May 11, 2024
আন্তর্জাতিকলেটেস্ট

চীনের অর্থনৈতিক উন্নতির ইতিহাস, বর্তমান প্রবণতা, ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ: যুক্তরাষ্ট্রের উপর এর প্রভাব

Wayne M. Morrison এর China’s Economic Rise: History, Trends, Challenges, and Implications for the United States শীর্ষক প্রতিবেদন অবলম্বনে লিখেছেন দ্বৈতা স্বপ্নাশিষ দ্বীপি

প্রায় ৪০ বছর আগের কথা। অর্থনৈতিক সংস্কার এবং বাণিজ্য উদারীকরণের সূচনা চীন তখনো শুরু করেনি। এমন নীতি চীন বজায় রেখে অগ্রসর হচ্ছিল, যা দেশটির অর্থনীতিকে অত্যন্ত দরিদ্র, স্থবির, কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত, ব্যাপকভাবে অদক্ষ এবং বৈশ্বিক অর্থনীতি থেকে তুলনামূলকভাবে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। ১৯৭৯ সালে বিদেশী বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত এবং মুক্ত-বাজার সংস্কার বাস্তবায়ন শুরু করে চীন। ঠিক তারপর থেকে চীন বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতির মধ্যে রয়েছে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রকৃত বার্ষিক মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধির গড় হার ছিল ৯.৫%। সারা বিশ্বের মানুষ এটাকে আখ্যা দেয় “ইতিহাসের একটি প্রধান অর্থনীতির দ্রুততম টেকসই সম্প্রসারণ” হিসেবে। এই ধরনের প্রবৃদ্ধি চীনকে গড়ে প্রতি আট বছরে তার জিডিপিকে দ্বিগুণ করে তুলতে সক্ষম করেছে এবং আনুমানিক ৮০০ মিলিয়ন মানুষকে তারা এর  মাধ্যমে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে পেরেছে। ক্রয় ক্ষমতা সমতার ভিত্তিতে চীন বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। শুধু তাই না, দেশটি বিশ্বের সর্ববৃহত্তম প্রস্তুতকারক, পণ্য ব্যবসায়ী। দেশটি বিশ্বে সবচেয়ে বৃহৎ বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ধারক। এর ফলে চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে উঠেছে। চীন হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার, আমদানির সবচেয়ে বড় উৎস এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানি বাজার। চীন হল ইউএস ট্রেজারি সিকিউরিটিজের বৃহত্তম বিদেশী ধারক, যা ফেডারেল ঋণ তহবিল এবং মার্কিন সুদের হার কম রাখতে সাহায্য করে।

যেহেতু চীনের অর্থনীতি পরিপক্ক হয়েছে, তার প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, ২০০৭ সালের ১৪.২% থেকে ২০১৮% সালে সেটি ৬.৬% হয়েছে এবং সেই প্রবৃদ্ধি ২০২৪ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর প্রক্ষেপণ মোতাবেক ৫.৫%-তে নেমে আসবে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ চীনা সরকার মন্থর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গ্রহণ করে, এটিকে “নতুন স্বাভাবিক” অবস্থা হিসাবে উল্লেখ করেছে। পাশাপাশি, চীন তার একটি নতুন প্রবৃদ্ধির মডেল গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছে, যা স্থির বিনিয়োগ এবং রপ্তানির উপর কম নির্ভর করবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি চালানোর জন্য ব্যক্তিগত খরচ, পরিষেবা এবং উদ্ভাবনের উপর বেশি নির্ভর করবে। একটি দেশ যখন নির্দিষ্ট একটি অর্থনৈতিক স্তর অর্জন করে কিন্তু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার তীব্রভাবে হ্রাস পেতে শুরু করে। অথচ, তারা উদ্ভাবনের মতো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন উত্স গ্রহণ করতে অক্ষম হয়। এটাকে বলে মিডল ইনকাম ট্রাপ। চীন নিজেকে “মধ্যম আয়ের ফাঁদে” আটকে যাওয়া এড়াতে এই ধরনের সংস্কার হাতে নিয়েছে।

চীন সরকার তার অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় উদ্ভাবনকে একটি উচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে রেখেছে। যেমন “মেড ইন চায়না ২০২৫,” একটি পরিকল্পনা যা তারা ২০১৫ সালে ঘোষণা করেছিল। তারা ১০টি প্রধান খাতে ব্যাপক সরকারি সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে চীনের ম্যানুফ্যাকচারিংকে আপগ্রেড ও আধুনিকীকরণ করবে। উদ্দেশ্য, এই খাতে চীনকে একটি প্রধান বৈশ্বিক খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তোলা। যাইহোক, এই ধরনের পদক্ষেপগুলি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগকে এই মর্মে উত্থাপন করেছে যে, চীন বিদেশী প্রযুক্তির উপর দেশের নির্ভরতা হ্রাস করার জন্য তার শিল্প নীতিকে ব্যবহার করতে চায় (চীনে বিদেশী সংস্থাগুলিকে লক আউট করাসহ) এবং অবশেষে বিশ্ব বাজারে তারা আধিপত্য বিস্তার করতে চায়।

২০১৭ সালে, ট্রাম্প প্রশাসন চীনের উদ্ভাবন এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি নীতিগুলির একটি ধারা ৩০১ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছিল, যা মার্কিন অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য ক্ষতিকারক বলে পরে বিবেচিত হয়। এটি পরবর্তীতে চীন থেকে ২৫০বিলিয়ন ডলার মূল্যের আমদানির উপর ২৫% শুল্ক বাড়িয়েছে, যখন চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে $১১০ বিলিয়ন মূল্যের আমদানির উপর শুল্ক বাড়িয়েছে (৫% থেকে ২৫% পর্যন্ত)। এই ধরনের পদক্ষেপগুলি ২০১৯ সালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে তীব্রভাবে হ্রাস করেছে৷ ১০ মে, ২০১৯ তারিখে, রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন যে, তিনি চীন থেকে প্রায় সমস্ত অবশিষ্ট পণ্যের উপর শুল্ক বাড়ানোর কথা বিবেচনা করছেন৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে একটি দীর্ঘায়িত এবং ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য সংঘাত চীনা অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক পরিণতি হতে পারে বলে অনেকে মনে করেন।

চীনের ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রভাব এবং এটি বজায় রাখা অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য নীতিগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে এবং তাই এখন এটি কংগ্রেসের জন্য প্রধান আগ্রহের বিষয়। যদিও চীন মার্কিন সংস্থাগুলির জন্য একটি বৃহৎ এবং ক্রমবর্ধমান বাজার, একটি মুক্ত-বাজার অর্থনীতিতে এর অসম্পূর্ণ রূপান্তরের ফলে অর্থনৈতিক নীতিগুলি মার্কিন অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর বলে বিবেচিত হয়েছে, যেমন শিল্প নীতি এবং মার্কিন বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি৷

Wayne M. Morrison তাঁর China’s Economic Rise: History, Trends, Challenges, and Implications for the United States শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে চীনের অর্থনৈতিক উত্থানের পটভূমি বর্ণনা করেছেন। বিস্তারিত ধারণা দিয়েছেন চীনের বর্তমান অর্থনৈতিক কাঠামো সম্পর্কে। পাশাপাশি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে চীন যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হচ্ছে, তা চিহ্নিত করেছেন। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চীনের অর্থনৈতিক উত্থানের চ্যালেঞ্জ, সুযোগ এবং প্রভাব নিয়ে তার আলোচনাটি অন্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে

শেয়ার করুন: