May 3, 2024
জাতীয়

সোফা কিনতে না পেরে পুলিশ কর্মকর্তার কাণ্ড!

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

যশোরের বাঘারপাড়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে হাবিবুর রহমান (২৩) নামে এক যুবককে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। একটি পুরনো সোফা সেট কেনা নিয়ে মনোমালিন্যের জেরে খাজুরা পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম ৫০ পিস ইয়াবা দিয়ে হাবিবুরকে ফাঁসিয়ে দিয়েছেন বলে ভুক্তভোগীর পরিবারের দাবি। গতকাল রবিবার দুপুরে প্রেস ক্লাব যশোর মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ওই যুবকের বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি অত্যন্ত গরিব ও ফুটপাতের হোটেল ব্যবসায়ী। আর্থিক সমস্যার কারণে কর্মচারী রাখতে না পারায় আমি, আমার ছেলে, স্ত্রী মিলে বাঘারপাড়ার খাজুরা বাজারে একটি ক্ষুদ্র খাবার হোটেল চালাই। কিন্তু গত বুধবার আমার ছেলে হাবিবুর রহমানকে গ্রামের বাড়ি ইন্দ্রা গ্রামে বর্গাজমিতে সেচ দেয়ার জন্য পাঠাই।

এদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে খাজুরা বাজার তেলপাম্পে পৌঁছলে পূর্বশত্র“তার জেরে খাজুরা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই রফিকুল ইসলামের নির্দেশে সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) হযরত আলী আমার ছেলেকে আটক করে। খাজুরা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জের সঙ্গে আমার একটি পুরনো সোফা সেট কেনা নিয়ে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। কয়েক দিন আগে আমার দোকানের পাশের ফার্নিচার ব্যবসায়ী লিটন সোফা সেটটি বিক্রি করার কথা বললে আমি প্রতিবেশী ব্যবসায়ী হওয়ায় কম মূল্যে সেটি কিনে নিই। সেদিন রাতে ক্যাম্প ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম আমাকে ফোন করে ক্যাম্পে যেতে বলে। আমি যেতে না চাইলে সে আমাকে বলে, সোফা সেটটি আমি নিচ্ছি। এ ব্যাপারে কোনো কথা বললে ফল ভালো হবে না।

আমি বিষয়টি আমলে না নেয়ায় তিনি ক্ষোভে আমার নির্দোষ ছেলেকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে বেদম মারপিট করে। এসময় ইনচার্জের মোবাইলে ভিডিও অন করে আমার ছেলের হাতে ৫০ পিচ ইয়াবা দিয়ে সে ব্যবসায়ী ও সেবনকারী হিসেবে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায় করে থানায় নিয়ে যায়। থানায় নিয়েও রাতভর তার ওপর নির্যাতন চালায় পুলিশ।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও দাবি করেছেন, পরদিন সকালে থানায় গেলে বাঘারপাড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জসিম উদ্দীন ও খাজুরা ক্যাম্পের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম থানার বকশী নাছিমার মাধ্যমে আমাকে সিঁড়ির নিচে ডেকে নিয়ে এক লাখ টাকা দিলে আমার ছেলেকে ছেড়ে দেয়া হবে বলে জানায়। আমি গরিব মানুষ। আমার পক্ষে এতো টাকা দেয়া সম্ভব না হওয়ায় আমানুষিক নির্যাতন করে আমার নিরীহ ছেলেকে মিথ্যা মাদক মামলা দিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে। আমার এবং আমার ছেলে সম্পর্কে এলাকার কোনো লোকই খারাপ বলতে পারবে না। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দায়ী পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আটক হাবিবুর রহমানের মা পারুল বেগম ও তার দুই ছেলে মাহবুব, জিসান আহমেদ, মেয়ে ফারিয়া সুলতানা ময়না।

অভিযোগ প্রসঙ্গে বাঘারপাড়ার খাজুরা পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, সোফা কেনার বিষয়ে ওই লোকের সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি। তার সঙ্গে আমার কোনো পরিচয় নেই। হাবিবুরকে হাতেনাতে ইয়াবাসহ পেয়েছিলাম। তার নামে মামলা দিয়ে আদালতে সোপর্দ করেছি। তার পরিবার ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য তদবির করেছিল। কিন্তু মাদকের ব্যাপারে কোনো ছাড় হবে না বলে জানিয়েছিলাম। ছেলেকে ছাড়াতে না পেরে মিথ্যা অভিযোগ করছে তারা।

অভিযোগ প্রসঙ্গে বাঘারপাড়া থানা পুলিশের ওসি জসিম উদ্দিন বলেন, আটক হাবিবুর রহমান ইয়াবা ব্যবসায়ী ও সেবনকারী। খাজুরা ক্যাম্পের ইনচার্জ সাহেব গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে আটক করে মামলা দিয়েছেন। তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ফাঁসানো কিংবা টাকা দাবির অভিযোগ সঠিক নয়।

যশোরের পুলিশ সুপার মঈনুল হক বলেন, ওই যুবকের পরিবারের অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করা হবে। তদন্তে প্রমাণিত হলে দোষীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *