April 10, 2024
খেলাধুলা

ভারতীয় ক্রিকেটারদের লিফটেও উঠতে দিতো না অস্ট্রেলিয়া!

এবার অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে নানামুখী ‘অত্যাচারের মুখে’ই পড়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। করোনার কারণে হোটেলে শুধু বন্দি থাকাই নয়, রুম-টয়লেট পরিষ্কারসহ সব কাজ নিজেদের হাতেই করতে হয়েছে রোহিত-পূজারাদের। যা নিয়ে ভারতীয় দলের পক্ষ থেকে অভিযোগও জানানো হয়।

অস্ট্রেলিয়ানদের অভব্য আচরণ এখানেই থেমে থাকেনি। মাঠের মধ্যে বর্ণবিদ্বেষের শিকারও হয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। এবার রবিচন্দ্রন অশ্বিন ফাঁস করলেন এমন এক বিস্ফোরক খবর, যা শুনে অসিদের প্রতি ভারতীয় সমর্থকদের ক্ষোভটা আরও বাড়বে।

নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ফিল্ডিং কোচ আর শ্রীধরের সঙ্গে কথোপকথনে অশ্বিন জানিয়েছেন, সিডনিতে লিফটের ভেতরে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটাররা থাকলে, ভারতীয়দের ঢুকতে দেয়া হতো না।

অশ্বিন বলছেন, ‘আমরা সিডনি পৌঁছানোর পরই কঠোর সব নিষেধাজ্ঞা আমাদের উপরে চাপিয়ে দেওয়া হয়। কার্যত বন্দি করে ফেলা হয় আমাদের। খুব অবাক করার মতো একটা অভিজ্ঞতাও হয়েছিল আমাদের। অস্ট্রেলীয় খেলোয়াড়েরা যখন লিফটের ভেতরে থাকত, আমাদের প্রবেশ করতে দেয়া হতো না।’

ভারতীয় অফস্পিনার যোগ করেন, ‘ঘটনাটা খুব বিস্মিত করার মতো। দু’টো দলই তো একই জৈব সুরক্ষা বলয়ে ছিল। সত্যি কথা বলতে কী, আমাদের সবাইকে খুব অবাক করেছিল এই নিষেধাজ্ঞা।’

অশ্বিন জানিয়েছেন, বিশেষ করে তৃতীয় টেস্ট খেলতে সিডনিতে গেলে তাদের সঙ্গে বেশি খারাপ আচরণ শুরু করে অস্ট্রেলীয়রা, যা কিনা মেনে নেয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল ভারতীয় ক্রিকেটারদের।

‘এ রকম কিছু যে ঘটতে পারে, তা আমরা ভাবতেও পারিনি। সত্যিই আমাদের সকলের খুব খারাপ লেগেছিল। আমরা একই জায়গায়, একই বলয়ের মধ্যে আছি। অথচ, একই সঙ্গে লিফ্ট ব্যবহার করতে পারব না? এই ব্যাপারটা হজম করাই খুব কঠিন ছিল’-ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন অশ্বিন।

চার টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে ভারতকে ৩৬ রানে অলআউট করার লজ্জা দেয়ার সঙ্গে বড় ব্যবধানে জিতে রীতিমত উড়ছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু মেলবোর্নে দ্বিতীয় টেস্টেই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় ভারত, ১-১ সমতা ফেরায় সিরিজে।

এরপরই নাকি অস্ট্রেলিয়ানদের আচরণ পাল্টে যায়। অশ্বিন বলেন, ‘মেলবোর্নে প্রচুর নাটক হলো। অস্ট্রেলিয়ায় যখন আমরা এসেছিলাম, তখন কিন্তু বলা হয়েছিল ইতিমধ্যেই আমরা আইপিএলের জৈব সুরক্ষা বলয়ে থেকে এসেছি। তাই খুব কঠোর কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে না। ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনের পরে আমরা কফি পান করতে যেতে পারি, সিনেমা দেখতে যেতে পারি, বাইরে যাওয়ার উপরে কোনও নিষেধাজ্ঞা ছিল না। সে রকমই আমাদের বলা হয়েছিল।’

অশ্বিন যোগ করেন, ‘কিন্তু সিরিজ ১-১ হতেই সব কিছু পাল্টে গেল। তখনই আমাদের বলে দেওয়া হল, হোটেলের ঘর থেকে নড়াচড়া করা যাবে না। অনন্তকাল ধরে কী করে হোটেলের ঘরে বন্দি থাকা সম্ভব? আমি অস্ট্রেলিয়াতে পরিবার নিয়ে গিয়েছিলাম। আমার বাচ্চারা কান ঝালাপালা করে দিচ্ছিল বাইরে বেরোবে বলে। সেই সময়টা সত্যিই খুব কঠিন ছিল আমাদের জন্য।’

কিন্তু কঠিন সেই পরিস্থিতি সামলে সিডনিতে ড্র আর শেষ টেস্টে অবিশ্বাস্য এক জয়ে সিরিজ নিজেদের করে নেয় ভারত। সিডনিতে ৪০ ওভারের উপরে ব্যাট করে অশ্বিন এবং হনুমা বিহারি হারা ম্যাচ ড্র করে দেন। ওই ম্যাচ নিয়ে অশ্বিনের উপলব্ধি, অস্ট্রেলিয়া শর্ট বল করার কৌশল নিয়ে ভুলই করেছিল।

ভারতীয় অলরাউন্ডারের ভাষায়, ‘আমি পা নাড়াতে পারছিলাম না। আর বিহারি শরীরে আঘাত পেয়েও দাঁড়িয়ে ছিল। দু’জনেই চোট নিয়ে লড়ছিলাম। অস্ট্রেলিয়া আমাদের দুর্বলতার জায়গাটা ধরতেই পারেনি। ওরা যদি আমাকে সামনে পা বাড়িয়ে খেলানোর চেষ্টা করত, হয়তো ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যেতে পারতাম। তার বদলে ভয় পাওয়ানোর জন্য ক্রমাগত শর্ট বল করে গেল।’

কিন্তু ওই কৌশল হিতে বিপরীত হয়েছে অসিদের। অশ্বিন-বিহারির প্রতিরোধ দেখে উইকেটের পেছন থেকে ক্রমাগত স্লেজিং করতে থাকেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক টিম পেইন। তখনই অশ্বিনরা বুঝে গিয়েছিলেন স্বাগতিকরা চাপ নিতে পারছে না।

অশ্বিন বলেন, ‘ওদের এই রণনীতিতে হিতে বিপরীত হল। যত আমাদের শরীরে বল লাগছিল, তত আমাদের জেদ-প্রতিজ্ঞা বাড়ছিল। ভেতরে ভেতরে ততই আরও শক্ত হচ্ছিলাম আমি। নিজেকে বলছিলাম, আর কত মারবে ওরা? মারুক না। এর সঙ্গে টিম পেইন উইকেটের পেছন থেকে কথা বলতে শুরু করল। আমি আর বিহারি সেই সময়ে বলাবলি করতে শুরু করি যে, অস্ট্রেলিয়া নকশাটা হারিয়ে ফেলছে।’

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *