April 18, 2024
জাতীয়

সঞ্চয়পত্র থেকে ৬ মাসেই পুরো বছরের ঋণ

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে যে পরিমাণ অর্থ ধার করার লক্ষ্য ধরেছিল, তার প্রায় পুরোটা নিয়ে ফেলেছে ছয় মাসেই। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ২৫ হাজার কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে।
অথচ এবারের বাজেটে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য ঠিক করেছিল। এ হিসাবে অর্থবছরের অর্ধেক সময়েই সঞ্চয়পত্র থেকে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় সমান অর্থ ধার করে ফেলেছে সরকার।
পুঁজিবাজারের অস্থিরতা আর ব্যাংকে মেয়াদি হিসাবে সুদের হার কম থাকায় গত কয়েক বছর ধরেই সঞ্চয়পত্র সাধারণের কাছে ‘বিনিয়োগের নিরাপদ ক্ষেত্র’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। সা¤প্রতিক সময়ে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার কিছুটা বাড়ানোর পরও সঞ্চয়পত্র বিক্রি খুব একটা কমেনি।
আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধের পর যা অবশিষ্ট থাকে, তাকে বলা হয় নিট বিক্রি। ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা রাষ্ট্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে সুদ দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত বলেন, ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার কিছুটা বাড়িয়েছে। কিন্তু মানুষ ব্যাংকের প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না। নিরাপদ বিনিয়োগ ভেবে সঞ্চয়পত্রই কিনছে।
বিক্রির লাগাম টেনে ধরতে এর আগে ২০১৫ সালের ১০ মে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ হার গড়ে ২ শতাংশ কমানো হয়েছিল। কিন্তু বিক্রি কমেনি। এর পরেও দুই দফা সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু শেষ পর‌্যন্ত কমানো হয়নি।
জায়েদ বখত বলেন, এভাবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়তে থাকলে সরকারের ভবিষ্যৎ ঋণের বোঝা বেড়ে যাবে। সেই বোঝা কমাতেই এর সুদের হার কমানো উচিৎ বলে আমি মনে করি। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ‘ পেনশনার সঞ্চয়পত্র’ এবং মহিলাদের জন্য ‘পরিবার সঞ্চয়পত্র’ ছাড়া অন্য সঞ্চয়পত্রের সুদের হার দ্রুত কমানোর পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য পর‌্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) ২৪ হাজার ৯৯৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে এই বিক্রির পরিমাণ ছিল ২৩ হাজার ৮২৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এ হিসাবে ছয় মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ।
সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি বেড়েছে ২৬ শতাংশের মতো। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রির পরিমাণ ছিল ২হাজার ৬৫১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৩৩১ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *