April 20, 2024
আঞ্চলিকলেটেস্ট

বসন্তের রঙে ভালবাসার ছোঁয়া লেগেছে খুলনার একুশে বইমেলায়

জয়নাল ফরাজী
ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এবছর একইদিনে পড়ায় প্রকৃতি যেন সেজেছে রঙ্গিন সাঁজে। উৎসবে মুখর পুরো খুলনা শহর। বাদ পড়েনি বাঙালীর প্রাণের একুশে বইমেলাও। পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস এবং সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার বইমেলায় যেন আনন্দের এক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। খুলনা বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার প্রাঙ্গণের সর্বত্রই দেখা গেছে হলুদ আর লাল রঙের সমারোহ।
গতকাল শুক্রবার ভালোবাসার মধুর সমর্পণে আবিষ্ট হয়ে বইমেলার দ্বার খোলে বিকেল ৪টায়। প্রথম থেকেই বইমেলা প্রাঙ্গণে তারুণ্যের উন্মাদনা ছিল লক্ষ্য করার মতো। সবাই ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়ে বইমেলায় এসেছে। প্রিয় মানুষটির হাতে বই তুলে দিতে ভুল করেনি কেউই।
ভালোবাসা দিবসের বিকালে মাসব্যাপী মুজিববর্ষ একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, হাতে হাত ধরে মেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছে তরুণ-তরুণীরা। কেউ কেউ প্রিয় মানুষটির সাথে স্টলগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছেন। পছন্দ হলে বই কিনছেন। আবার কেউ বই মেলা প্রাঙ্গণে প্রিয় মানুষটির সাথে সেলফি তুলছেন। অপরিচিত কাউকে দিয়ে নিজের সঙ্গী বা সঙ্গীনির দ্বৈত ছবি তুলতেও ভুল করছেন না কেউ কেউ।
বিশেষ দিন হওয়ায় স্টলগুলোতে বই বিক্রি হচ্ছে বিশেষ ছাড়ে। বঙ্গবন্ধু কর্নার থেকে শিশুদের দেওয়া হচ্ছে চকলেট উপহার। একইসাথে প্রতিদিনের ন্যায় শিশুদের প্রতিদিন বিনামূল্যে বই উপহার দেওয়া হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার থেকে বিএল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মামুন কাদের এর লেখা ‘গল্পে গল্পে বঙ্গবন্ধু’ বইটি দেওয়া হয় বিনামূল্যে।
মেলা প্রাঙ্গণে কথায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রাক্তণ অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ও সোনামুখ পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা এ এম কামরুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, ‘বইমেলায় আজ লোকসমাগম বেড়েছে চোঁখে পড়ার মতো। এতে বোঝা যায় মানুষ বিনোদনপ্রেমী। লোকসমাগম বাড়লেও বই কেনায় ক্রেতাদের আগ্রহ কম। ছোটদের মধ্যে যে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে, সেটা বড়দের মধ্যে নেই। তবে আজকের উপস্থিতি বইমেলাকে আরও প্রাণবন্ত করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।’
বইমেলায় বঙ্গবন্ধু কর্নার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এমন একটি উদ্যোগ আরও আগে নেওয়া উচিত ছিল। বইমেলাতে বঙ্গবন্ধু কর্নার দৃষ্টান্ত ও প্রশংসিত। আমি এজন্য মহানগর যুবলীগকে ধন্যবাদ জানাই।’
খুলনা মুহসিন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী লামিয়া খাতুন বলেন, ‘বইপড়া পছন্দ তাই বইমেলায় এসেছি। অনেকে ঘুরতে আসেন, অনেকে বই কিনতে। আমি হুমায়ূন আহমেদ স্যারের লেখা পছন্দ করি, তাই তার বই কিনতে এসেছি। এসময় তিনি বইমেলার বঙ্গবন্ধু কর্নারের প্রশংসা করেন।’
বঙ্গবন্ধু কর্নারে থাকা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. মেহেদী হাসান রাসেল বলেন, ‘সবাই বই কিনতে আসবে এটা ঠিক না। বইয়ের সাথে মানুষের মনের সম্পর্ক। অনেকে বই দেখে, আলোচনা করে এটা একটা ভালো দিক। বিশেষ দিনে প্রিয়জনকে নিয়ে বইমেলায় এসেছে অনেকে, এতে প্রাণ ফিরেছে বইমেলায়।’
মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শরিফুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘পহেলা ফাল্গুন ও ভালবাসা দিবসে বইমেলায় তরুণ-তরুণীদের উপচেপড়া ভীড়। এতে মেলার আকর্ষণ বেড়েছে। বঙ্গবন্ধুকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে বঙ্গবন্ধু কর্নার গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন।’
আযমখান সরকারি কমার্স কলেজের প্রাক্তণ শিক্ষার্থী জুবি ওয়ালিয়া টুই বলেন, ‘খুলনায় বিনোদনের তেমন একটা জায়গা নেই। দুটি দিবস ও সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় অনেকেই বইমেলায় ঘুরতে এসেছে। বিশেষ এইদিনে অনেকে প্রিয়জনকে বই ও ফুল উপহার দিচ্ছেন। যার জন্য বইমেলা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে।’
বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক শেখ আবু আসলাম বাবু মনে করেন, দুটি বিশেষ দিন একসাথে পড়ায় বইমেলায় এতো বেশি লোকসমাগম। এদের মধ্যে ছাত্ররা বেশি। তাদের যেসব বই পছন্দ, সেসব বই না পাওয়ায় বই কেনায় আগ্রহ কম। যার কারণে মেলায় লোকজন বেশি আসলেও বই বিক্রি তেমন একটা বাড়েনি।
লেখক কুঞ্জের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিন কবি-সাহিত্যিকরা এখানে আসেন। আজকের ভালবাসার দিকে তাদের পদচারণায় মেলায় প্রাণের সঞ্চার হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বইমেলায় পাবলিক টয়লেটের সমস্যা রয়েছে। যার কারণে ক্রেতা-পাঠকদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এজন্য তিনি পাবলিক টয়লেট বৃদ্ধির দাবি জানান।
শিক্ষানবীশ আইনজীবী মো. শাহিন আলম বলেন, ‘ভালবাসার দিনে বইমেলায় প্রাণ ফিরেছে। প্রত্যেকের উচিত তার প্রিয়জনকে বই উপহার দেওয়া। তাহলে মেলায় লোকসমাগমের সাথে বই বিক্রিও বেড়ে যাবে।’
সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গণে কথা হয় খুলনা মহানগর যুবলীগের আহবায়ক ও বঙ্গবন্ধু কর্নারের অন্যতম উদ্যোক্তা সফিকুর রহমান পলাশের সাথে। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিনে ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা হিসেবে বইমেলায় লোকসমাগম বেড়েছে। বাঙালীর ঐতিহ্য একটা আরেকটার সাথে জড়িত। ভাষার মাসে বসন্তের ছোঁয়া লেগেছে বইমেলায়। এর মাধ্যমে মানুষ ভাষা শহীদ, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে স্মরণ করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সময়ের সাথে মানুষের রুচি ও চাহিদার পরিবর্তন ঘটে। নতুন প্রজন্মের চাহিদার কথা মাথায় রেখে আমাদের এগোতে হবে। লেখার মধ্যে তারুণ্যকে ধারণ করতে হবে, তাহলেই নতুন লেখকদের সৃষ্টির প্রতি তাদের চাহিদা বাড়বে।’
বঙ্গবন্ধু কর্নারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বই বিক্রি করা আমাদের উদ্দেশ্য না। মুজিববর্ষে যাতে সবার কাছে বঙ্গবন্ধুকে ছড়িয়ে দিতে পারি তাই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে আগামী বছরগুলোতে বড় পরিসরে বঙ্গবন্ধু কর্নার থাকবে।’

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *