April 30, 2024
করোনাজাতীয়লেটেস্ট

যখন যেখানে প্রয়োজন সেখানে ‘রেড জোন’ ঘোষণা

‘রেড জোন’ ঘোষণা বা ‘রেড জোন’ পরিবর্তন একটি চলমান প্রক্রিয়া জানিয়ে সরকার বলছে, স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই যখন যেখানে প্রয়োজন তখন ‘রেড জোন’ ঘোষণা করা হবে।

এ নিয়ে মঙ্গলবার (১৬ জুন) সরকারি তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, নাগরিক সাধারণের জীবন-জীবিকা নির্বাহের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার সারাদেশে ঘোষিত ৬৬ দিন সাধারণ ছুটির পর গত ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালু করা হয়।

কিন্তু সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পরিমাণ হার বাড়ছে। এমতাবস্থায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ (২০১৮ সালের ৬১ নং আইন)-এর সংশ্লিষ্ট ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকারের অনুমোদনক্রমে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় কোভিড-১৯ রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ১০ জুন কতিপয় নির্দেশাবলী জারি করেন।

এই নির্দেশাবলীর উদ্দেশ্য কোভিড-১৯ রোগের চলমান ঝুঁকি বিচেনায় বাংলাদেশের যে কোনো ছোট বা বড় এলাকাকে লাল, হলুদ বা সবুজ জোন হিসেবে চিহ্নিত করা এবং তা বাস্তবায়ন করা।

জোন ঘোষণার ক্ষমতা আইনানুযায়ী, সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জনের কাছে অর্পণ করা হয় এবং বলা হয় তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সিভিল প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা ও সশস্ত্র বাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় জোনিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবেন। জোন সুনির্দিষ্টভাবে সংশ্লিষ্ট এলাকার কোন অংশে কার্যকর হবে এবং এর পরিধি কী হবে তা স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে ও কোভিড-১৯ সংক্রান্ত স্থানীয় কমিটিগুলোকে নির্ধারণ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত কৌশল বা গাইড তৈরি করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলোর মধ্যে বিতরণ করেছে। এটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েব সাইটে (www.dghs.gov.bd) পাওয়া যাবে।

তথ্য বিবরণীতে বলা হয়, জোনের সংজ্ঞা ও বাস্তবায়ন কৌশল সময়ে সময়ে পর্যালোচনা করে পরামর্শ দেওয়ার জন্য একটি কেন্দ্রীয় কারিগরি গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জোনিং সিস্টেমের হালনাগাদ সংজ্ঞা ও বাস্তবায়ন কৌশল অনুযায়ী অব্যাহতভাবে স্থানীয় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবে এবং জোনিং সিস্টেম চালু করতে হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতামত সাপেক্ষে তা বাস্তবায়ন করবে।

এতে আরো বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শক্রমে প্রাথমিকভাবে ৩টি জেলায় (গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী) এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রাজাবাজার (পূর্ব রাজাবাজার) এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ারীতে পরীক্ষামূলকভাবে জোনিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে। ঢাকার ওয়ারীতে জোনিং সিস্টেম চালুর জন্য সুনির্দিষ্ট এলাকা চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। এই পরীক্ষামূলক জোনিং সিস্টেমের অভিজ্ঞতা দেশের অন্য এলাকায় জোনিং সিস্টেম চালু বা পরিবর্তনের বিষয়ে সহায়ক হবে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও সিটি করপোরেশনও বর্ণিত কৌশল ও গাইড অনুসারে স্থানীয় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে। তদনুযায়ী তারা প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নপূর্বক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতামত অনুযায়ী জোনিং সিস্টেম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে।

‘কেন্দ্রীয় কারিগরি গ্রুপও অব্যাহতভাবে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে এলাকাভিত্তিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে এবং অধিকতর বাস্তবমুখী সংজ্ঞা ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নির্ধারণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তদনুযায়ী ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংজ্ঞানুযায়ী যেখানে যখন প্রয়োজন তখন রেড জোন ঘোষণা করা হবে। কাজেই রেড জোন ঘোষণা বা রেড জোন পরিবর্তন একটি চলমান প্রক্রিয়া। স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই যখন প্রয়োজন তা করা হবে এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন করবে। এ বিষয়ে সবার বিভ্রান্তি নিরসন হওয়া প্রয়োজন।’

প্রাথমিকভাবে রেড জোনের জন্য বিধিনিষেধ:
১. স্বাস্থ্যবিধি মেনে বর্ধিত সময়ে কৃষিকাজ কাজ করা যাবে।
২. স্বাস্থ্যবিধি মেনে গ্রামাঞ্চলে কলকারখানা ও কৃষিপণ্য উৎপাদন কারখানায় কাজ করা যাবে। তবে শহরাঞ্চলে সব বন্ধ থাকবে।
৩. বাসা থেকেই অফিসের কাজ করতে হবে।
৪. কোন ধরনের জনসমাবেশ করা যাবে না। কেবল অসুস্থ ব্যক্তি হাসপাতালে যেতে পারবেন।
৫. স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধু প্রয়োজনে বাসা থেকে বের হতে পারবেন। রিকশাভ্যান, সিএনজি অকেটারিকশা, ট্যাক্সি বা নিজস্ব গাড়ি চলাচল করবে না।
৬. সড়কপথ, নদীপথ ও রেলপথে জোনের ভিতরে কোন যান চলাচল করবে না।
৭. জোনের ভিতরে ও বাইরে মালবাহী নৌযান ও জাহাজ কেবল রাতে চলাচল করতে পারবে।
৮. প্রত্যেক এলাকায় সীমিত পরিমাণে প্রবেশ ও বহিরাগমন পয়েন্ট নির্ধারণ করে কঠোরভাবে জনগণের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
৯. এই জোনের অন্তর্গত মুদি দোকান ও ওষুধের দোকান খোলা থাকবে। রেস্টুরেন্ট ও খাবার দোকানে কেবল হোম ডেলিভারি সার্ভিস চালু থাকবে। বাজারে শুধু প্রয়োজনে যাওয়া যাবে। তবে শপিংমল, সিনেমা হল, জিম/স্পোর্টস কমপ্লেক্স, বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
১০. আর্থিক লেনদেন বিষয়ক কার্যক্রম যেমন টাকা জমাদান/উত্তোলন স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেবল এটিএম-এর মাধ্যমে করা যাবে। তবে সীমিত ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে।
১১. এলাকার রোগীদের পর্যাপ্ত কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা করা হবে। শনাক্ত রোগীরা হোম আইসোলেশন বা প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে থাকবে।
১২. শুধু মসজিদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মসজিদ/উপাসনালয়ে সামাজিক দূরত্ব রেখে ইবাদত করতে পারবেন।
১৩. সাধারণভাবে রেড জোন ২১ দিনের জন্য বলবৎ হবে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে রেড জোন পরিবর্তন করা হবে।

রেড জোনসহ দেশের সব অঞ্চলে সাধারণ নিয়মাবলী:
১. সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে হবে। হাত ধোয়া, জীবানুমুক্তকরণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
২. করোনা রোগ/ সংক্রমণ শনাক্তকরণ, তাদের আইসোলেশন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং ও কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।
৪. স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, হাসপাতাল ও জরুরি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে। অসুস্থ ব্যক্তি পরিবহনকারী যান/ ব্যক্তিগত গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে চলাচল করবে।
৫. সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান- স্কুল, কলেজ, কোচিং সেন্টার পরবর্তি নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
৬. এসব কার্যক্রমের তদারকির জন্য কার্যকরী সামাজিক সম্পৃক্ততা এবং মাঠকর্মীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

এছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ১৫ জুন জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুসরণ করতে হবে। রেড জোন বাস্তবায়নকালে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সবার প্রযোজনীয় নাগরিক সেবাসহ অন্য সুবিধা-অসুবিধার দিকে খেয়াল রাখবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *