April 20, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

‘সরকারি হাসপাতালে ডিউটি বাদ দিয়ে অনেকে ব্যবসা নিয়ে বসে থাকে’

সরকারি হাসপাতালের নির্ধারিত ডিউটি বাদ দিয়ে অনেকেই ব্যবসা নিয়ে বসে থাকে। আবার অনেকে হাসপাতালে যায় শুধু হাজিরা দিতে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

নাসিরনগরে ধর্ষণের প্রতিবেদনে অসঙ্গতি নিয়ে চিকিৎসক ও পুলিশের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানিতে হাইকোর্ট এসব কথা বলেন। এর পর সিভিল সার্জন ও এসপিসহ ১২ জনকে সতর্ক করে তাদের ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন আদালত।

এর আগে সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে একটি ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুর আলাদা তিনটি মেডিকেল রিপোর্ট ও একটি ছাড়পত্রে অসামঞ্জস্যতার ব্যাখ্যা দিতে হাইকোর্টে উপস্থিত হন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন, পুলিশ সুপারসহ ১২ কর্মকর্তা। হাইকোর্টে তাদের উপস্থিতিতে এ বিষয়ে শুনানি চলছে।

উপস্থিত ১২ কর্মকর্তা হলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. একরাম উল্লাহ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিছুর রহমান, নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এটিএম আরিফুল হক, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. একরামুল রেজা, ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য ডা. ফাহমিদা আক্তার, ডা. তোফায়েল হক, ডা. ফরিদা ইয়াসমিন এবং নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. সৈয়দ মো. শাহরিয়ার, ডা. তাসনিম তামান্না ও ডা. মো. শফিকুল ইসলাম।

এর আগে গত ১৭ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে শিশু ধর্ষণের ঘটনায় এক আসামির জামিন শুনানিতে ভুক্তভোগী শিশুর তিনটি আলাদা মেডিকেল রিপোর্ট ও একটি ছাড়পত্রে অসামঞ্জস্য ধরা পড়ে। এরপর আদালত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট ১২ জনকে তলব করে আদেশ দেন।

একইসঙ্গে ওই ঘটনায় দুটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেন। এছাড়া রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় এ ঘটনায় নাসিরনগর থানায় দায়ের করা মামলা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু ও তার পরিবারের সদস্যদের কোনোরকম হয়রানি করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন আদালত।

জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে দেওয়া ছাড়পত্রে বলা হয়েছে, ৩ সেপ্টেম্বর শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়। সেখান থেকে দেওয়া আরেক রিপোর্টে বলা হয়, শিশুটির বাহ্যিক কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে সদর হাসপাতালের মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। তাদেরই আরেকটি তথ্য বলছে, জোরপূর্বক যৌন নির্যাতন হয়েছে।

এজাহার ও নথিপত্র পর্যালোচনা করে আদালত বলেছেন, গত ৪ সেপ্টেম্বর ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ৬ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভুক্তভোগী শিশুটি নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। চার সদস্যের চিকিৎসকের মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট অনুযায়ী, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যৌন নির্যাতন হয়েছে, বিষয়টি প্রশ্নবোধক।

নথি সূত্রে জানা যায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর বেলা ৩টায় প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশু (৭) ধর্ষণের শিকার হয়। প্রথমে শিশুটিকে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুটির বাবা গত ১১ সেপ্টেম্বর নাসিরনগর থানায় আরেক শিশুর (১২) বিরুদ্ধে মামলা করেন। এই মামলায় শিশুটি হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করে। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত নভেম্বর মাসে শিশুটিকে আট সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। একই সঙ্গে তদন্তকাজ শেষে এক মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন আদালত।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *