May 18, 2024
জাতীয়

দুই সাংসদসহ ৫১ জনের তালিকা ধরে চলছে দুদকের অনুসন্ধান

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

বর্তমান দুই সংসদ সদস্য, যুবলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের চার প্রকৌশলীসহ ৫১ জনের তালিকা ধরে চলছে অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের কাজ। অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা ও সরকারি প্রকল্পে ঘুষ লেনেদেনের সঙ্গে জড়িতদের সম্পদের উৎস খতিয়ে দেখতেই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এ সিদ্ধান্ত। এছাড়া, খতিয়ে দেখা হচ্ছে তাদের মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত অপরাধও। গতকাল পর্যন্ত ৪৩ জনের নামের তালিকার বিষয়ে দুদকের আনুষ্ঠানিক স্বীকারোক্তির পর আজ আরো আটজনের নাম যোগ হয়েছে বলে দুদকের নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এ বিষয়ে দুদকের সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখ্ত বলেন, আমরা এ পর্যন্ত ৪৩ জনের নামের তালিকা নিয়ে কাজ শুরু করেছি। তবে প্রতিদিনই অভিযোগ আসছে। আজও কয়েকজনের নাম এসেছে। নতুন নতুন নাম যুক্ত হচ্ছে। নামের তালিকা আরো বাড়বে।

আলোচিতদের মধ্যে রয়েছেন- ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এবং চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে সাংসদ সামশুল হক চৌধুরী, জি কে বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী যুবলীগের নেতা গোলাম কিবরিয়া শামীম, তার স্ত্রী শামীমা সুলতানা ও মা-বাবা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, তার বাবা ফয়েজ আহমেদ চৌধুরী, মা সায়েরা খাতুন ও স্ত্রী শারমিন চৌধুরী, গণপূর্তের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ও সাবেক অতিরিক্ত প্রকৌশলী আব্দুল হাই, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে ও নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হালিম, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শোভন-রাব্বানী, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, এনামুল হক ওরফে আরমান, কাজী আনিসুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহŸায়ক মোল­া আবু কাওসার, ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ ও হাবিবুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান, গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক ও তার ভাই থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁইয়া, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি ও কৃষক লীগের নেতা সভাপতি শফিকুল ইসলাম, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূইয়া ও অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহ-সভাপতি মুরসালিক আহমেদ এবং যুবলীগের  বিভিন্ন নেতার আত্মীয় প্রশান্ত কুমার হালদার, আফসার উদ্দীন মাস্টার, আয়েশা আক্তার, শেখ মাহামুদ জোনাইদ, মো. জহুর আলম, এস এম আজমল হোসেন, ব্রজ গোপাল সরকার ও শরফুল আওয়াল প্রমুখ। যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার বিষয়ে শোনা গেলেও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তের কথা দুদক সূত্র নিশ্চিত করেনি।

এর আগে গত ৯ ও ১০ অক্টোবর যথাক্রমে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইউ) প্রধান আবু হেনা মো. রাজী হাসান দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। পৃথক পৃথক সভায় ক্যাসিনো ব্যবসায়ীর তালিকা ও ক্যাসিনোর মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ সম্পদের মালিকদের মানিলন্ডারিং সংক্রান্ত গোয়েন্দা তথ্য হস্তান্তর করেছে বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধান পর্যায়ে এরইমধ্যে দুদকের অনুসন্ধান টিম র‌্যাব, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআইএফইউ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), গণপূর্ত ও গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও সাব-রেজিস্ট্রার অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তর থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছে। বেশকিছু নথি হাতে পেলেও অধিকাংশ নথি এখনো পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে।

১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। অভিযানে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের বেশ কয়েকজন নেতার ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। এর পরপরই তাদের অবৈধ সম্পদের বিষয়টি সামনে আসে। তার পরেই দুদক তফসিলভুক্ত অবৈধ সম্পদের অপরাধ  খতিয়ে দেখতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ শুরু করে। সংস্থাটির পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের টিম অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালন করছে। টিমের অপর সদস্যরা হলেন- উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গির আলম, সালাউদ্দিন আহমেদ, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরি ও মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী।

ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে মাদক-নগদ অর্থসহ নানা কিছু জব্দ করা হচ্ছে। আটককৃতদের মধ্যে জি কে শামীম, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, এনামুল হক আরমান, হাবিবুর রহমান ওরফে মিজান, শফিকুল ইসলাম, লোকমান হোসেন ভূঁইয়া ও সেলিম প্রধান কারাগারে আছেন।

এছাড়া, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে পৃথকভাবে অন্তত ২০ জনের ব্যাংক ও আয়কর নথি যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগেরই লেনদেন স্থগিত (জব্দ) করা হয়েছে। তারা অর্থপাচার করেছেন কি না তা খতিয়ে দেখছে এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্ট সেল (সিআইসি) এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

 

 

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *