May 5, 2024
জাতীয়

জঙ্গিদের ‘কালো টুপি’ কারাগার থেকেই এসেছে, দাবি পুলিশের

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

গুলশানের হলি আর্টিজান হামলায় মামলার রায়ের পরপরই আদালত চত্বরে সাজাপ্রাপ্ত তিন জঙ্গির মাথায় যে ‘কালো টুপি’ দেখা গেছে, তা কারাগার থেকে তারা নিয়ে এসেছিল বলে প্রাথমিক তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে দাবি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

তদন্ত কমিটির প্রধান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ‘টুপিগুলো তাদের (জঙ্গিদের) পকেটেই ছিল। কারাগার থেকে জঙ্গিদের নিয়ে আসার সময় ব্যাপক নিরাপত্তা ছিল। বাইরে থেকে টুপি সংগ্রহ করার সুযোগ নেই। পরে তারা পকেট থেকে টুপিগুলো বের করে মাথায় দিয়েছিল।’

গত বুধবার আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর গুলশান হামলার রায়ে সাত জঙ্গির ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। একজনকে খালাস দেওয়া হয়। রায় শোনার পর পরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সামনে আদালত চত্বরে তিন জঙ্গি কালো টুপি পরিধান করে স্লোগান দিতে থাকে। টুপিতে আরবি হরফে লেখা ছিল।

গণমাধ্যম এই টুপিকে ‘আইএস টুপি’ বলে অভিহিত করেছে। যদিও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা দাবি করেছেন, তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএসের কোনো টুপি নেই। তবে আইএস কালো পতাকা বহন করে এবং সেই পতাকায় আরবি হরফে লেখা থাকে। বিশ্লেষকদের ধারণা, হয়তো জঙ্গিরা কালো কাপড়ের টুপিতে আরবি লেখা দিয়ে তাদের বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

এ ঘটনাটি তাৎক্ষণিকভাবে গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে জঙ্গিরা কীভাবে এই টুপি সংগ্রহ করল এবং আদালত চত্বরে পড়ল, তা নিয়ে শুরু হয় জল্পনা-কল্পনা। কেউ কেউ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দ্রুততার সঙ্গে বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য নির্দেশ দেন। পাশাপাশি পুলিশের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। মো. মাহবুব আলমের নেতৃত্বে কমিটির বাকি দুই সদস্য হচ্ছেন ডিবি পুলিশের ঢাকা উত্তর শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান ও ডিবির এডিসি (আইএডি)।

গতকাল শুক্রবার মো. মাহবুব আলমের সঙ্গে এনটিভি অনলাইনের বিষয়টি নিয়ে কথা হলে তিনি এই তথ্য জানিয়ে আরো বলেন, ‘তদন্ত শেষ করে দ্রুতই প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা করব আমরা। আমরা সবকিছু যাচাই করছি।’

অন্যদিকে কমিটির অপর সদস্য ডিবি উত্তরের উপকমিশনার মশিউর রহমান বলেন, ‘আমরা ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে জঙ্গিদের নিয়ে আসার পর থেকে বের করা পর্যন্ত সব সময়ের সিসিটিভির ফুটেজ দেখেছি। আদালত প্রাঙ্গণ থেকে জঙ্গিদের কাছে আইএসের টুপি দেওয়া হয়েছে এমন ঘটনা কোথাও আমরা পাইনি। আমরা তদন্ত করছি। প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করছি।’

এর আগে ঘটনার দিন এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকার জেল সুপার মাহবুব ইসলাম বলেছিলেন, ‘জঙ্গিদের যখন জেল থেকে বের করা হয়, তখন তাদের কাছে আইএসের কোনো ধরনের টুপি ছিল না। একজন বের হয়েছে গোল সাদা টুপি পরিহিত অবস্থায়। বাকি সাতজনের কাছে কোনো অবস্থাতেই টুপি ছিল না। দায়িত্বরত অফিসাররা তাদেরকে পূর্ণ তল­াশি সম্পন্ন করে প্রিজনভ্যানে তুলেছেন। আমাদের কাছে সিসিটিভির ফুটেজ এবং ভিডিও ফুটেজ আছে। চাইলে আপনি দেখবে পারেন।’

তাহলে আপনি বলতে চাচ্ছেন জেল থেকে বের করার পর তাদের কাছে টুপি দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে মাহবুব ইসলাম বলেন, ‘অবশ্যই তাই।’

গত বুধবার গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা মামলার রায় ঘোষণা উপলক্ষে আট আসামিকে সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে হাজিরের সময় আসামিদের মুখে হাসি ছিল। এর পরে তাদের আদালতের হাজতখানায় কড়া নিরাপত্তায় রাখা হয়। তবে আসামিদের আদালতের হাজিরের সময় তাদের মাথায় কোনো ধরনের টুপি দেখা যায়নি।

এরপর দুপুর ১২টার পর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান হলি আর্টিজানের মামলায় রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। একই সঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দেওয়া হয়।

এরপর আদালতের এজলাসে আসামিদের কাঠগড়ায় থাকা আসামি জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের লোগোযুক্ত কালো টুপি পরে ‘আল­াহু আকবর’ বলে ধ্বনি দেয়। একই সময় আসামি রাকিবুল হাসান রিগ্যান ও মো. শরিফুল ইসলাম খালেদ একই ধরনের টুপি পরে। এরপর তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় মো. আবদুস সবুর খান নামের আসামি এক আইনজীবীকে হত্যার হুমকি দেয়।

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *