May 20, 2024
আঞ্চলিকলেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

সড়ক দুর্ঘটনায় যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যানসহ নিহত ৪

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার নয়াপাড়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম কাজল রয়েছেন। অন্যরা তার নিকটাত্মীয়। আহত হয়েছেন নারীসহ তিনজন।
কাজলকে বহনকারী পাজেরো জিপের সঙ্গে বিপরীতমুখী একটি ট্রাকের সংঘর্ষ হলে হতাহতের এই ঘটনা ঘটে। যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গতকাল সোমবার বিকেলে এই দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা হতাহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠান। খবর পেয়ে মরদেহগুলো যশোরে আনার জন্য কাজলের ভাইসহ নিকটজনরা দুর্ঘটনাস্থলের দিকে রওনা হয়েছেন। রাত যশোর পৌঁছাতে মধ্যরাত হতে পারে বলে তারা জানিয়েছেন।
শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ওসি তৌফিকুল আলম জানান, সোমবার বিকেল তিনটার দিকে সিলেট থেকে ঢাকাগামী একটি পজেরো (ঢাকা মেট্রো ঘ- ১১-২০১৫) নয়াপাড়া এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে পাজেরো গাড়িতে থাকা দুই পুরুষ সেখানেই মারা যান। মাধবপুর ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আহত তিনজনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আরো দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত চারজনের মধ্যে তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জামদিয়া ইউনিয়নের করিমপুর গ্রামের ইউছুপ আলীর ছেলে নাজমুল ইসলাম কাজল, একই গ্রামের আরিফুল ইসলাম, ঢাকার তালতলা এলাকার সুমন মিয়ার মেয়ে আঁখি (২০)। আহত তিনজনের মধ্যে পাজেরো গাড়িতে থাকা মাগরিফাত মিম ওরফে নওরিন নামে একজন ঢাকার তালতলা এলাকার বাসিন্দা।
দুর্ঘটনার পর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে মাধবপুর ফায়ার সার্ভিসের একদল কর্মী ট্রাকের নিচে ঢুকে পড়া পাজেরো গাড়ি কেটে হতাহতদের উদ্ধার করেন।
শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ দুটি তখনই হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠায়। নিহতদের বিস্তারিত পরিচয় জানতে পুলিশ কাজ করছে।
নিহতদের লাশ এবং আহতরা হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে আছেন। নিহতদের ময়নাতদন্তের প্রস্তুতি চলছে। দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখছে হাইওয়ে পুলিশ। নাজমুল ইসলাম কাজল রাজনীতির পাশাপাশি ঠিকাদারি ব্যবসায় যুক্ত। স্বজনরা জানিয়েছেন, ঠিকাদারি কাজ দেখাশুনা করার জন্য তিনি হবিগঞ্জ গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তার ফুফাতো ভাইয়ের আত্মীয়-স্বজনরা। ফেরার পথে দুর্ঘটনায় পড়ে তাদের গাড়িটি।
এদিকে, দুর্ঘটনায় উপজেলা চেয়ারম্যানসহ চারজনের নিহতের খবর সোমবার সন্ধ্যার কিছু আগে বাঘারপাড়া এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় মানুষ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিতে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করতে থাকেন।
নাজমুল ইসলাম কাজল বাঘারপাড়া আওয়ামী লীগের একজন জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। তিনি একসময় উপজেলার জামদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। বিগত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে ভোট করার জন্য তিনি মনোনয়ন সংগ্রহ করেছিলেন। তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তিনি পাননি। ক্ষুব্ধ কাজল স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থীকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি।
স্থানীয়রা বলছেন, চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে তিনি আরো জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। চলমান প্রতিহিংসার রাজনীতি তিনি কখনো চর্চা করেননি। দলমতনির্বিশেষে প্রতিটি লোকই তার কাছে আশ্রয় পেতেন। যেকারণে আওয়ামী বলয়ের বাইরেও তার জনপ্রিয়তা ছিল উল্লেখ করার মতো।
নাজমুল ইসলাম কাজলের শ্বশুর খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মোল্যা জালাল উদ্দিন খুলনা-৪ আসনের (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।

দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *