April 20, 2024
আঞ্চলিককরোনালেটেস্ট

শেখ আবু নাসেরসহ ৩৯ হাসপাতালে অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপনের উদ্যোগ

 

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের একটা অংশ শ্বাসকষ্টে ভোগে। এজন্য কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দিতে হয়। তবে দেশের বেশিরভাগ হাসপাতালে কেন্দ্রীয়ভাবে তরল অক্সিজেন ট্যাংক না থাকায় এসব হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে দেশের ৩৯টি সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তরল অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

কোভিড-১৯ মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় কারিগরী বিশেষজ্ঞ পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, তারা সরকারকে যেসব পরামর্শ দিয়েছেন তার মধ্যে একটি ছিল বিভিন্ন হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা।

তিনি বলেন, কোভিড-১৯ আক্রান্তদের শতকরা ৮০ ভাগই বাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে ভালো হয়ে যায়। বাকি ২০ ভাগের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ ভাগই শ্বাসকষ্টে ভোগে। এ ধরনের রোগীকে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হয়।

যাদের অল্প অক্সিজেন প্রয়োজন তাদেরকে সিলিন্ডার দিয়ে ২ থেকে ৪ লিটার অক্সিজেন দেওয়া যায়। কিন্তু অনেক রোগী আছে, যাদের অনেক হাইপার ফ্লো নেজাল ক্যানোলার সাহায্যে উচ্চচাপে অক্সিজেন দিতে হয়। এতে এত বেশি পরিমাণ অক্সিজেন লাগে যে সিলিন্ডার দিয়ে কুলানো যাবে না। তখনই সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই প্রয়োজন হয়। এটা রোগীকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অক্সিজেন দিতে পারে। এজন্য বড় হাসপাতালগুলোয় যেন জরুরি ভিত্তিতে লিকুইড অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসায় সে সুপারিশ করেছিলাম আমরা, বলেন বিএসএমএমইউর এই অধ্যাপক।

রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থার মাধ্যমে ৯৫টি বেডে অক্সিজেন দেওয়া যায়। তবে ৫০০ শয্যার এই হাসপাতাল কোভিড-১৯ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে পুরো হাসপাতালে এ ব্যবস্থা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির উপ-পরিচালক মো. আবুল হাসেম শেখ। তিনি বলেন, এই মুহুর্তে সবগুলো ওয়ার্ডে নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ প্রয়োজন। তাহলে সঙ্কট কেটে যাবে।

আমাদের এখানে উচ্চগতিতে অক্সিজেন দিতে হয় কিছু রোগীকে। সিলিন্ডারের অক্সিজেন সর্বোচ্চ ১০ লিটার পর্যন্ত দেওয়া যাবে প্রতি মিনিটে। আমাদের এখানে দুটি হাইপার ফ্লো নেজাল ক্যানোলা মেশিন এনেছি। এটা দিয়ে অক্সিজেন দিতে পারলে অনেক রোগীকে আইসিইউতে নেওয়া লাগে না। আর এই পরিমাণ অক্সিজেন দিতে হলে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই দরকার।

ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. মামুন মোর্শেদ জানান, ওই হাসপাতালের আইসিইউ এবং অপারেশন থিয়েটারে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালু আছে। তবে হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে আসা রোগীদের সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার দুটি ওয়ার্ডে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালুর কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ওয়ার্ডে অক্সিজেন সরবরাহের পাইপ বসানোসহ আনুষঙ্গিক কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি, সপ্তাহখানেকের মধ্যে কাজটি শেষ হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান খান বলেন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা ছিল না। সিলিন্ডার দিয়েই সরবরাহ করা হত।

এমন হতে পারে, এত পরিমাণ অক্সিজেন কখনো লাগতে পারে, সেটা আমরা কেউই ভাবিনি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন আমরা বুঝতে পারছি যে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা আসলেই দরকার। ভবিষ্যতে যদি আবার কখনও এমন পরিস্থিতি আসে তাহলে যেন সমস্যায় পড়তে না হয়।

৩৯টি হাসপাতালে লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপনের জন্য ন্যাশন্যাল ইলেকট্রো-মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারে ২ জুন চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, সরকারি হাসপাতালগুলোয় মেডিকেল গ্যাস পাইপলাইন সিস্টেম থাকলেও অধিকাংশ হাসপাতালে লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক নেই। ফলে কভিড-১৯ রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে এখনো যেসব হাসপাতালে লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপন করা হয়নি, সেগুলোয় জরুরি ভিত্তিতে লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক স্থাপনের প্রয়োজনে গ্যাস সিস্টেম লাইন স¤প্রসারণের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হল।

কতদিনের মধ্যে এসব হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হবে- জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর বলেন, আমাদের ঠিক ধারণা নেই এই ধরনের অবকাঠামো তৈরি করতে কতদিন লাগে। আমরা চাচ্ছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজটা শেষ করতে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ছাড়াও বিশেষায়িত পাঁচটি হাসপাতালের নাম রয়েছে।

বিশেষায়িত পাঁচ হাসপাতালের মধ্যে খুলনার শেখ আবু নাসের স্পেশালাইজড হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে এই ব্যবস্থা নেই বলে সেখানে বসাতে বলা হয়েছে।

মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলো হল- ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল শের-ই- বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কিশোরগঞ্জের সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কুয়েত মৈত্রী ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল।

আড়াইশো শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালগুলোর মধ্যে সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, কক্সবাজার জেলা হাসপাতাল, গোপালগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, মুন্সীগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, জামালপুর জেলা হাসপাতাল, হবিগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, শেরপুর জেলা হাসপাতাল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, সুনামগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, নীলফামারী জেলা হাসপাতাল, বাগেরহাট জেলা হাসপাতাল, বরগুনা জেলা হাসপাতাল, চুয়াডাঙ্গা জেলা হাসপাতাল, ভোলা জেলা হাসপাতাল ও মাগুরা জেলা হাসপাতাল।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *