May 20, 2024
জাতীয়

পাস্তুরিত দুধ চার প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার নির্দেশ হাই কোর্টের

 

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

বাজারে থাকা বিএসটিআই অনুমোদিত বিভিন্ন কোম্পানির পাস্তুরিত (প্যাকেটজাত) দুধে অ্যান্টিবায়োটিকসহ ক্ষতিকর কোনো উপাদান আছে কিনা তা চারটি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। একটি রিট আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে রবিবার বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

বিএসটিআই অনুমোদিত পাস্তুরিত দুধে অ্যান্টিবায়োটিক, ডিটারজেন, ফরমালিন, ব্যাকটেরিয়া, কলিফর্ম, অ্যাসিডিটি, স্টা স্টাইফ্লোকোক্কাস ও ফরমালিন আছে কিনা তা পরীক্ষা করে চারটি গবেষণাগারকে এক সপ্তাহের মধ্যে আলাদাভাবে প্রতিবেদন দিতে বলেছে আদালত। আদালত আগামী ২৩ জুলাই পরবর্তী শুনানির জন্য রেখেছে।

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডাইরিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) ও সাভারের বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণাগারে বাজারের এসব দুধ স্বাধীনভাবে পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে বিএসটিআইকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে বাজার থেকে দুধের নমুনা সংগ্রহ করতে বলেছে হাই কোর্ট।

এছাড়া দুধে অ্যান্টিবায়োটিক, ডিটারজেন্ট আছে কিনা তা পরীক্ষার সক্ষমতা অর্জন করতে বিএসটিআইর ল্যাবরেটরির কত সময় ও অবকাঠামো প্রয়োজন সে বিষয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা একই সময়ের মধ্যে আদালতকে জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের নেতৃত্বে দুই দফা গবেষণায় বাজারে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির দুধে অ্যান্টোবায়োটিকের উপস্থিতি ধরা পড়ার পর রবিবার আদালতের এই নির্দেশ এলো।

রিট আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী অনীক আর হক। আদালতে বিএসটিআইর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সরকার এম আর হাসান। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম।

রিটকারী আইনজীবী পরে সাংবাদিকদের বলেন, এ মামলায় মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়কে আট নম্বর বিবাদী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর বাইরে বিএসটিআই যেহেতু বলেছে, তাদের ল্যাবে অ্যান্টিবায়োটিক বা ডিটারজেন্ট পরীক্ষার সক্ষমতা নেই, সে জন্যে চারটি সংস্থার ল্যাবে যেন টোটাল ব্যাকটেরিয়াল কাউন্ট, কলিফর্ম কাউন্ট, স্টাইফ্লোকোক্কাস কাউন্ট, অ্যাসিডিটি কাউন্ট, ফরমালিন কাউন্ট এবং বিশেষ করে ডিটারজেন্ট ও অ্যান্টিবায়োটিক কাউন্ট পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে।

যে চারটি ল্যাবরেটরির কথা বলা হয়েছে, সেসব ল্যাবরেটরির প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বিএসটিআই তাদের অনুমোদিত বাজারের পাস্তুরিত দুধের নমুনা সংগ্রহ করে তাদের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করবে। পরে আলাদা আলাদা রিপোর্ট এক সপ্তাহের মধ্যে কোর্টে জমা দেবে। আগামী ২৩ জুলাই শুনানির তারিখ রেখেছে আদালত।

অনীক আর হক বলেন, পাস্তুরিত দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের মান নির্ধারণ করতে বিএসটিআই গত জানুয়ারিতে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বলে জানিয়েছে। আদালত বলেছে, তাদের কাজ তাদের মত করে চালিয়ে যেতে। এই আদেশের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নাই। ওই কমিটি কী পদক্ষেপ নিয়েছে তাও ২৩ জুলাইয়ের মধ্যে জানাতে বলেছে। কারণ ১৯ জানুয়ারি কমিটি গঠন করা হয়েছে, এখন পর্যন্ত একটিও সভা করতে পারেনি ওই কমিটি।

বিএসটিআই বলেছে, পাস্তুরিত দুধের যে স্ট্যান্ডার্ড সেটি ২০০২ সালে তৈরি করা। সেই স্ট্যান্ডার্ডটিকে এখন রিভাইজ করার সময় এসেছে। কারণ অ্যান্টিবায়োটিকের অভিযোগ আগে ছিল না। প্রফেসর আ ব ম ফারুক নতুন করে এ বিষয়টি জাতির সামনে এনে বিপদে পড়েছেন।

বাজারে থাকা পাস্তুরিত দুধ নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়েরিয়াল ডিজিস রিসার্চ, বাংলাদেশ’র (আইসিডিডিআর,বি) গবেষণা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই গবেষণায় বলা হয়, বাজারে থাকা ৭৫ শতাংশই পাস্তুরিত দুধেই ভেজাল রয়েছে; যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। এই প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ।

এই রিট আবেদনে গত বছর ২১ মে আদালত আদেশে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের নিয়ে কমিটি গঠন করে বাজারের পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিতে খাদ্য ও স্বাস্থ্য সচিব এবং বিএসটিআই’র মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয়।

এই নির্দেশের পর গত ২৫ জুন বিএসটিআই’র আইনজীবী আদালতে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। সেদিন আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনের ওপর কোনো শুনানি না হলেও বিএসটিআই আইনজীবী গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন।

সেদিন তিনি সাংবাদ মাধ্যমকে বলেন, চৌদ্দটি কম্পানির পাস্তরিত দুধে আশঙ্কাজনক বা ক্ষতিকর কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি। তার ওই বক্তব্য উদ্বৃত করে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করলে তা আদালতের নজরে আসে।

ওই দিনই এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ফারুক বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সাতটি প্যাকেটজাত (পাস্তুরিত) দুধের নমুনা পরীক্ষায় সেগুলোতে মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহৃত শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়ার কথা জানান।

এরপর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে ওই গবেষণার সঙ্গে সম্পর্ক নেই বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান। প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তরও তাদের ওই গবেষণা নিয়েই প্রশ্ন তোলে। সরকারি কর্মকর্তাদের পাশে রেখে সংবাদ সম্মেলনে দুগ্ধ ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, এই গবেষণা দেশের দুগ্ধ শিল্পের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক।

এই প্রেক্ষাপটে শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায়ও বাজার থেকে ১০টি নমুনা নিয়ে ১০টিতেই অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়ার কথা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের সদ্য সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ফারুক।

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *