May 6, 2024
খেলাধুলা

ইডেন টেস্টেও পরাজয়ের শঙ্কা মুশফিকের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ

ক্রীড়া ডেস্ক

পরাজয় চোখ রাঙানো বাংলাদেশের সামনে এখন একমাত্র ভরসা মুশফিকুর রহীম। ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের মতো দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংস পরাজয়ের শঙ্কা নিয়ে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে টাইগাররা। তৃতীয় দিনে বাংলাদেশের মান বাঁচাতে পারবেন তো মুশফিক?

বাংলাদেশের এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান আরেকবার নিজেকে প্রমাণ করে বাংলাদেশকে বড় বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছেন। মুশফিকের ৭০ বলে ১০ চারে ৫৯ রানের উপর ভর করে দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ১৫২ রান তুলে দ্বিতীয় দিন পার করেছে সফরকারীরা। এখন পযর্ন্ত বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে ৮৯ রানে। এর আগে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় মাত্র ১০৬ রানে। ব্যাটিংয়ে নেমে দ্বিতীয় দিন ৯ উইকেটে ৩৪৭ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিক ভারত।

দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দলীয় স্কোরে কোনো রান না তুলতেই ইশান্ত শর্মার বলে এলবি হয়ে ফেরেন শাদমান ইসলাম। এই ডানহাতি বোলার নিজের পরের ওভারেই মুমিনুল হককে ডাক উপহার দেন। উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহাকে ক্যাচ দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

পেসারদের স্বর্গভূমি পরিণত হওয়া ইডেন গার্ডেন্সে নিজেদের যেন বিলিয়ে দিলেন মোহাম্মদ মিঠুন ও ইমরুল কায়েস। শুরুতেই দুই উইকেট হারিয়ে বিপর্যস্ত বাংলাদেশের হয়ে তারা অসহায় আত্মসমর্পণ করেন।

তৃতীয় সেশনে ফিরেই দলীয় ষষ্ঠতম ওভারে উমেষ যাদবের বাউন্সি বল অযথা তুলে মারতে গিয়ে শর্টে দাঁড়ানো মোহাম্মদ শামিকে ক্যাচ দেন মিঠুন (৬)। পরের ওভারেই ইশান্ত’র বলে স্লিপে থাকা বিরাট কোহলির তালুবন্দী হন ইমরুল (৫)।

দলের বিপর্যয়ে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে দারুণ পার্টনারশিপ গড়ে ব্যাট করছিলেন মাহমুদউল­াহ রিয়াদ। তবে ১৯তম ওভারে হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়ে ‘রিটায়ার্ড হার্ট’ হয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। মুশফিকের সঙ্গে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৬৯ রান তোলেন মাহমুদউল­াহ। মাঠ ছাড়ার আগে ৪১ বলে ৭টি চারে ৩৯ রান করেছেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তার পরিবর্তে মাঠে নামেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

এই টেস্টে চোট যেন বাংলাদেশকে পেয়ে বসেছে। প্রথম ইনিংসে ইনজুরিতে তো ছিটকেই গিয়েছেন লিটন দাশ ও নাঈম হাসান। আইসিসির কনকাশন নিয়মে তাদের পরিবর্তে দলে সুযোগ পান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম। এবার সর্বশেষ সংযোজন মাহমুদউল­াহ।

মাহমুদউল­াহর পরে ব্যাটিংয়ে আসা মিরাজ ২২ বলে ১৫ করে ইশান্ত’র চতুর্থ শিকারে পরিণত হন। এরপর ব্যক্তিগত ১১ রানে তাইজুল ইসলাম আউট হতেই দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করে বাংলাদেশ।

এর আগে দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। এই সেশনেই কোহলিসহ ৫ উইকেট তুলে নেয় টাইগার বোলাররা। তবে ভারত ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৪৭ করার পর নিজেদের প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে। যেখানে দলটির লিড ২৪১ রান।

টেস্টর দ্বিতীয় দিন ভারতীয় ব্যাটিংয়ের নিচে চাপা পড়তে শুরু করে বাংলাদেশ। প্রথম সেশনে টাইগারদের একমাত্র সাফল্য আজিঙ্কা রাহানের (৫১) উইকেট প্রাপ্তি। তবে দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশি পেসাররা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন।

লাঞ্চ থেকে ফিরেই ৭৭তম ওভারে রবীন্দ্র জাদেজাকে সরাসরি বোল্ড করেন আবু জায়েদ। ৪১ বলে ১২ রান করেন এই ব্যাটসম্যান। পাঁচ ওভার পরেই ব্যাটিংয়ে থিতু হওয়া কোহলিকে সাজঘরে ফেরান এবাদত। তুলে মারতে গিয়ে তাইজুলের হাতে বন্দী হন ভারতীয় দলপতি। ১৯৪ বলে ১৮টি চারে ১৩৬ করেন এই তারকা ব্যাটসম্যান।

কলকাতা টেস্টে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে অবশ্য প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন কোহলি। আজকের এই সেঞ্চুরিতে দারুণ এক কীর্তিতে নাম লিখিয়েছেন তিনি। ইডেনে ক্যারিয়ারের ৮৪তম ম্যাচে নেমে ২৭তম টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন কোহলি। তাতে টপকে গেছেন অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে ১৯ সেঞ্চুরি করা অস্ট্রেলিয়ান গ্রেট রিকি পন্টিংকে। কোহলির আজকের সেঞ্চুরি দলপতি হিসেবে ২০তম। এছাড়া ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে প্রথম গোলাপি বলে সেঞ্চুরি পেলেন তিনি।

৮৬ থেকে ৮৮, পর পর তিন ওভারে ভারতীয় তিন ব্যাটসম্যান বিদায় নেন। ৯ রানে থাকা রবীচন্দ্রন অশ্বিনকে এলবির ফাঁদে ফেলে আউট করেন আল-আমিন হোসেন। আর পরের ওভারে শূন্য রানে থাকা উমেষ আবু-জায়েদের বলে স্লিপে থাকা শাদমানকে ক্যাচ দেন। ৮৮তম ওভারে আল-আমিনের তৃতীয় শিকার হন ইশান্ত শর্মা (০)। তাকেও এলবির ফাঁদে ফেলেন এই ডানহাতি বোলার। ঋদ্ধিমান ১৭ ও শামি ১০ রানে অপরাজিত থাকেন।

বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে আল-আমিন ও এবাদত ৩টি করে উইকেট পান। দুটি উইকেট তুলে নেন আবু-জায়েদ। আর তাইজুল একটি উইকেট দখল করেন।

এর আগে ঐতিহাসিক দিবা-রাত্রির টেস্টের দ্বিতীয় দিন ফিল্ডিংয়ে নামে বাংলাদেশ। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে দুই ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয়টিতে শনিবার (২৩ নভেম্বর) দ্বিতীয় দিনের খেলায় মুখোমুখি ভারত-বাংলাদেশ। এই টেস্টের মধ্যদিয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার গোলাপি বলে খেলতে নেমেছে দু’দল।

শুক্রবার প্রথম দিন টসে জিতে ব্যাটিং ব্যর্থতায় নিজেদের প্রথম ইনিংসে মাত্র ৩০.৩ ওভারে ১০৬ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীরা। জবাবে ৩ উইকেট হারিয়ে দলীয় ১৭৪ রান ও ৬৮ রানের লিডে দিন শেষ করে ভারত।

দিনের খেলায় ভারতীয় পেসারদের তোপে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ইনিংস। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ২৯ রান আসে ওপেনার শাদমান ইসলামের ব্যাট থেকে। আর ২৪ রান করে ইনজুরিতে ছিটকে যাওয়া লিটন দাশ এই ম্যাচেই আর খেলতে পারবেন না।

তার পরিবর্তে আইসিসির কনকাশন নিয়মে খেলার সুযোগ পান মেহেদী হাসান মিরাজ। এই নিয়মে যেহেতু একই মানের ক্রিকেটারকে পরিবর্তন করতে হয়, ফলে মিরাজ শুধুমাত্র ব্যাটিংই করতে পারবেন। ইনজুরির কারণে একই নিয়মে স্পিনার নাঈম হাসানও ম্যাচ থেকে ছিটকে যান। তার পরিবর্তে দলে সুযোগ পেয়েছেন আরেক স্পিনার তাইজুল ইসলাম।

ভারতের বোলিংয়ে প্রথম দিন দাপট দেখানো ইশান্ত শর্মা ৫ উইকেট দখল করেন। এছাড়া উমেষ যাদব ৩টি ও মোহাম্মদ শামি ২টি উইকেট পান।

জবাবে প্রথম দিন ব্যাট করতে নামা ভারতের হয়ে বিরাট কোহলি (৫৯) ও আজিঙ্কা রাহানে (২৩) রানে অপরাপজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। এর আগে ফিফটি করে বিদায় নেন চেতশ্বর পুজারা (৫৫)। বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে এবাদত হোসেন দুটি ও আল-আমিন হোসেন একটি উইকেট পান।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *