May 3, 2024
জাতীয়লেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

বঙ্গবন্ধুর ৫ খুনি এখনও অধরা

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
দশ বছর পর একজনকে পেয়ে আদালতের রায় অনুযায়ী ফাঁসিতে ঝুলানো হলেও এখনও অধরা বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনি। তারা হলেন- আব্দুর রশীদ, শরীফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও এবিএমএইচ নূর চৌধুরী। এর মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরীর কানাডায় অবস্থানের খবর সবার জানা।
তাদের ফেরানোর চেষ্টা চললেও তার কোনো অগ্রগতি নেই। মোসলেম উদ্দিন সম্প্রতি ভারতে ধরা পড়েছেন বলে সেদেশের গণমাধ্যমে খবর বের হলেও তার সত্যতা নিশ্চিত হতে পারেনি বাংলাদেশ সরকার। রশীদ ও ডালিম যে কোথায় আছেন, তার তালাশ এখনও পায়নি দেশের গোয়েন্দারা।
ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) বরাবরের মতোই বলছে, পলাতক খুনিদের আনতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে তারা। এনসিবি কর্মকর্তারা বলছেন, ইন্টাপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ্য গ্রহণের পাশাপাশি খুনিদের আশ্রয়স্থল সম্ভব্য দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। একদল সেনা কর্মকর্তা এই হত্যাকাণ্ডে নেতৃত্ব দিলেও এর পেছনে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা আওয়ামী লীগ নেতারা বরাবরই বলে আসছেন।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের উল্টো যাত্রা শুরু হয়েছিল। খুনিদের বাঁচাতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল, তাদের নানা পদ দিয়ে পুরস্কৃতও করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় ফেরার পর ইতিহাসে চিহ্নিত কালো ওই অধ্যাদেশ বাতিলের পর জাতির পিতার খুনের বিচারের পথ খোলে। এরমধ্যে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী মহিতুল ইসলাম ধানমন্ডি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার তখনকার জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। আপিলের রায়ে এই ১৫ জনের মধ্যে তিনজন খালাস পান। যে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে উচ্চ আদালত, তাদের একজন আজিজ পাশা পলাতক থাকা অবস্থায় দেশের বাইরে মারা যান বলে খবর আসে। বাকি ১১ জনের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ, মহিউদ্দিন আহমদ, এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন বন্দি অবস্থায় আদালতে রিভিউ আবেদন করলে তা খারিজ হয়ে যায়।
এরপর ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ওই পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর হয় ঢাকার কারাগারে। বাকি ছয়জন পলাতক থেকে যান। তার প্রায় ১০ বছর পর এ বছরের ৭ এপ্রিল ভোরে পলাতক ৬ জনের একজন ৭২ বছর বয়সী মাজেদকে ঢাকার গাবতলী থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানায়। তখন গোয়েন্দারা জানান, মাজেদ এতদিন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পালিয়েছিলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর সময় দেশে ফেরেন।
পলাতক মাজেদের আপিলের সুযোগ ছিল না। রাষ্ট্রপতির কাছে তিনি প্রাণভিক্ষার চেয়ে আবেদন করেছিলেন, যা নাকচ হয়ে যাওয়ার পর কেরানীগঞ্জের কারাগারে ১২ এপ্রিল তার ফাঁসি কার্যকর হয়। তখনই কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজারে খবর এসেছিল যে পলাতক বাকি পাঁচজনের একজন রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ভারতে গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়েছেন। এই খবর পেয়ে নড়েচড়ে ওঠে বাংলাদেশ সরকার, ভারতের এনসিবির কাছে চিঠিও দেওয়া হয়।
এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, প্রকাশিত খবরটি সত্য নয়। পলাতকদের মধ্যে রাশেদ চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী কানাডায় অবস্থান করছেন।
রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে সম্প্রতি চিঠিও দিয়েছেন। কিন্তু তার আর কোনো অগ্রগতি নেই। অন্যদিকে আইনি জটিলতার কারণে কানাডা থেকে নূর চৌধুরীকেও ফিরিয়ে আনতে পারছে না বাংলাদেশ। কারণ কানাডা মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী দেশ।
পলাতক বাকি দুজন রশীদ ও ডালিম কোথায়- জানতে চাইলে এনসিবির এআইজি মহিউল ইসলাম বলেন, তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তিনি বলেন, ডালিম পাকিস্তান বা লিবিয়ায় থাকতে পারে। চীন, হংকং, থাইল্যান্ড মতো দেশ গুলোতে থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আব্দুর রশিদ লিবিয়া, জিম্বাবুয়ে বা ইতালিতে অবস্থান করছে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে নিশ্চিত নয়। মোসলেম উদ্দিনের বিষয়ে জানতে চাইলে মহিউল বলেন, ভারত অথবা পাকিস্তানে অবস্থান করছে বলে প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে।

দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *