May 20, 2024
জাতীয়

বঙ্গবন্ধুর খুনি নূরকে ফেরাতে কানাডার আদালতের রায়ের অপেক্ষায় বাংলাদেশ

 

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীর দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কানাডার আদালতে বিচারাধীন একটি মামলায় নভেম্বরে রায় হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ।

তখন মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক এই সেনা কর্মকর্তাকে দেশে ফেরানোর পথ খুলতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। কানাডার আইনে মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত কাউকে ফেরত পাঠানো নিষিদ্ধ থাকার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, তাকে ফেরানোর বিষয়ে বাংলাদেশের চেষ্টার কোনো কমতি নেই।

শুক্রবার রাজধানীতে বিদেশি কূটনীতিকদের সামনে ’১৫ আগস্ট ও বাংলাদেশের উপর এর প্রভাব’ শীর্ষক বিশেষ আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের চার বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবকে সপরিবারে হত্যা করে একদল সেনা সদস্য; আইন করে বিচারের পথও রুদ্ধ করে দেওয়া হয়।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফেরার পর বিচারের পথ খোলে; মামলার পর বিচার শুরু হলেও বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর ফের শ্লথ হয়ে যায় মামলার গতি। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে দণ্ডিত পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয় সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের (আর্টিলারি)।

এছাড়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খন্দকার আবদুর রশিদ, এ এম রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খান পলাতক রয়েছেন। এদের মধ্যে নূর কানাডায়, রাশেদ যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। বাকিদের অবস্থান শনাক্ত হয়নি। সবাইকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা চললেও এখনও কোনো সুফর আসেনি।

পলাতক ছয়জনের বিষয়ে ইন্টারপোল থেকে রেড নোটিস জারি করা আছে। ২০০৯ সালে এই নোটিস জারির পর প্রতি পাঁচ বছর পরপর নবায়ন করা হচ্ছে। নূর চৌধুরী কানাডায় থাকলেও ফাঁসির আসামি বলে তাকে ফেরত দিতে অনীহা দেখিয়ে আসছে দেশটির সরকার; যদিও তাকে ফেরত পেতে বারবার দাবি জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ। এবছরের শুরুর দিকে কানাডার একটি আদালতে নূর চৌধুরীর প্রত্যাবাসনের একটি আবেদনের শুনানি হলেও সেটা আদেশ এখনো হয়নি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কানাডা কোনো তথ্য দেয় না। তারা তাকে ফেরত দিতে অস্বীকার করে আসছে। আমরা এখনও চেষ্টা করে যাচ্ছি। আসছে আদালত আরেকটি আদেশ দেবে। তারপর হয়তো পথ খুলবে। রাশেদ চৌধুরীর ক্ষেত্রেও কোনো অগ্রগতি নেই। বাংলাদেশ তাকে ফেরত চাইলেও যুক্তরাষ্ট্র তা এড়িয়ে যাচ্ছে বারবার।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতের আগে নূর ও রাশেদকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। দুর্ভাগ্যবশত আমরা বাকিদের অবস্থান শনাক্ত করতে পারিনি। পঁচাত্তরের পট পরিবর্তনের পর ঘাতকরা বিদেশে চাকরি পেয়েছে। তাদের শনাক্ত করা কঠিন ছিল।

রাশেদ চৌধুরীকে ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে তার আলোচনা এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে প্রধানমন্ত্রীর চিঠির কথা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আশা করছি শিগগরিই যুক্তরাষ্ট্র একটা সিদ্ধান্তে আসবে; অবস্থান স্পষ্ট করবে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির আয়োজনে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে অনুষ্ঠিত সভায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন, জাপান ও সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের ৩০ জন কূটনৈতিক উপস্থিত ছিলেন।

কমিটির সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির ও দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মি আহমেদ আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন। বঙ্গবন্ধুর (১৯৭৩-৭৫) একান্ত সচিব বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সেসময় বঙ্গবন্ধুর বাসার কর্মী আব্দুর রহমান রামা প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ভয়াল সেই রাতের বর্ণনা দেন।

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *