April 27, 2024
জানার আছে অনেক কিছুলেটেস্ট

জাপানের মানুষজন [Japanese People, 日本人] – প্রফেসর ড. মো: মতিউল ইসলাম

রাগ ও অভিমান ছাড়া কি মানুষ হয়!? জাপানিজদেরও ‘রাগ’ আছে। রাগ থেকে রোপিত হয় শত্রুতার বীজ! আজ জাপানিজদের ‘শত্রুতা’ নিয়ে বলবো…

৭। আদা (あだ) [শত্রুতা] {enemy : revenge}

কে বেশি ক্ষমতাবান? সরকার না-কি ব্যক্তি?

এর উত্তর একেক দেশে একেক রকম হবে! জাপানে এর উত্তর, ‘লিগ্যাল’ হলে ব্যক্তির ক্ষমতা বেশি! তোইচি শিতো (Toichi Shito) ছিলেন এরকম একজন ক্ষমতাবান কৃষক! তাঁর উত্তরাধিকারী তাকাও শিতো (Takao Shito) এখনও সেই ক্ষমতা বহাল তবিয়তে চর্চা করে যাচ্ছেন! এয়ারপোর্টের মাঝখানে বিশাল কৃষি ফার্ম রেখে কৃষি কাজ করে যাচ্ছেন।

টোকিওর হানেদা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে স্থান সংকুলান না হওয়ার জন্য জাপান সরকার টোকিও সংলগ্ন স্থানে (প্রায় ৬০ কি.মি. দূরে) নতুন আরেকটি এয়ারপোর্ট (নারিতা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট) নির্মাণ করার কথা চিন্তা করলো। ১৯৬৫ সালে চিবা প্রিফেকচারের ‘তোমিসাতো’ গ্রামে এয়ারপোর্টটি স্থাপন করার চিন্তা করা হয়! পরে ১৯৬৬ সালে পরিকল্পনা ঈষৎ পরিবর্তন করে একই প্রিফেকচারের ‘সানরিযুকা’ ও ‘শিবাইয়ামা’ (‘তোমিসাতো’ থেকে ৫ কি.মি. দূরে) গ্রামে এয়ারপোর্টটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। সরকার পরিকল্পনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্থানীয় গ্রামবাসীদের সাথে আলোচনা করে মতামত নেওয়াকে অগ্রাহ্য করেছিলো! স্থানীয় কৃষিজীবী গ্রামবাসী এতে খুবই রাগ করলেন। তাঁরা তাঁদের কৃষিজমি উন্নয়নের নামে অধিগ্রহণ হতে দিতে চাইলেন না! সরকার বুঝানোর চেষ্টা করলো। অনেকেই সরকারের প্রস্তাব মেনে নিয়ে জমি ছেড়ে দিলেন। কিন্তু ‘তোইচি শিতো’ জমি ছাড়লেন না! তাঁর জমিটুকু মাঝখানে অক্ষত রেখেই জাপান সরকার ‘নারিতা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট’ নির্মাণ করতে বাধ্য হলো। এয়ারপোর্ট ১৯৭৮ সালে চালু হলো।

‘তোইচি শিতো’ এখন আর বেঁচে নেই। আছেন তাঁর উত্তরাধিকারী ‘তাকাও শিতো’। তিনি তাঁর পূর্বপুরুষের পূর্বানুমতি না-নিয়ে এয়ারপোর্ট নির্মাণে জমি নেওয়ার সরকারী ঔদ্ধত্যে পাওয়া পূর্বপুরুষের কষ্ট পুষে রেখেছেন। সরকারের ১.৬ মিলিয়ন ইউএস ডলার অফার-মূল্য অগ্রাহ্য করে তিনি ১০ জন স্বেচ্ছাসেবক কৃষককে (যাঁরা কৃষিজমিতে নারিতা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট হওয়ার বিরধিতা করেছিলেন এবং এখনও করেন) সাথে নিয়ে বিশাল কৃষি ফার্মে কৃষি কাজ করে যাচ্ছেন, এক্কেবারে এয়ারপোর্টের পেটের মধ্যে! সরকার তাঁর রাস্তা-ঘাট, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির সংযোগ, টেলিফোন লাইন সবকিছুই অক্ষত রাখতে বাধ্য হয়েছে!

পূর্বপুরুষের কষ্ট জাপানিজ উত্তরাধিকারীরা পুষে রাখেন। প্রিয়জনকে অন্য কেউ কষ্ট দিলে তাও ব্যক্তিগতভাবে নিজ কষ্ট হিসেবে গোচরে নিয়ে নেন ও পুষে রাখেন। যখন তাঁর ‘দিন’ আসবে তখন তিনি ঠিকই প্রতিশোধ নিয়ে নেবেন! এই হলো জাপানিজদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য! এই বৈশিষ্ট্যের নাম ‘আদা (あだ) [শত্রুতা] {enemy : revenge}’।

‘Ada’ means enemy or foe and refers to someone who has harmed you, your kindred, or those who are close to you. The Japanese take it personally when their kindred, lover, or friends have been harmed by someone, as if they themselves were harmed, and would try to save the souls of their loved ones. প্রাচীন জাপানে ‘revenge killing’ স্বীকৃত ছিলো।

তাহলে বুঝা যাচ্ছে যে, জাপানিজরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা নিশ্চয় ভুলে যায়নি! ভুলে যাওয়ার কথা নয়…

৮। উচি তো সোতো (うちとそと) [ঘর ও বাহির] {behave differently in and out}

আমাদের দেশে আমরা তিনরকম সম্বোধন ব্যবহার করি! ছোট ও সমবয়সী হলে ‘তুই’; সমবয়সী ও ছোট/বড় কিন্তু খুব কাছের মানুষ হলে ‘তুমি’; বয়সে বড়, অপরিচিত ও সম্মানের সম্পর্ক হলে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করি! জাপানেও অনেকটা এইরকম কালচার (সংস্কৃতি) আছে। যেমন- একই অর্থের বাক্য সম্মান ও সম্পর্কের স্তরভেদে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রকাশিত হয়ঃ Can you see it? (তুই কি দেখতে পাচ্ছিস?) [みえるか?] {mieruka?}; Can you see it? (তুমি কি দেখতে পাচ্ছো?) [みえますか?] {miemasuka}; Do you see it? (আপনি কি দেখতে পাচ্ছেন?) [ごらんになりますか?] {goranninarimasuka?}। জাপানে একই শব্দের চারটা পর্যন্ত ফর্ম (Honorific) আছে- dictionary form (দেখা শব্দ) [見る (miru)], polite [見ます (mimasu)], respectful [ご覧になる (go-ran ni naru)] ও humble [拝見する (haiken suru)]।

বেশি বেশি গ্রামাটিক্যাল আলোচনা হয়ে যাচ্ছে! সহজ কথায় যেটা বলা যায় তা হচ্ছেঃ সম্বোধনের মতোই জাপানে ঘরে ও বাহিরে আচরণের রকমফের (ফর্ম) ভিন্ন ভিন্ন! এটাকেই বলে “উচি তো সোতো (うちとそと) [ঘর ও বাহির] {behave differently in and out}” সংস্কৃতি। The Japanese people consider the group they belong to as ‘uchi-উচি’ (inside) and everything else as ‘soto-সোতো’ (outside), and behave according to different codes of conduct in each sphere. ক্ষেত্রের ভিন্নতা অনুযায়ী আচরণের পরিবর্তনের এই ‘সীমারেখা’ নির্ণীত হয়। যেমনঃ ‘mi-uchi (মি-উচি) – internal group’ হচ্ছে পরিবার, কোম্পানি (যেখানে তিনি কাজ করেন), আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, এবং অন্যরা যারা একই রকম ‘উদ্দেশ্য ও মূল্যবোধ’ এর অনুসারী! এর বাইরের যারা তাঁদের সঙ্গে ও তাঁদের কাছ থেকে জাপানিজরা ‘formal or public code of conduct’ নিজে করেন ও পাওয়ার প্রত্যাশা করেন।

একটা ছোট্ট অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি। আমার পিএইচডি রিসার্চ সুপারভাইজার যেদিন আমাকে ‘মতিউল-কুন (くん)’ বলে ডাকতেন সেদিন আমার মনটা অন্যরকম ফুরফুরে থাকতো! পরিবারের বয়ঃকনিষ্ঠ (বয়সে ছোট) [‘mi-uchi (মি-উচি) – internal group’] পুরুষ সদস্যদের আদর করে ‘কুন (くん)’ আর মেয়েদের ‘চান-ちゃん’ ডাকা হয়।

কারও আপন হতে কে-না চায়, বলেন!

 

শেয়ার করুন: