April 20, 2024
জাতীয়

মানহীন পানি: ৩ কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল, স্থগিত ৭টির

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
জার ও বোতলজাত পানি মানসম্মত না হওয়ায় তিনটি কোম্পানির সনদ বাতিল এবং সাতটির বিভিন্ন মেয়াদে স্থগিত করেছে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রক রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন-বিএসটিআই।
লাইসেন্স বাতিল হওয়া কোম্পানিগুলো হল- আনন্দ ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ‘আনন্দ প্লাস’ ব্র্যান্ড (জার), রিয়েল ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ‘রিয়েল ফার্স্ট’ ব্র্যান্ড (জার) এবং বেস্টওয়ান ড্রিংকিংয়ের ‘বেস্ট ওয়ান’।
আর বিভিন্ন মেয়াদে লাইসেন্স স্থগিত হওয়া কোম্পানিগুলো হল- সেফ ইন্টারন্যাশনালের ‘ক্যানি’ ব্র্যান্ড (জার), সিনহা বাংলাদেশ ট্রেড লিমিটেডের ‘এ্যাকুয়া মিনারেল’ (ছোট বোতল), এএসটি বেভারেজ লিমিটেডের ‘আলমা’ ব্র্যান্ড (ছোট বোতল), মেসার্স ক্রিস্টাল ফুড অ্যান্ড বেভারেজের ‘সিএফবি’ ব্র্যান্ড (জার), মেসার্স ইউরোটেক ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজির ‘ওসমা’ ব্র্যান্ড (জার), ইউনিটি এগ্রো বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজের ‘এপিক’ ব্র্যান্ড (জার) এবং ফ্রুটস অ্যান্ড ফ্লেভার্সের ‘ইয়াম্মী ইয়াম্মী’ ব্র্যান্ড (বোতলজাত)।
বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর নিম্নমানের হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে মঙ্গলবার হাই কোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিএসটিআই। সংস্থাটি বলছে, লাইসেন্স বাতিল হওয়া ওই তিন কোম্পানি পানি বাজারজাত করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লাইসেন্স স্থগিত করা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এ বিষয়ে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত ড্রিংকিং ওয়াটার বিক্রি-বিতরণ ও বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এই পানি বাজারজাত করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে হুঁশিয়ার করা হয়েছে।
বিএসটিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাজারে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির পানির নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার পর ১০টি ব্র্যান্ডের বোতল ও জারের পানি নিম্নমানের বলে প্রতীয়মান হয়। পরে তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। তার মধ্যে অনুমোদিত সাতটি কোম্পানির কাছ থেকে জবাব পাওয়ায় তাদের লাইসেন্স বিভিন্ন মেয়াদে স্থগিত করা হয়। আর তিনটি কোম্পানি জবাব না দেওয়ায় তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাই কোর্ট বেঞ্চে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। গত বছরের ২২ মে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘প্রতারণার নাম বোতলজাত পানি’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে ২৭ মে হাই কোর্টে জনস্বার্থে রিট আবেদন করেন আইনজীবী শাম্মী আক্তার।
পরে রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর আদালত বাজারে থাকা অবৈধ-অনিরাপদ জার ও বোতলের পানির সরবরাহ বন্ধের নির্দেশ দেয়। বিএসটিআই ও আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
আদালতের নির্দেশেই বাজার থেকে নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষা করে গত ২১ জানুয়ারি পাঁচটি ব্র্যান্ডের বোতল ও জারের পানি মানহীন বলে প্রতিবেদন দিয়েছিল বিএসটিআই। তারই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার নতুন করে এই প্রতিবেদন দেয় সংস্থাটি। আদালতে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোখলেছুর রহমান খোকন। রিটকারীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মো. জে আর খাঁন রবিন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খোকন সাংবাদিকদের বলেন, এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত বোতল ও জারের পানি পরীক্ষার নির্দেশ দিয়ে প্রতিবেদন চেয়েছিলেন। এর আগে গত ২১ জানুয়ারি ১৫টি কোম্পানির পানি পরীক্ষার প্রতিবেদন পেয়েছি। তখন পাঁচটি ব্র্যান্ডের পানি মানহীন বলে উলে­খ করছিল বিএসটিআই।
সেদিন আদালত অন্যান্য যেসব কোম্পানির পানি পরীক্ষা করা হয়েছে সেগুলোরও প্রতিবেদন দিতে বলে। এছাড়া প্রতি দুই সপ্তাহে একবার বাজার থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে বিএসটিআইকে পরীক্ষা অব্যাহত রাখতে বলেছিল।
সে আদেশ অনুযায়ী মঙ্গলবার বিএসটিআই প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত তাদের ৬৯টি সার্ভিলেন্স টিম পরিচালনা করে ৩৩ হাজার ৫৭৫টি অবৈধ পানির জার জব্দ এবং ৬৫টি নিয়মতি মামলা করা হয়।
প্রতিবেদন উদ্বৃত করে রাষ্ট্রপক্ষের এ আইনজীবী বলেন, পরীক্ষার জন্য বাজার থেকে ২৮টি পানির নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ২২টির প্রতিবেদনের মধ্যে ১২টি মানসম্মত এবং ১০টি নিম্নমানের। এ ১০টিকে শোকজের পর ৩টি কোম্পানি জবাব দেয়নি। তাই তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। বাকী ৭টি শোকজের জবাব দিয়ে মান উন্নয়নের জন্য সময় চেয়েছে। এ কারণে তাদের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া লাইসেন্স না থাকায় ৩৬ কারখানার উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছে।
রিটকারী পক্ষে আইনজীবী মো. জে আর খাঁন রবিন বলেন, বিএসটিআই আগের প্রতিবেদনে যে পাঁচটি ব্র্যান্ডের পানি মানহীন বলে জানিয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে চারটি ব্র্যান্ডের লাইসেন্স বিভিন্ন মেয়াদে স্থগিত করা হয়েছে। তবে শ্রী কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয় লিমিটেডের ‘সিনমিন’র বিষয়ে কোনো কিছু উলে­খ নেই আজকের প্রতিবেদনে।
২১ জানুয়ারির প্রতিবেদনে ‘সিনমিন’-এর পাশাপাশি ‘ইয়াম্মী ইয়াম্মী’, ‘একুয়া মিনারেল’, ‘সিএফবি’ ও ‘ওসমা’-এর পানি পানের উপযোগী নয় বলে বলা হয়েছিল। কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা এখন জানাল বিএসটিআই। আদালতে এই প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে এ মামলায় পক্ষভুক্ত করতে আবেদন করেন আইনজীবী মুহম্মদ ফরিদুল ইসলাম (ফরিদ)।
তখন একজন বিচারক বলেন, আপনারা (নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ) কী কাজ করেন? বিএসটিআই তো মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। আপনাদের কোনো কাজ তো চোখে পড়ে না। আপনাদের সাথে যোগাযোগ করতে কোনো হটলাইনও তো নাই। সাধারণ মানুষ যোগাযোগ করবে কীভাবে? আমি দুইবার ফোন করেও কাউকে পাইনি। এই যদি হয় অবস্থা সাধারণ মানুষ প্রতিকার পাবে কীভাবে?
তখন আইনজীবী বলেন, মোবাইল কোর্ট আমরাও পরিচালনা করতে পারি। বিচারপতি এ আইনজীবীর কাছে জানতে চান, আপনারা কি সিডিউলভূক্ত (তফসিল)? জবাবে আইনজীবী ফরিদ বলেন, সাধারণ যে কেউ চাইলে এ আইনের (নিরাপদ খাদ্য আইন) অধীনে মামলা করতে পারেন। তখন আদালত বিশুদ্ধ পানির বিষয়ে তাদের সব কার্যক্রম এবং নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সার্বিক কার্যক্রম তুলে ধরে মঙ্গলবার প্রতিবেদন দিতে বলে।
ফরিদ পরে সাংবাদিকদের বলেন, আজকে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ পক্ষভুক্ত হয়েছে। এরপর আদালত পানি নিয়ে আমাদের কার্যক্রম জানতে চেয়েছে। আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে হবে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *