April 18, 2024
আঞ্চলিকলেটেস্ট

সাতক্ষীরায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে

শেখ কামরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরা জেলার সাতটি উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আর এতে ঝরে যাচ্ছে অনেক প্রাইমারী শিক্ষার্থী। জেলায় অনেক ছোট-বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো জুট মিল, ইটের ভাটা, রাইস মিল, ‘স’ মিল ইত্যাদি। বিশেষ করে জুটমিল ও ইটের ভাটায় বেশি সংখ্যক শিশু শ্রমিক ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত।
ইটের ভাটায় শিশু শ্রমিকেরা মাথায় করে ইট বহন করে। আর জুট মিলগুলোতে ইলেকট্রনিক যন্ত্র ও ঝুঁকিপূর্ণ মেশিনে কাজ করে শিশুরা। ওই শিশুদের বয়স ১০-১৪ বছর, তারা আবার নিজ নিজ পৌরসভা ও ইউনিয়ন থেকে নাগরিক সনদপত্র নিয়ে জুট মিলে গেলে মিল কর্তৃপক্ষ কাজে নিয়োগ দিচ্ছে। এসব শিশু শ্রমিকরা প্রাইমারী ও মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থী ছিল। তারা এখন সামান্য অর্থ আয়ের লোভে ভবিষ্যত নষ্ট করছে। এসব শিশুদের অনেকে আবার ধুমপান করে। পলাশপোল, মুনজিতপুর, সুলতানপুর বড় বাজার, ইটাগাছা, ছয়ঘরিয়া, আলিপুর, বাস-র্টামিনাল, মাছখোলা, নারী ও শিশু শ্রমিকরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে বেশি। বিভিন্ন উপজেলার প্রতিটি গ্রাম থেকে ৮-১০জন করে শিশু শ্রমিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে।
জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সৈয়দ আমিনুর রহমান বাবু শিশু শ্রম বন্ধ করে শিশুদেরকে স্কুলমুখী করার দাবি জানিয়ে বলেন, শিশুদের এই বয়সে স্কুলে থাকা প্রয়োজন, শিশুদের যত্নশীল হওয়াও উচিত, প্রায়ই ঝুঁকিপূর্ণ এসব কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে ও শারীরিক-মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অনেক শিশু শ্রমিক।
মিল নেতা আজহারুল ইসলাম জানান, আমাদের মিলে কাজের উপযুক্ত হলে তাকে আমরা কাজে বহাল করবো তাতে আমাদের দোষ কোথায়। নিষিদ্ধ হওয়া সত্বেও শহরে বেড়েই চলছে শিশু শ্রম। এর ফলে প্রতিনিয়তই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। এতে করে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। শিশু শ্রমিক জুবায়ের ও সাকিব জানায়, অভাব অনটন ও সংসার চালানোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন কাজ করতে হয় তাদের। এছাড়া ন্যায্য মজুরি থেকেও বঞ্চিত হতে হচ্ছে।
সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সাতক্ষীরা শহরে সবর্ত্রই শিশু শ্রম বাড়ছে। বিভিন্ন উপজেলার প্রতিটি হাট-বাজারের ওয়ার্কশপ, লেদ মেশিন, হোটেল-রেস্তেরাঁ, শিল্প কারখানায় ও ইটভাটায় কাজ করছে শত শত কোমলমতি শিশু। যে বয়সে তাদের স্কুলে যাওয়ার কথা, সে বয়সেই করতে হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ সব কাজ করতে হচ্ছে তাদের। দিনে ১৪ থেকে ১৬ ঘন্টা পর্যন্ত কাজ করতে হয় এসব শিশুদের।
অনেক শিশু শ্রমিক অভিযোগ করে জানায়, সারাদিন কাজের পরও ন্যায্য মজুরি দেয় না মালিকরা। বরং কাজ করতে দেরি হলেই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়। প্রায়ই ঝুঁকিপূর্ণ এসব কাজ করতে গিয়ে একইভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে অনেক শিশু শ্রমিককে।
শিক্ষাবিদ প্রফেসর আব্দুল হামিদ জানান, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা কম টাকার বিনিময়ে শিশুদের দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন কাজ করাচ্ছেন। শিশু শ্রম বন্ধ করে শিশুদেরকে স্কুলমুখী করার দাবি জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, শিশুদের এই ভাবে কাজে ব্যবহার করা উচিত না, শিশুদের ব্যাপারে যত্নশীল হওয়াও উচিত। এর পবিবর্তন আসার প্রয়োজন বলে দাবি জানান তিনি।
জেলা প্রথমিক শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন জানান, জেলায় ১ লক্ষ ৭৪ হাজার ৩ শত ৪০ জন প্রাথমিক শিক্ষার্থী আছে। অনলাইনের ম্যাধমে সকল শিক্ষার্থীদের সাথে খোজ-খবর নেওয়া হচ্ছে এবং যাদের সাথে অনলাইনে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না তাদের বাসায় শিক্ষকদের পাঠানো হচ্ছে। যারা শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়ছে তাদের তালিকা করা হচ্ছে। করোনা ভাইরাসের কারনে স্কুল বন্ধ থাকায় অনলাইন ক্লাসের ম্যাধ্যমে শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি।
জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, শিশুশ্রম বন্ধের জন্য সরকারে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এ জেলায় শিশুশ্রম বন্ধের জন্য সকলের কাছে আহবান জানাচ্ছি এবং শিশু শ্রম বন্ধের জন্য যেখানে আইন প্রয়োগ প্রয়োজন হবে সেখানে আইন প্রয়োগ করা হবে।

দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *