May 3, 2024
আঞ্চলিকজাতীয়লেটেস্ট

মেধা ও সৃজনশীলতাকে জাতির কল্যাণে নিয়োজিত করতে হবে

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি

 

দ: প্রতিবেদক

রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, তোমরা আজ দেশের উচ্চতর মানবসম্পদ। তোমাদের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক। সে প্রত্যাশা পূরণে তোমাদের অর্জিত জ্ঞান, মেধা ও সৃজনশীলতাকে জাতির বৃহত্তর কল্যাণে নিয়োজিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে ত্রিশ লাখ শহিদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের গর্বিত উত্তরসূরী তোমরা। তোমরা এ দেশকে এগিয়ে নেবে সুন্দর আগামীর পথে, সমৃদ্ধির পথে। মনে রাখবে এ দেশ  ও সমাজ আজ তোমাদের এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। তাদের কাছে তোমরা ঋণী। তোমরা তোমাদের অর্জিত জ্ঞান, মেধা ও মনন দিয়ে দেশ মাতৃকার কল্যাণ করতে পারলে সে ঋণ কিছুটা হলেও শোধ হবে।

গতকাল রবিবার দুপুরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ দেশের পরিবেশকে সুন্দর করতে জনসচেতনতা সৃষ্টির ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। এ ব্যাপারে প্রচার-প্রচারণা চালানো এবং ভ‚মিকা রাখার জন্য বিশ্ববিদালয়সহ দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমাদের ছাত্র সমাজ অতীতে পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খানকে পরাজিত করেছে, মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণ উৎসর্গ করে বিজয় লাভ করেছে, সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ভ‚মিকা পালন করেছে তা হলে দেশের পরিবেশকে সুন্দর করতে পারবে না কেনো? বিদেশে যেয়ে আমরা থুথু ফেলতে গেলে, একটুকরো কাগজ ফেলতে গেলে চিন্তা করি। অথচ দেশে এসে আমরা কি করি? দেশের রাস্তাঘাট, নদী-নর্দমা বর্জ্যে ভরে যাচ্ছে, পলিথিনের কারণে পানি সরতে পারে না, বর্জ্যে ভরে যাচ্ছে, পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। অথচ জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে পরিবেশ সুন্দর করা সম্ভব। এ জন্য বিশ্ববিদালয়সহ দেশের সকল শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসলে এ ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জিত হবে। তিনি তাদেরকে এটি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণের তাগিদ দেন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে তিনি বলেন, অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও স্পেনের সিগমো ল্যাব ও যুক্তরাষ্ট্রের স্কপাস পরিচালিত জরিপে আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ের তালিকায় প্রবেশ করে এ বছর দেশের মধ্যে উদ্ভাবনীতে প্রথম ও গবেষণায় দ্বিতীয় স্থান লাভ করেছে। অধীত বিদ্যার প্রয়োগে রাইঙ্গামারী গ্রামকে ল্যাবরেটরি ভিলেজ করা হয়েছে। এ জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে তিনি আরও বলেন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আমার বিশ্বাস, জ্ঞান-বিজ্ঞানের নবতর শাখার বিকাশ ঘটিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিকমানের বিশ্ববিদ্যালয় পরিণত হবে।

তিনি বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ ‘মুজিব বর্ষ’ উপলক্ষে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত কালজয়ী মুজিব শীর্ষক বঙ্গবন্ধুর সুবিশাল ম্যুরালটির উদ্বোধন করতে পেরে আমি সত্যিই গর্বিত। এই অমর কীর্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীসহ সবার মনন ও চেতনায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হবে। জাতীয় তাৎপর্যবাহী এ দুটি অনুষ্ঠান সাড়ম্বরে উদযাপনে নবীন গ্রাজুয়েটসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার অবদান রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। রাষ্ট্রপতি ২৩ জনকে শিক্ষার্থী চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল প্রদান করেন। ৬ষ্ঠ সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ৪৪৭৮ জনকে ¯œাতক, ২৫৩০ জনকে ¯œাতকোত্তর, ৫ জনকে এম ফিল ও ০৮ জনকে পিএইচ. ডি এবং ১৭ জনকে পোস্ট-গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন ডিগ্রি প্রদান করেন।

এর আগে তিনি সমাবর্তন শোভাযাত্রাসহ প্যান্ডেলে প্রবেশ করলে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছিলে তাঁকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের অদূরে নবনির্মিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ‘কালজয়ী মুজিব’ উদ্বোধন করেন।

সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. কাজী শহীদুল্লাহ। সমাবর্তন বক্তার বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জনসহ গুরুত্বপূর্ণ দিক উল্লেখ করে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান। এছাড়া স্বাগত বক্তব্য রাখেন ট্রেজারার প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ। মুল সমাবর্তন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস।

অনুষ্ঠানে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, খুলনা-৬ আসনের সংসদ সদস্য  আক্তারুজ্জামান বাবু, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিবসহ সফরসঙ্গী, বেসামরিক, সামরিক উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ,  বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট, সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল, অর্থকমিটি ও প্লানিং কমিটিসহ অন্যান্য বডির সদস্য,  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও সমাবৃত্তগণ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ৬ষ্ঠ সমাবর্তন সফলভাবে সমাপ্ত হওয়ায় এবং সহযোগিতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা-রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন সংস্থা, খুলনা সিটিকর্পোরেশন, ওজোপাডিকো, ওয়াসা, গণপূর্ত বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সকল মহলের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *