May 6, 2024
আঞ্চলিক

খুলনায় প্রশাসনের পরিচয়ে তুলে নেওয়ার ১৫ দিন পরেও যুবকের খোঁজ মেলেনি

দ: প্রতিবেদক

প্রশাসনের পরিচয় দিয়ে বাসা থেকে নিয়ে যাওয়ার পনের দিন পরও নিখোঁজ মনিষ সাহা (২৮)। অসহায় দরিদ্র পিতা মনোরঞ্জন সাহা প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরলেও পাচ্ছেন না কোন সন্ধান। এরই মধ্যে মনোরঞ্জন সাহা পুত্রের নিখোঁজ এর কথা জানিয়ে খুলনা রূপসা থানায় জিডি করেছেন। লিখিত আবেদন দিয়েছেন পুলিশ সুপার, ডিআইজি খুলনা রেঞ্জ, পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়, র‌্যাব-৬ এর কার্যালয় ও জেলা প্রশাসক বরাবরও।

মনোরঞ্জন সাহা জানান, তিনি নগরীর জেলখানা ঘাটে বিড়ি সিগারেট বিক্রি করেন। থাকেন রূপসা উপজেলার আইচগাতি ইউনিয়নের বার পূর্ণের নবপল্লী রোডের মোঃ মিজানুর রহমানের বাড়ীতে ভাড়াটিয়া হিসাবে। তার গ্রামের বাড়ী বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জ থানার জয়পুর গ্রামে। তার দুই সন্তান বড় সন্তান মনিষ সাহা (২৮), ছোট সন্তান মিঠুন সাহা (২২)। বড় ছেলে খুলনা মহানগরের বড় বাজারের দোকানে কাজ করতেন। বড় ছেলে আর সে আইচগাতি ইউনিয়নের ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তার ছোট ছেলে ও স্ত্রী বাগেরহাটের মোড়ল গঞ্জে থাকে। ছোট ছেলে মিঠুন সাহা বাগেরহাটে থাই বেবি প্রোডাক্টে ডেলিভারিম্যান হিসাবে কাজ করে।

মনোরঞ্জন সাহা জানান, গত ০১ অক্টোবর তারিখ ভোর রাতে কিছু লোক সাদা পোষাকে এসে আমার আইচগাতি বাসা থেকে প্রশাসনের পরিচয় দিয়ে আমার বড় ছেলে মনিষ সাহাকে ধরে নিয়ে যায়। আর বলে তার মোবাইল দিয়ে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। তারা দুটি মাইক্রোবাসে করে নিয়ে আসে।

নিখোঁজ মনিষ সাহা’র ছোট ভাই মিঠুন সাহা জানান, পরে খোঁজ খবর নিয়ে জানাযায়, ঐ দিন এলাকা থেকে আরো একজনকে তুলে নেওয়া হয়েছে তার নাম মনিরুল। মনিরুল এর বাসা চেনার জন্য আরো দুজনকে বাড়ি থেকে তুলে নেয় তারা। তারা হলেন মোস্তফা ও আসিফ। মনিরুলকে ধরার পর মনিষ ও মনিরুলকে নিয়ে প্রশাসনের লোক গাড়ি নিয়ে চলে যায় জানান মোস্তফা ও আসিফ।

কিন্তু জেলা ডিবি অফিস, জেলা পুলিশ সুপার, রূপসা থানা, রেঞ্জ ডিআইজি, র‌্যাব-৬, জেলা প্রশাসন সব জায়গায় লিখিত দরখাস্ত দেওয়া হলেও কোন সুরহা হয়নি। গত ১৪ দিন তারা খুঁজতে খুঁজতে সাতক্ষীরা ও যশোর জেলা কারাগারে খোঁজ নিয়ে দেখেছে সেখানে মনীষ সাহা নামে কেউ আছে কি না? এ বিষয়ে রূপসা থানায় জিডি করা হয়েছে যার নং ৯৮, তারিখ ০২.১০.১৯।

ঐ দিন রাত্রে একই বাহিনী যে মোঃ মোস্তফাকে ধরেছিল সেই মোস্তফা বলেন, ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে কয়েকজন লোক আমার বাসায় যেয়ে নক করে আমাকে। আমি বের হলে আমাকে একটি হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে মনিরুলের বাড়ি কোথায়? জিজ্ঞাসা করে। আমি বলি আমার আর একটি কর্মচারী ছেলে আছে সে মনিরুলের বাসায় ফ্রিজের কাজ করেছে সে জানতে পারে। তারা আমাকে একটি মাইক্রোবাসে করে আমার সেই ছেলে আসিফ এর বাসায় যায়। আসিফ তার বাসার পাশেই মনিরুলের বাসা দেখিয়ে দিলে তারা মনিরুলকে আটক করে দুটি মাইক্রোবাসে নিয়ে যায়। আমাদের ছেড়ে দেয়। গাড়ির ভিতরে তখন মনিষ ছিল। একটি সিলভার ও বø্যাক কালারের মাইক্রোবাসে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের যে দলপতি ছিল তার কাছে অস্ত্র ছিল। এর বাইরে তারা আর কিছুই জানে না।

আইচগাতি পুলিশ ক্যাম্পে’র ইনচার্জ মোঃ ইব্রাহিম শেখ বলেন, আমরা মনিরুল ও মনিষ এর পরিবারের সাথে কথা বলেছি। স্থানীয়দের সাথে কথা বলেছি। তারা বলছে প্রশাসনের পরিচয়ে নিয়ে গেছে। কিন্তু ঐ দিন এখানে প্রশাসনের কোন অভিযান ছিল বলে তার জানা নাই। তারপরও তারা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়েছেন। কিন্তু কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। তদন্ত চলছে।

রূপসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা জাকির হোসেন জানান, হ্যাঁ এই বিষয়ে জিডি হয়েছে। পরিবার ও এলাকার লোকজন বলছে প্রশাসন নিয়েছে। কিন্তু আমরা ডিবি পুলিশসহ বিভিন্ন স্থানে খবর নিয়েছি মনিষ সাহা নামে কেউ আটক নেই। এমনকি মনিরুল নামেও কেউ নাই। তবে আমরা খোঁজ খবর চালিয়ে যাচ্ছি।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ বলেন, ডিবি পুলিশের বর্তমানে কোন অভিযান নাই। গত ২৭  সেপ্টেম্বর থেকে অভিযান বন্ধ রয়েছে। তারা বর্তমানে খুলনার রূপসার একটি মার্ডার মামলার তদন্তে ব্যস্ত রয়েছেন। তিনি গত ১৩ অক্টোবর চট্টগ্রামে সেই তদন্ত করে এসেছেন।

এ বিষয়ে র‌্যাবের মিডিয়া সেলে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, আমরা কোন আসামী ধরার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই আমরা তাকে কোর্টে চালান করে থাকি। আর এমন ধরণের তাদের কোন অভিযান হয়নি বা মনিষ সাহা নামে তাদের কেউ আটক নেই।

তবে নিখোঁজ অপর ব্যক্তি মনিরুলের স্ত্রী ও শ্যালককে এলাকায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তারা যে বাসায় ভাড়া থাকতেন সেখান থেকে চলে গেছেন। আইচগাতি ফাঁড়ি পুলিশ বলছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মনিরুলের স্ত্রী জানায়, তার স্বামী কি করে তা তিনি জানেন না। তবে এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মনিরুল এখানে পরিচয় দিত সে নড়াইলের গাজির হাটের তিনটি ইট ভাটার সর্দার ও কয়রায় গ্রামের বাড়ি। সে মনিষ সাহাকে ইট ভাটায় কাজ দেবার কথা বলে মাঝে কয়রায় নিয়ে যায় বলে জানায় স্থানীয়রা। সেখান থেকে আসার পর এই ঘটনা ঘটে।

 

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *