারবে না। সরকারি কলেজগুলো পরিপত্র অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ফি সংগ্রহ করবে। দরিদ্র, মেধাবী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ভর্তিতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ফি যতদূর সম্ভব মওকুফ করতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কোনো শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অনুমোদিত ফির বেশি নেওয়া যাবে না উলে­খ করে নীতিমালায় বলা হয়েছে, অনুমোদিত সকল ফি রশিদের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে।

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *