খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্পে অগ্রগতি কম, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
‘খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পে অগ্রগতি কম। এটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন গতি কম হওয়ার কারণ খুঁজে বের করার নির্দেশনা দিয়েছেন। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দূর করতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়গুলো রিভিউ করতেও বলেছেন।
মঙ্গলবার দুটি প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দিতে গিয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান একনেক সভা শেষে ভার্চ্যুয়াল ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, দুটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিলম্ব হওয়ায় ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেইসঙ্গে সমন্বয়হীনতা দূর করে সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, সড়ক প্রশস্তকরণে ১০৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে। সেইসঙ্গে মেয়াদ বেড়েছে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ফলে ৯৮ কোটি টাকার প্রকল্পে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। এছাড়া দুই বছরের প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় যাচ্ছে সাড়ে সাত বছর। খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বিদ্যমান সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন, রূপসা ব্রিজ অ্যাপ্রোচ সড়ক থেকে খুলনা শহরে প্রবেশের জন্য স্বল্পতম দূরত্বের সড়ক নির্মাণ, যোগাযোগ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও যানজট হ্রাস পাবে।
শুরু থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় ব্যয় হয়েছে ৮৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৩০ শতাংশ। অগ্রগতি অনেক কম হলেও পাঁচ কারণে প্রকল্পটি সংশোধন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো- ভূমি অধিগ্রহণের পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধি, সড়কের ডিজাইন পরিবর্তন, সর্বশেষ রেট সিডিউল অনুযায়ী ব্যয় প্রাক্কলন, নতুন অঙ্গ অন্তভুক্তি এবং মেয়াদ বৃদ্ধি। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ১৯ জুন অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করার পর একনেকে উপস্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়। মূলত এটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দিতে গিয়েই ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এটি রিভিউ করতে নির্দেশ দিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনকে।
এদিকে, সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন পাওয়া লাঙ্গলবন্দ-মিনারবাড়ী পর্যন্ত সড়ক উন্নয়নে ব্যয় বাড়ছে ১১৪ দশমিক ২০ শতাংশ। সেইসঙ্গে মেয়াদও বাড়ছে আড়াই বছর। ‘লাঙ্গলবন্দ-কাইকারটেক-নবীগঞ্জ জেলা মহাসড়কের লাঙ্গলবন্দ থেকে মিনারবাড়ী পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ’ প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সময় ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ১২১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এখন প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বাড়িয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬০ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ব্যয় বেড়েছে ১১৪ দশমিক ২০ শতাংশ। এছাড়া প্রকল্পের মূল অনুমোদিত মেয়াদ ছিল ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত। এরইমধ্যে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই এক বছর বাড়িয়ে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু এতেও শেষ না হওয়ায় এখন নতুন করে আড়াই বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান জানান, এ প্রকল্পে মূল কাজের বাইরে বাংলো বা টুরিস্টদের জন্য হোটেল করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মূল কাজটাই করুন। অর্থাৎ রাস্তা প্রশস্তকরণ ও ঘাটলা নির্মাণ। এছাড়া চায়ের দোকান যা প্রয়োজন হবে, তা বেসরকারিভাবে ব্যবসায়ীরা করবেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রকল্প চলাকালীন আইডিয়া ওয়ালা এসে নতুন নতুন আইডিয়া যোগ করেন। এটা আর করা যাবে না। এতে করে প্রকল্পের কাজের গতি কমে যায়। এছাড়া উপকূলীয় এলাকায় রাবার ড্যাম নির্মাণে সাবধানতা অবলম্বন করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ