April 19, 2024
আন্তর্জাতিক

ম্যাক্রোঁর মানসিক চিকিৎসা দরকার : এরদোয়ান

ইসলাম ধর্ম ও মুসলিমদের প্রতি ফরাসী প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর আচরণের সমালোচনা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। এক বিবৃতিতে এরদোয়ান বলেছেন, ম্যাক্রোঁর মানসিক চিকিৎসা করা দরকার।

সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের সুরক্ষা নিশ্চিত এবং কট্টরপন্থী ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন ম্যাক্রোঁ। এদিকে, ম্যাক্রোঁকে উদ্দেশ্য করে বিরুপ মন্তব্য করায় ফ্রান্সে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়েছে।

সম্প্রতি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর কার্টুন প্রদর্শনের কারণে দেশটির এক শিক্ষককে চেচেন বংশোদ্ভূত এক কিশোর শিরশ্ছেদ করে হত্যা করে। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশটিতে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটি তার ক্লাসে শিক্ষার্থীদের হযরত মোহাম্মদের (সা.) কার্টুন দেখিয়েছিলেন। ওই ঘটনার পর ইসলামিক বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ম্যাক্রোঁ।

তিনি বলেন, এই বিচ্ছিন্নতাবাদ ফ্রান্সের মুসলমান সম্প্রদায়গুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। ফ্রান্সের সরকারি ভবনে মহানবীকে (সা.) ব্যঙ্গ করে চিত্র প্রদর্শন বন্ধ হবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তার এমন মনোভাবের তীব্র সমালোচনা করেছেন এরদোয়ান।

মহানবীর ছবি বা প্রতিকৃতি তৈরি করা মুসলিমদের ধর্মানুভূতিতে গুরুতর আঘাত দেওয়ার শামিল। কারণ ইসলামের কোনো নবী বা আল্লাহকে চিত্রিত করা ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ।

কিন্তু ফরাসী জাতীয়তাবাদের সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণাটি। রাষ্ট্রের বক্তব্য, কোনো একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের অনুভূতির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বাক স্বাধীনতা খর্ব করা জাতীয় ঐক্য ক্ষুণ্ণ করে।

ফরাসী জাতীয়তাবাদী চেতনা রক্ষার উদ্দেশ্যে শিক্ষক হত্যার আগে থেকেই শুরু হওয়া ম্যাক্রোঁর এ ধরণের প্রচারণার প্রতিক্রিয়ায় শনিবার এক ভাষণে এরদোয়ান বলেন, ম্যাক্রোঁর মানসিক চিকিৎসা প্রয়োজন।

এরদোয়ান বলেন, একজন রাষ্ট্রপ্রধানকে এর চেয়ে বেশি কী বলা যায়, যিনি বিশ্বাসের স্বাধীনতার বিষয়টি বোঝেন না এবং তার দেশে বসবাসরত ভিন্ন বিশ্বাসের লাখ লাখ মানুষের সাথে এমন ব্যবহার করেন?

ম্যাক্রোঁ নামের এই মানুষটার ইসলাম এবং মুসলিমদের নিয়ে সমস্যাটা কোথায়? এমন প্রশ্নও করেছেন এরদোয়ান। এদিকে তুর্কি প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের পর সংবাদ সংস্থা এএফপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ফরাসী প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান যে, ফ্রান্সে তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে তলব করা হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের মন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। অতিরিক্ত মন্তব্য ও অভদ্রতা কোনো পন্থা নয়। এরদোয়ান যেন তার নীতিগত অবস্থান পরিবর্তন করেন, সেই দাবি জানানো হয়েছে। তার এমন অবস্থান সবদিক থেকেই বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০০২ সালে ইসলামি রাজনৈতিক আদর্শের দল একে পার্টি তুরস্কের ক্ষমতায় আসার পর থেকে ইসলামকে তুরস্কের মূলধারার রাজনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করে আসছেন এরদোয়ান। ন্যাটোর এই দুই সদস্য দেশের মধ্যে কূটনৈতিক পর্যায়ে সাম্প্রতিক দ্বন্দ্ব ছাড়াও দু’দেশ নানা ভূ-রাজনৈতিক ইস্যুতে বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছে।

ন্যাটো জোটে এক দেশ আরেক দেশের মিত্র হলেও সিরিয়া ও লিবিয়ার গৃহযুদ্ধ, নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলকে ঘিরে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের যুদ্ধ নিয়ে দুই দেশের অবস্থান আলাদা।

২০১৫ সালে ফরাসী রম্য ম্যাগাজিন শার্লি এবদোর কার্যালয়ে হামলায় কার্টুনিস্টসহ ১২ জন মারা যায়। মহানবীকে (সা.) নিয়ে কার্টুন প্রকাশ করার জেরে প্রতিষ্ঠানটির অফিসে হামলা চালানো হয়।

চলতি মাসের শুরুতে ম্যাক্রোঁ ইসলামকে সঙ্কটাপন্ন ধর্ম হিসেবে মন্তব্য করেন এবং ফ্রান্সে ইসলামি বিচ্ছিন্নতাবাদ দমন করতে আরো কঠিন আইন প্রণয়নের ঘোষণা দেন। ফ্রান্সের প্রায় ১০ শতাংশ নাগরিক মুসলিম, যা ইউরোপের অন্য যে কোনো দেশের মুসলিম জনসংখ্যার তুলনায় বেশি।

মুসলিমদের অনেকে অভিযোগ তুলেছেন যে, ম্যাক্রোঁ ইসলাম ধর্মকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন এবং তার এই ধরণের মন্তব্য মানুষের মধ্যে ইসলাম ভীতিকে স্বাভাবিক করে তুলতে পারে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *