December 22, 2024
জাতীয়

প্রবাসে নারী শ্রমিক নির্যাতিত হলে মামলা করবে সরকার

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

বিদেশে নারী শ্রমিক নির্যাতনের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে সরকার। এখন থেকে যেকোনো দেশে বাংলাদেশি নারী শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হলে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিকারের ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি দোষীদের বিরুদ্ধে মামলাও করবে সরকার।

ক‚টনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে সৌদি আরবের গৃহকর্মী নির্যাতনের কয়েকটি ঘটনা চলতি বছর বেশি আলোচনায় আসার পরিপ্রেক্ষিতে এই বিষয়ে কঠোর অবস্থায় যাচ্ছে সরকার।

চলতি বছরের প্রায় পুরোটা সময়ই দেশবাসীকে পীড়া দিয়েছে সৌদি ফেরত নারী শ্রমিকদের দুর্বিষহ জীবনের গল্প। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিবাসন নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনগুলো এবং নারী অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীরা সৌদি আরবে নারীকর্মী পাঠানো বন্ধের দাবি তোলে। জাতীয় সংসদেও এ নিয়ে আলোচনা হয়। সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধে সংসদ অধিবেশনে দাবি জানিয়েছেন সংসদ সদস্যরাও।

তবে শুরু থেকেই এ বিষয়ে সতর্ক অবস্থায় ছিল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নির্যাতিত প্রবাসী নারী কর্মীদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে মন্ত্রণালয় দুইটি। প্রবাসে কর্মরত আর কোনো বাংলাদেশি নারী যেন নির্যাতনের শিকার না হয়, সেজন্য দ্রæত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলেছে দুটি সংসদীয় কমিটি।

জানা গেছে, গত ২৫ নভেম্বর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি এবং ২৭ নভেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে দ্রæত পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। প্রবাসে কর্মরত নারী নির্যাতন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল থেকেও। পাশাপাশি নারীদের নিশ্চিন্তে কাজ করতে বলা হয়েছে।

পাশাপাশি কোনো নারী নির্যাতনের শিকার হলে সাথে সাথে পররাষ্ট্র বা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাদী হয় মামলা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস, কনস্যুলেট অফিস এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে ও সমন্বয় করবে। বিষয়টি তদারকি করবে দুটো মন্ত্রণালয়ই।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ফারুক খান বলেন, প্রবাসী নারী কর্মীদের ক্ষেত্রে নির্যাতনের সংখ্যা যেটাই হোক তা বন্ধে দ্রæত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কোনো নারী নির্যাতনের শিকার হলে পররাষ্ট্র বা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে বাদী হয়ে মামলা করতে বলা হয়েছে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, ‘মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন দেশ থেকে বিশেষ করে নারী কর্মীদের ওপর নির্যাতনের খবর আসে। বিষয়গুলো সমাধানে আমাদের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। এ ব্যাপারে সরকারের জিরো টলারেন্সে রয়েছে। তবে এ কথাও মনে রাখতে হবে সরকারের একার পক্ষে সবকিছুর সমাধান সম্ভব নয়। আমরা সমস্যার বিষয়টি স্বীকার করি। সমাধানও করতে চাই।’

বিদেশে নারী শ্রমিক নির্যাতনের বেশি ঘটনা ঘটে সৌদি আরবে। বিষয়টি আমলে নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কাজ করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘ঢাকায় সৌদি আরব দূতাবাসের শার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে ডেকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। সৌদি আরবে বাংলাদেশের যিনি রাষ্ট্রদূত রয়েছেন, তাকেও নির্দেশনা দেযা হয়েছে ওই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি তোলার জন্য। এ ছাড়া দেশটিতে নারী কর্মী পাঠানো রিক্রুট এজেন্সিদের মধ্যে অনিয়মের কারণে ১৬০টির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। ৩টি এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে কোটি টাকার বেশি। এক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান জিরো টলারেন্স।’

তিনি জানান, সৌদি আরবে কর্মরত গৃহকর্মীদের অভিযোগ শুনতে অনলাইন ব্যবস্থা মুসানেদ (সহায়তা) ২০১৫ সাল থেকেই কার্যকর রয়েছে। এ ব্যবস্থায় নির্যাতিত গৃহকর্মীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। পাশাপাশি ফোনেও অভিযোগ করতে পারেন। কিন্তু সৌদি আরব থেকে নির্যাতিত নারীরা দূতাবাসের শেল্টারহোমে অভিযোগ না করে দেশের আত্মীয়দের কাছে অত্যাচারের কথা বলেন। তবে অভিযোগ যেখান থেকে করা হোক, সব অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি আমরা। একইসঙ্গে নারী শ্রমিকদের বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পুরুষ প্রবাসী শ্রমিকরা তাদের আয়ের ৬০ শতাংশ রেমিট্যান্স পাঠালেও সেখানে নারীরা পাঠান ৯০ শতাংশ। দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা এ নারী শ্রমিকদের সর্বোচ্চা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করা হচ্ছে।

২০১৪ সালের জুন থেকে চলতি বছরের ২০ নভেম্বর পর্যন্ত বিশ্বের ৭৪টি দেশে কাজ নিয়ে ৮ লাখ ৬৮ হাজার ৩৬৩ জন নারীকর্মী বিদেশ গেলেও সবচেয়ে বেশি গিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে। দেশটিতে এই পাঁচ বছরে ৩ লাখ ৩০ হাজার ৫৯০ জন নারী শ্রমিক গেছেন। এদের মধ্যে ৮ হাজার কর্মী নির্যাতনের শিকার হয়ে বিভিন্ন সময় দেশে ফিরেছেন। মারা গেছেন ৫৩ জন। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে ৮৫০ জন নারী দেশে ফিরে আসেন।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *