May 5, 2024
আঞ্চলিকলেটেস্ট

ডা. রকিব হত্যার প্রতিবাদে খুলনায় সকল চিকিৎসা সেবা বন্ধ ঘোষণা

* সকল সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও সদর থানা’র ওসির প্রত্যাহার দাবি
* খুমেকের জরুরী সেবা ও করোনা হাসপাতাল চালু রাখার ঘোষণা

দ. প্রতিবেদক
খুলনা মহানগরীর গল্লামারীস্থ রাইসা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগণস্টিকের পরিচালক ডা. আব্দুর রকিব খানের হত্যার প্রতিবাদে হামলার সাথে জড়িত সকল সন্ত্রাসী গ্রেফতার ও সদর থানার ওসি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত খুলনা জেলার সকল চিকিৎসা সেবা বন্ধ ঘোষণা করেছেন চিকিৎসকরা। তবে চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকলেও কোভিড-১৯ হাসপাতাল ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী সেবা চালু রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনা শাখার জরুরী সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পরে দুপুর ১টায় নগরীর সাতরাস্তা মোড়স্থ শহীদ ডা. মিলন চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।


বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা করোনা মহামারীর এই দুর্যোগে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা একজন চিকিৎসকের উপর এই ধরনের ন্যাক্কারজনক বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলা করে চিকিৎসক হত্যা করার ঘটনায় খুলনা বিএমএ’র পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবী করেন। অভিযোগ ও মামলা গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করায় বক্তারা খুলনা সদর থানার ওসির প্রত্যাহার দাবী করেন। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে চিকিৎসকদের কর্মস্থলের নিরাপত্তার জোর দাবী জানান।
এরআগে বিএমএ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জরুরী সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- হামলার সাথে জড়িত সকল সন্ত্রাসী গ্রেফতার হয়ে দ্রুত বিচার আইনে শাস্তি নিশ্চিতকরণ ও সদর থানার ওসি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত খুলনা জেলার সকল চিকিৎসা সেবা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শুধুমাত্র কোভিড-১৯ হাসপাতাল ও খুলনা মেডিকেল কলেজ এর জরুরী সেবা চালু থাকবে। খুলনা বিএমএ, বিপিএমপিএ ও বিপিএইচসিডিওএ অফিসসহ সকল স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা উত্তোলন এবং সকল চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কালো ব্যাচ ধারণ করার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
সভায় আজ বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকদের বিভিন্ন দাবী তুলে ধরার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় খুলনা বিএমএ’র সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মোঃ মামুনূর রশিদকে আহবায়ক, ডা. মোঃ সওকাত আলী লস্করকে যুগ্ম আহবায়ক, ডা. সুমন রায়কে সদস্য সচিব এবং ডা. ইউনুচ উজ্জামান খাঁন তারিম, ডা. দেবনাথ তালুকদার রনি, ডা. এস এম তুষার আলমকে সদস্য করে আন্দোলন মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়।
খুলনা বিএমএ’র সভাপতি ও সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলমের এর সভাপতিত্বে খুলনা বিএমএ’র প্রচার ও জন-সংযোগ সম্পাদক ডা. সুমন রায় এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখের খুলনা বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডা. মোঃ মেহেদী নেওয়াজ, যুগ্ম সম্পাদক ডা. বঙ্গ কমল বসু, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মোঃ মামুনূর রশিদ, কার্যকরী পরিষদের সদস্য ডা. ইউনুচ উজ্জামান খাঁন তারিম, ডা. দেবনাথ তালুকদার রনি, খুলনা বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. রাশেদা সুলতানা, খুলনা মেডিকেল কলেজ এর অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আহাদ, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুন্সি মোঃ রেজা সেকেন্দার, খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ, খুলনা বিপিএমপিএ ও বিপিএইচসিডিওএ এর সাধারণ সম্পাদক ডা. মোঃ সওকাত আলী লস্কর প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, নগরীর মোহাম্মদ নগরের পল্লবী সড়কের বাসিন্দা আবুল আলীর স্ত্রী শিউলী বেগমকে ১৪ জুন সিজারের জন্য রাইসা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ওই দিন বিকেল ৫টায় অপারেশন হয়। বাচ্চা ও মা প্রথমে সুস্থ ছিলেন। পরে রোগীর রক্তক্ষরণ হলে ১৫ জুন সকালে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানের চিকিৎসকরাও রোগী রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে না পেরে ঢাকায় রেফার্ড করেন। ঢাকায় নেওয়ার পথে ১৫ জুন রাতে শিউলী বেগম মারা যান।
এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে রোগীর স্বজনরা ১৫ জুন রাত ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে ডা. রকিবকে লাথি ঘুষি ও লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এতে তার মাথার পেছনে জখম হয়। তাকে প্রথমে গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে শেখ আবু নাসের হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
ডা. আব্দুর রকিব খান রাইসা ক্লিনিকের পাশাপাশি বাগেরহাট মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) অধ্যক্ষও ছিলেন। এছাড়া সিনিয়র এ চিকিৎসক বিসিএস স্বাস্থ্য প্রশাসনে পরিচালক পদমর্যাদায় চাকরি করতেন। বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনার আজীবন সদস্য ছিলেন তিনি।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *