May 7, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

ঢাকায় কাউন্সিলর মঞ্জু গ্রেপ্তার অস্ত্র, মাদক ও ওষুধ উদ্ধার

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা ময়নুল হক মঞ্জুকে চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার টিকাটুলিতে তার অফিস ও বাসায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে দুটি পিস্তল, মদ, গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল ও যৌন উত্তেজনা বর্ধক ওষুধ। অভিযানে কাউন্সিলর মঞ্জুর গাড়িচালক সাজ্জাদকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে র‌্যাব-৩  অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফিউল­াহ বুলবুল জানান।

৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মঞ্জু ওয়ারি থানা আওয়ামী লীগের একজন ‘সম্মানীয় সদস্য। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের গত কমিটিতেও সদস্য হিসেবে ছিলেন তিনি। টিকাটুলীর রাজধানী সুপার মার্কেট ও নিউ রাজধানী সুপার মার্কেটে চাঁদাবাজি, অবৈধ দখলদারির পাশাপাশি মাদকের কারবারের অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে খবরের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। অবশ্য তিনি নিজে বরাবরই তা অস্বীকার করেছেন।

স¤প্রতি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী শুদ্ধি অভিযান শুরু হলে নতুন করে তার নাম সামনে আসে। সিটি করপোরেশনের সভায় অনুপস্থিতির কারণে এ সপ্তাহের শুরুতে দক্ষিণ সিটির যে ২১ কাউন্সিলরকে কারণ দর্শাও নোটিস পাঠানো হয়েছে, তাদের মধ্যে মঞ্জু একজন।

র‌্যাব-৩  অধিনায়ক বুলবুল বলেন, কাজী মো. রনি নামে রাজধানী সুপার মার্কেটের একজন ব্যবসায়ী গত বুধবার ওয়ারী থানায় একটি মামলা করেন। তার অভিযোগ, কাউন্সিলর মঞ্জু তার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন এবং ওই টাকা না দেওয়ায় বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়েছেন।

মামলার বিষয়ে জানার পর র‌্যাব অনুসন্ধান চালিয়ে জানতে পারে, ওই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে এ ধরনের আরও অনেক অভিযোগ আছে। এর ভিত্তিতেই আজ তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হয়।

প্রথমে ৩৯ নম্বর কাউন্সিলরের কার্যালয় ঘিরে ফেলে ভেতরে ঢোকে র‌্যাব। সেখান থেকে পিস্তল, মাদক ও যৌন উত্তেজক উদ্ধার করা হয়। এ সময় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি নানা বয়সী মানুষ সেখানে ভিড় করে। মঞ্জুকে র‌্যাব আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর অনেকেই আনন্দ প্রকাশ করেন। এ সময় মিষ্টিও বিতরণ করা হয়।

এরপর মঞ্জুকে সঙ্গে নিয়ে তার হাটখোলার বাড়ীতে অভিযানে যায় র‌্যাব। চারতলা ওই বাড়িতে প্রায় দুই ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে মদ, বিয়ার, মঞ্জুর পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। এছাড়া বেশ কিছু জমির দলিল ও কাগজপত্রও সেখানে পায় র‌্যাব। ভবনের চতুর্থ তলার একটি কক্ষে কাঠের তৈরি একটি বাক্স পাওয়া গেলেও সেখানে কিছু মেলেনি বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা বুলবুল।

বাসায় অভিযান চলার সময় সুমি বেগম নামে এক নারী নিজেকে মঞ্জুর আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বরেন, ঢাকায় মঞ্জুর কেউ থাকে না। স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে প্রায় ১৮ বছর ধরে আমেরিকায় থাকে। মঞ্জু নিজেও নিয়মিত আমেরিকায় যাতায়াত করে।

মঞ্জুর মা মারা যাওয়ার পর তার বাবা আজিজুল হক দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে গোলাপবাগে নিজের বাসায় থাকেন। আর মঞ্জুর বাসায় গাড়িচালক সাজ্জাদ থাকতেন। সেখান থেকেই সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল বুলবুল বলেন, মঞ্জুর বৈধ কোনো আয় নেই। সন্ত্রাস আর চাঁদাবাজিই তার অর্থের উৎস। সেই টাকা সে হুন্ডির মাধ্যমে আমেরিকায় পাঠায় বলেও অভিযোগ আছে।

মঞ্জুকে গ্রেপ্তারের পর আরও অন্তত অর্ধশত অভিযোগ পাওয়া গেছে জানিয়ে এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, গত বুধবার দায়ের হওয়া চাঁদাবাজির মামলাটি ছাড়াও আট কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগে আরও দুটি মামলা রয়েছে এই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে।

হাটখোলার ওই বাসায় অভিযানের সময় দেখা যায়, চারতলা ওই ভবনের সিঁড়ি, গ্যারেজ বেশ অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় রয়েছে। নিচতলায় কেউ নেই, দোতালায় তালা লাগানো।

তবে তিনতলা ও চারতলা নিয়ে গড়ে তোলা ডুপ্লেক্স বেশ ঝকঝকে তকতকে। দামি টাইলস আর আসবাব দিয়ে প্রতিটি কক্ষ সাজানো। প্রায় প্রতিটি ঘরের দেয়ালে সাবেক মন্ত্রীসহ বিশিষ্টজনদের সঙ্গে মঞ্জুর ছবি। স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গেও তার ছবি দেখা যায় এর মধ্যে।

সুমি বেগম জানান, ওই বাড়ি নিয়ে মামলা চলছে। তবে কার সঙ্গে বা কী অভিযোগে মামলা- সে বিষয়ে কোনো ধারণা তিনি দিতে পারেননি।

র‌্যাব-৩ কার্যালয়ের পাশেই ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলের অফিস। ওই অফিসে বসে মঞ্জু কীভাবে সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজি করে আসছিলেন জানতে চাইলে বুলবুল বলেন, শুধু গ্রেপ্তার করলেই তো হবে না। সাক্ষ্য-প্রমাণ লাগবে। এখনই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উপযুক্ত সময়।

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *