April 20, 2024
আঞ্চলিকলেটেস্টসাক্ষাৎকার ও মতামত

বাহ্যিক নেতা

বিপুল রায় চৌধুরী…

যান্ত্রিক নগর জীবনে মানুষের মন বোধ করি যন্ত্রের মতই পাষাণ হয়ে গেছে। ফলে নিজ স্বার্থের কাছে অন্যের স্বার্থকে তুচ্ছ মনে হয়। আর এ-ই স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার অভিপ্রায়ে ব্যক্তি হয়ে উঠে দুর্নীতিপরায়ণ। ক্ষমতা ও প্রভাব প্রতিপত্তির স্বার্থপর ব্যবহারের পরিনতিই দূর্নীতি। প্রকৃতপক্ষে দুর্নীতির কারনে দেশের ভাবমূর্তি ও উন্নয়ন দুইই দারুণভাবে ব্যহত হয়। শুধু তাই নয়, দুর্নীতির প্রসারে নৈতিকতার অপমৃত্যু ঘটে, সমাজ থেকে নির্বাসিত হয় সত্য-সুন্দর। কল্যাণচেতনা হয় পরাহত। মূল্যবোধ বর্জিত মানুষ সমাজে সুন্দর আর সুশৃঙ্খল পথকে করে তোলে বন্ধুর। ব্যক্তি চাহিদা এদের কাছে এমনভাবে বৃহৎ আকার ধারণ করে যে, নিজ পরিবারও সেই ভয়াল শোবল থেকে মুক্ত থাকেনা।অতিসম্প্রতি রিজেন্ট হাসপাতালের করোনাভাইরাস পরীক্ষা সংক্রান্ত যে জালিয়াতি তাতে বাংলার মানুষ বাকরুদ্ধ। এমনকি রিজেন্ট গ্রুপের মালিকের স্ত্রী নিজেই লজ্জিত। তিনি গণমাধ্যমে নিজের স্বামীর বিচার চেয়েছেন। তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায়, এত সম্পদ সাহেদ কার জন্য গড়ে তুলল!!

অসৎভাবে উপার্জনের যে কায়দা সাহেদরা আয়ত্ত করে, তা যদি ভালোর জন্য ব্যবহার করত তাহলে দেশ কয়েকধাপ এগিয়ে যেত। এদের জন্যই সন্ত্রাস আর বেহায়াপনার জন্ম হয়েই চলেছে। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে সাহেদরা যেমন প্রতিষ্ঠিত হতে চাই তেমনি রাজনৈতিক লেবাশধারী হয়ে থাকতে চাই ধরা ছোয়ার বাইরে। যুগে যুগে ন্যায় ও সত্যের জন্য সংগ্রাম করে যারা জীবন উৎসর্গ করে, তাদের অবদান এক নিমিষেই ধূলিসাৎ করতে চাই এরা। রাজনীতির নামে মিথ্যাচার, সমাজসেবার নামে স্বার্থপরতা, আদর্শের নামে প্রতারণা করে নিজেকে জাহির করতে চাই এরা। পোশাকে আশাকে এদেরকে নেতা লাগলেও বাস্তবে এক নিরেট ভন্ড। রাজনৈতিক আন্দোলন ও রাজনীতি চর্চায় সিদ্ধহস্তরা আজ বড়ই অসহায়। হাইব্রীডদের ভীড়ে কোনঠাসা নের্তৃত্ব দেওয়া নেতারা।সাহেদদের কাছে রাজনীতি বিনোদনের মাধ্যম, সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার নয়। পৃথিবী জীবনে অমরত্ব লাভের বাসনা এদের শুধু অর্থ উপার্জনে।

একাত্তরের রণাঙ্গনের যোদ্ধাদের ছিনিয়ে আনা স্বাধীনতাও বিকিয়ে দিতে পিছমা হবেনা এরা। কখনো কখনো জাতির শত্রুদের সাথে হাত মিলিয়ে মীরজাফর সাজতেও দ্বিধান্বিত হবেনা।তাই সময় এসেছে, পরিবার থেকে এইসব জঞ্জালকে ছুড়ে ফেলার। রাজনৈতিক দল এক্ষেত্রে কার্যকরী ভুমিকা পালন করতে পারে। বিশ্বাস রাখি বাংলার ভালো চাওয়া মানুষগুলো তা করবেন। কারণ এদেশ আমাদের মাতৃকা, এদেশের আলো, বাতাস, জলে আমাদের বেড়ে উঠা। কিছুতেই আমি এদেশের অমঙ্গল হতে দিতে পারিনা।
কবির ভাষায়,

ও আমার দেশের মাটি, তোমার প’রে ঠেকাই মাথা।
তোমাতে বিশ্বময়ী, তোমাতে বিশ্বমায়ের আচল পাতা।

লেখকঃ পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক এবং সংবাদকর্মী

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *