May 4, 2024
লাইফস্টাইল

মহামারি বুঝিয়েছে মানুষের সংস্পর্শ কতটা গুরুত্বপূর্ণ

এক বছরের বেশি সময় ধরে করোনা মহামারির কারণে মানুষের সাধারণ জীবন-যাপন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এখন আর কেউ দেখা হলে কারও সঙ্গে হাত মেলান না বা জড়িয়ে ধরেন না। মহামারির শুরু থেকেই বিশেষজ্ঞরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। মানুষের সংস্পর্শ থেকেই করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। সে কারণেই লোকজনের কাছ থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই ঝুঁকিমুক্ত থাকা সম্ভব।

শিকাগোতে বাস করেন ৬২ বছর বয়সী ল্যারি। প্রায় ১১ মাস ধরে কেউ তাকে জড়িয়ে ধরে না। তিনি একজন হিসাবরক্ষক। গত বছরের মার্চ থেকেই শিকাগোতে লকডাউন জারি করা হয়। তার হার্টের সমস্যা থাকায় মহামারির শুরু থেকেই তিনি বাড়িতে অবস্থান করছেন। ল্যারি এখন শুধুমাত্র একজন মানুষের সংস্পর্শে রয়েছেন। তিনি হচ্ছেন ল্যারির সেবায় নিয়োজিত নার্স। কিন্তু সেই নার্স শুধুমাত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া তার কাছে আসেন না। ল্যারি তার নিজেকে একজন ‘স্পর্শকাতর’ মানুষ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি তার কাছের মানুষদের কারও সংস্পর্শ পান না। কারও হাতের স্পর্শ পেতে, কাছের মানুষদের জড়িয়ে ধরতে তিনি অধীর হয়ে উঠেছেন। কিন্তু এখন বিছানায় শুয়ে শুয়েই তার সময় কাটছে।

করোনা মহামারির কারণে মানুষের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। স্কুলগুলো বন্ধ থাকায় দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতেই দিন কাটছে শিশুদের। বাড়িতে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের আনাগোনা এখন নেই বললেই চলে। করোনা সংক্রমণরোধে কারও সঙ্গে দেখা হলেও এখন আমরা একে অন্যের সংস্পর্শে যেতে পারি না। এই ছোট ছোট জিনিসগুলোই মানুষ এখন তীব্রভাবে অনুভূব করতে শুরু করেছে।

মিলার স্কুল অব মেডিসিনের টাচ রিসার্চ ইন্সটিটিউটের পরিচালক টিফানি ফিল্ড বলেন, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য খাবার এবং পানির মতো অন্যদের সংস্পর্শও একটি জরুরি বিষয়। বেঁচে থাকার জন্য কাছের মানুষদের সংস্পর্শ প্রয়োজন। তিনি বলেন, না দেখে না শুনে আমরা থাকতে পারি। কিন্তু কারও সংস্পর্শ ছাড়া আমরা চলতে পারি না। আমাদের ত্বক হচ্ছে এক ধরনের বাহন। আমরা কাছের মানুষদের সংস্পর্শ পেলে দুঃখ-কষ্ট ভুলে যেতে পারি।

কাছের মানুষদের স্পর্শ করার মাধ্যমে সম্পর্কগুলোকে আরও গভীর হয়ে ওঠে। পরিবারের সদস্যদের সংস্পর্শ শিশুদের ক্ষেত্রেও খুব জরুরি। ২০১৬ সালে সদ্যজাত শিশুদের ওপর একটি গবেষণা করা হয়। সেখানে দেখা গেছে, যেসব শিশু জন্মের পর পরই তার মায়ের সংস্পর্শে থাকে তাদের মধ্যে ৩২ শতাংশের বেশি শিশু প্রথম চেষ্টাতেই মায়ের দুধ পান করে।

জন্মের কয়েক ঘণ্টা পর এসব শিশুর হার্ট, ফুসফুস এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে। ১৯৮৬ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে অপরিণত শিশুদের মধ্যে যাদের শরীরে প্রতিদিন ম্যাসাজ করা হয় তাদের ওজন খুব দ্রুত বাড়ে এবং ইন্টেন্সিভ কেয়ারে বেশিদিন রাখতে হয় না।

মানুষের সংস্পর্শ শরীরে কর্টিসলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। মানুষের মধ্যে হতাশা, বিষণ্নতার জন্য এই হরমোন দায়ী। ফিল্ড নামের একজন চিকিৎসকের মতে, এইচআইভি ভাইরাস এবং ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও স্পর্শ খুব গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের শরীরে কিছু সেল আছে যেগুলো ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াকে প্রাকৃতিকভাবে ধ্বংস করতে পারে। অন্যদের সংস্পর্শের মাধ্যমে এসব সেলের উৎপাদন অনেক বেড়ে যায়। বিশেষ করে কাছের মানুষদের স্পর্শ রোগের সময় মানুষের মানসিক অবস্থাকেও অনেক দৃঢ় করে তোলে, মানুষ বেঁচে থাকার প্রেরণা পায়।

প্রতিদিন সংস্পর্শ না পেলে মানুষের ত্বকে এক ধরনের অভাব অনুভূত হয়। এ বিষয়ে খুব একটা গবেষণা এখনও হয়নি। তবে ২০১৪ সালে বিশ্বব্যাপী ৫০৯ জন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ওপর একটি জরিপ করা হয়। সেখানে দেখা গেছে সংস্পর্শের অভাবে মানুষের মধ্যে একাকিত্ব, হতাশা, বিষণ্নতা, উদ্বেগ এবং সেকেন্ডারি ইমিউন ডিজঅর্ডার দেখা দেয়। মহামারির কারণে যারা লকডাউনে বাড়িতেই থাকছেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই অন্যদের সংস্পর্শের জন্য ব্যাকুল হয়ে আছেন।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *