April 25, 2024
আন্তর্জাতিককরোনালাইফস্টাইল

ভাইরাস থেকে রক্ষার পাশাপাশি সংক্রমণও কমাচ্ছে টিকা, গবেষণা

ক বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বে তাণ্ডব চালাচ্ছে করোনাভাইরাস। একমাত্র টিকা গ্রহণের মাধ্যমেই প্রাণঘাতী এই ভাইরাস বেঁচে থাকা সম্ভব। মানবজাতিকে এই ভাইরাস থেকে বাঁচাতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এর মধ্যেই বেশ কিছু কার্যকরী টিকা নিয়ে এসেছে। বেশ কিছু টিকা এর মধ্যেই সফলতাও অর্জন করেছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই বেশ কিছু টিকার কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ভালো খবর দিয়েছে ফাইজার। সম্প্রতি হাসপাতালে চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফাইজারের টিকা মানুষকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া থেকেই শুধু রক্ষা করছে না বরং, এটি করোনাভাইরাসের সংক্রমণও কমিয়ে দিচ্ছে। অর্থাৎ টিকার মাধ্যমে নিজের আক্রান্ত হওয়া যেমন রোধ করা যাচ্ছে পাশাপাশি এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া থেকেও রক্ষা করছে টিকা।

একই ধরনের ফলাফল পাওয়া গেছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ওপর চালানো ইংল্যান্ডের পাবলিক হেলথ বিভাগের চালানো এক গবেষণাতেও।

গবেষকরা বলছেন, এসব গবেষণার ফলাফল ‘সত্যিকার অর্থেই সুসংবাদ’। তারপরেও তারা অন্যান্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, ভাইরাস ঠেকাতে এখনও এসব ব্যবস্থার প্রয়োজন রয়েছে।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সংক্রমণ ঠেকানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গবেষকরা বলছেন, টিকা হয়তো আপনাকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে, কিন্তু তারপরেও আপনি আক্রান্ত হতে পারেন এবং এই ভাইরাসটি আপনার মাধ্যমে অন্যদের দেহে ছড়াতে পারে।

একারণে করোনাভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রত্যেককে টিকা দিতে হবে বলে জানিয়েছেন তারা। টিকা নেওয়ার পর ভাইরাস আর ছড়াতে না পারাটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমে মহামারির ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন মানুষকে যখন টিকা দেওয়া হচ্ছে, তখন সে পরোক্ষভাবে আরেকজন মানুষকেও সংক্রমণের হাত থকে রক্ষা করছেন।

ক্যামব্রিজের এডেনব্রুক্স হাসপাতালের কর্মীদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখা হয় যে, তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কীনা। কোনো উপসর্গ না থাকলেও তাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে।

ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে এই হাসপাতালে ফাইজারের টিকা দেওয়া শুরু হয়। টিকা দেওয়া হয় হাসপাতালের কর্মীদেরও।এক মাস পর দেখা যায় যারা কাজ করছেন তাদের কাউকে টিকা দেওয়া হয়েছে এবং কেউ কেউ এখনও টিকা নেয়নি।

জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে দেখা যায়, টিকা দেওয়া হয়নি এমন এক হাজার কর্মীর মধ্যে ১৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে শনাক্ত হচ্ছে। কিন্তু টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে এরকম এক হাজারের মধ্যে পজিটিভ বলে শনাক্ত হচ্ছেন মাত্র চারজন।

এছাড়াও যারা আক্রান্ত হয়েছেন কিন্তু শরীরে কোনো উপসর্গ নেই তাদের মধ্যেও সংক্রমণের হার কমে গেছে। উপসর্গ না থাকার কারণে তারা না জেনেই অন্যদের শরীরেও ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন।

গবেষণার এসব ফলাফল অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে। তবে এর বিস্তারিত তথ্য এখনও অন্যান্য বিজ্ঞানীরা বিশ্লেষণ করে দেখেননি।

এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত ড. মাইক উইক্স বলছেন, এটা আসলেই একটি সুসংবাদ। লোকজনের খুশি হওয়া উচিত যে টিকা নিলে তারা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাবেন। শুধু নিজেদের রক্ষা করার জন্যই নয়, অন্যরাও যেন তাদের মাধ্যমে আক্রান্ত হতে না পারেন সেজন্যও তাদের টিকা নেওয়া উচিত।

তবে তিনি এটাও বলেছেন যে, টিকাই নিলেই যে পুরোপুরি রক্ষা হয়ে গেল তাও নয়। তার মতে, টিকা পুরোপুরি সংক্রমণ প্রতিরোধ করে না। একারণে হাত ধুতে হবে, মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হবে। এগুলোও সমান গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের চালানো এই গবেষণায় দেখা গেছে ফাইজারের এক ডোজ টিকা সংক্রমণের ঝুঁকি ৭০ শতাংশ হ্রাস করে আর দুই ডোজ নিলে এই ঝুঁকি ৮৫ শতাংশ কমে যায়।

অন্যদিকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিলে সংক্রমণের ঝুঁকি অন্তত দুই তৃতীয়াংশ হ্রাস পায়। ওয়ারউইক মেডিকেল স্কুলের শিক্ষক লরেন্স ইয়ং বলেন, ‘আক্রান্ত না হলে আপনি ভাইরাস ছড়াতে পারবেন না এবং এসব গবেষণায় দেখা গেছে টিকা
উপসর্গহীন একজন ব্যক্তিকে ভাইরাসটি ছড়ানোর হাত থেকে রক্ষা করে।’

এক গবেষক বলেন, ‘ফাইজারের এক ডোজ নেওয়ার পর সংক্রমণ যে হারে কমতে দেখা গেছে সেটা আশাব্যঞ্জক। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে টিকা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা লকডাউনের মতো বিধি-নিষেধ থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হব।’

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *