May 19, 2024
আঞ্চলিকলেটেস্ট

তরুণ নেতৃত্বের অপেক্ষায় নগর যুবলীগ

 

প্রার্থী হচ্ছেন না বর্তমান আহ্বায়ক, আলোচনায় তিন প্রার্থী

 

জয়নাল ফরাজী

দীর্ঘ সাড়ে ১১ বছর ধরে আহŸায়ক কমিটি দিয়ে চলছে খুলনা মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম। একাধিকবার কমিটি গঠন নিয়ে গুঞ্জন উঠলেও শেষ পর্যন্ত আর নতুন কমিটি গঠন হয়নি। ফলে হতাশ হয়ে পড়েছেন খুলনার যুবলীগের তৃণমূল থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। দীর্ঘদিনের কমিটি বাতিল করে তরুণ নেতৃত্বের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি তাদের। তাদের মতে- নতুন কমিটি গঠন হলে দল আরও উজ্জীবিত হবে, শক্তিশালী হবে সাংগঠনিক কাঠামো।

সূত্র জানায়, ২০০৩ সালের এপ্রিলে মহানগর যুবলীগের সম্মেলনে এ্যাড. আনিসুর রহমান পপলু সভাপতি ও আলী আকবর টিপু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ৫ বছর পর ২০০৮ সালের ৬ জানুয়ারী মহানগর যুবলীগের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ৫১ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটির আহবায়ক মনোনীত হন এ্যাড. আনিসুর রহমান পপলু ও যুগ্ম-আহবায়ক মনোনীত হন এস এম মনিরুজ্জামান সাগর ও হাফেজ মো: শামিম।

ওই কমিটির দু-একজন বাদে সব সদস্য নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। যুগ্ম আহŸায়ক হাফেজ মো: শামিম নগর আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক পদে অধিষ্ঠ হয়েছেন। বর্তমান সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর টিপু হয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক। ফলে এক প্রকার ভেঙ্গে গেছে সংগঠনটির সাংগঠনিক কাঠামো। আর দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে না নতুন নেতৃত্ব।

সূত্রটি আরও জানায়, খুলনা মহানগর যুবলীগের কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা চলছে বেশ কিছুদিন ধরে। সর্বশেষ গত সোমবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত সভায় সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্মেলন আয়োজন করতে কেন্দ্র থেকে স্থানীয় নেতাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সম্মেলনের আভাষ আসার পর থেকে আলোচনায় রয়েছেন প্রবীণ-নবীনের সমন্বয়ে তিনজন প্রার্থী।

এদের মধ্যে সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন বর্তমান যুগ্ম আহŸায়ক এস এম মনিরুজ্জামান সাগর, সদস্য ও নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সফিকুর রহমান পলাশ। সভাপতি হিসেবে বর্তমান আহŸায়ক এ্যাড. সরদার আনিসুর রহমান পপলু’র নাম শোনা গেলেও তিনি প্রার্থী হতে আগ্রহী নন বলে জানান। আর সাধারণ সম্পাদক পদে একমাত্র প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন নগর ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজন।

নগর যুবলীগের যুগ্ম আহŸায়ক এস এম মনিরুজ্জামান সাগর প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এস এম এ রবের হাত ধরে যুবলীগে প্রবেশ করেন। এরপর ২০০৮ সাল থেকে নগর যুবলীগের যুগ্ম আহŸায়কের দায়িত্বে রয়েছেন। গত সিটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করলে বিপুল ভোটে পরাজিত হন।

সভাপতি প্রার্থী সফিকুর রহমান পলাশ ২০০৩ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে নগর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নির্বাহী সদস্যের দায়িত্বেও ছিলেন। ছাত্রলীগের নেতৃত্ব ছাড়ার পর যুবলীগের কর্মকান্ডে নিজেকে সক্রিয় রেখেছেন।

সাধারণ সম্পাদক পদে এখন পর্যন্ত একমাত্র প্রার্থী রয়েছেন নগর ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজন। পরিচ্ছন্ন ছাত্ররাজনীতির প্রতীক হিসেবে পরিচিত শেখ সুজন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের কাছে গ্রহণযোগ্য। তিনি ২০১০ সালে খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১১ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উপ-পাঠাগার সম্পাদক, ২০১৫ সালে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। পারিবারিক দিক থেকেও শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজনের খ্যাতি রয়েছে। তার পিতা বীরমুক্তিযোদ্ধা শেখ শহিদুল হক ষাটের দশকে তুখোড় ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচিত। যিনি খুলনা মহানগর শ্রমিক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ’৭৫ পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হিসেবে তিনি দক্ষিণাঞ্চলের আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন।

সভাপতি প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা সফিকুর রহমান পলাশ বলেন, ‘দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। নেতাকর্মীরা এখন পরিবর্তন চায়। নবীনদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা হলে নগর যুবলীগ আরও বেশি সংগঠিত হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা আমাকে নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই আমি মেনে নেব।’

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ও নগর ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ শাহাজালাল হোসেন সুজন বলেন, ‘আমি ২০১০ সাল থেকে নগর ছাত্রলীগের নেতৃত্বে রয়েছি। এই সময়ে নিজের সাধ্যমতো ছাত্রলীগকে সংগঠিত করেছি। আমি এখন যুবলীগ করতে চাই। আমার পিতা ও ভাইয়ের মৃত্যুর পর শেখ পরিবার ও খুলনার আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা আমার অভিভাবক। যুবলীগের কমিটির বিষয়ে তারা যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই আমি মেনে নেব।’

এদিকে নগর যুবলীগের আহবায়ক আনিসুর রহমান পপলু বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক সেপ্টেম্বর মাসেই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে তার আগ্রহ নেই উলে­খ করে তিনি বলেন, ‘একটি সুন্দর সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে নতুনদের কাছে নেতৃত্ব হস্তান্তর করতে চাই। আমার বিষয়ে শেখ পরিবার এবং সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতারা যা সিদ্ধান্ত নেবেন তাই আমি মেনে নেব।’

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *