May 3, 2024
আঞ্চলিককরোনালেটেস্ট

খুলনায় করোনা ও উপসর্গে মৃত্যু বাড়ছেই, ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ গেল আরও ৮ জনের

জয়নাল ফরাজী…
খুলনায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে আরও ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়, বাকি ৪ জনের উপসর্গে। মৃতদের মধ্যে একজন খুলনার ক্রীড়া সংগঠক, একজন চিকিৎসক নেতার মেয়ে, একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর মা, কেসিসি’র একজন কর্মকর্তা রয়েছেন। খুলনার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। এদিকে মঙ্গলবার খুলনা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে নতুন ৭৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। রাতে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
খুলনা করোনা হাসপাতালের ফোকাল পার্সন ডা. শেখ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনকে জানান, মঙ্গলবার করোনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা হলেন- পাইকগাছার হরিঢালী ইউনিয়নের উত্তর শলুয়া গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বার সরদারের ছেলে সরদার রফিকুল ইসলাম (৬৮), নগরীর মুন্সিপাড়া ২য় গলির শাহরিয়ার জামান এর স্ত্রী ঐশী জামান (৩২), দৌলতপুরের আব্দুল গফুরের ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৭৬)।
তিনি আরও জানান, খুলনার বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক এবং খুলনা জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সহ-সভাপতি ও প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট ক্লাব কপিলমুনি ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (কেকেএসপি) পরিচালক সরদার রফিকুল ইসলাম সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ভর্তি হন। এছাড়া তিনি কিডনি ও হার্টের রোগে ভুগছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে তিনি মারা যান।
এছাড়া বিএমএ খুলনা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ড্যাব খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডাঃ সেখ আখতারুজ্জামানের একমাত্র মেয়ে ঐশী জামান গত ৪ জুলাই রাতে করোনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সোমবার একটু শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। মঙ্গলবার দুপুরে তার মৃত্যু হয়েছে। মরহুমের স্বামী ডাঃ শাহারিয়ার জামান খুলনা আই হাসপাতালের সহকারী পরিচালক।
দৌলতপুরের আঞ্জুমান রোডের সিরাজুল ইসলাম করোনা আক্রান্ত হয়ে গত ২ জুলাই রাতে করোনা হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এদিকে মহানগরীর ফর্টিস স্কর্টস কার্ডিয়াক ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লকপুর গ্রুপ অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের ডিএমডি ও সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালক আমজাদ হোসেনের মা নুরজাহান বেগম (১০৪) মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টায় মারা যান।
হাসপাতালের এডমিন অফিসার রুবেল শেখ বলেন, নুরজাহান বেগমের করোনার উপসর্গ ছিলো। আমরা ভিআইপি রোগী হিসেবে তার প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু করি। পরে নমুনা সংগ্রহ করে পজিটিভ রিপোর্ট আসে। পজেটিভ আসার পর আমরা তাকে করোনা হাসপাতালে নেওয়ার কথা বলেছিলাম। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থা নেওয়ার মতো ছিলো না। এর মধ্যেই তিনি মঙ্গলবার সকালে মারা যান।
অপরদিকে খুলনায় করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা হলেন- দৌলতপুরের দেয়ানা এলাকার জহির উদ্দিনের ছেলে আবু জাফর (৬৯), নগরীর বাগমারা এলাকার আব্দুল করিমের ছেলে খায়রুল ইসলাম (৫৫), খুলনা সিটি কর্পোরেশনের কর আদায় শাখার কর্মকর্তা এস এম মোকাররম হোসেন (৫৪) ও রূপসার নৈহাটি ইউনিয়নের আমদাবাদ গ্রামের মৃত হেমায়েতউল্লাহ’র ছেলে তৈয়ব আলী শেখ (৫০)।
খুমেক হাসপাতালের দায়িত্বরত আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শেখ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানান, করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকালে বেলা ২টা ৩০ মিনিটে আবু জাফর ও সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় খায়রুল ইসলাম মারা যান। তাদের করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
এছাড়া মঙ্গলবার সকালে করোনার উপসর্গ নিয়ে নগরীর নার্গিস মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের কর আদায় শাখার কর্মকর্তা ও কিসমত খুলনা গ্রামের বাসিন্দা এস এম মোকাররম হোসেন মৃত্যুবরণ করেছেন। এর আগে, সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তৈয়ব আলী শেখ মৃত্যুবরণ করেন। তার করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা আগেই দেওয়া হয়েছিল কিন্তু এখনো রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। তিনি নৈহাটি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনা মেডিকেল কলেজের আরটি-পিসিআর ল্যাবে নতুন করে ৭৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মঙ্গলবার তাদের নমুনা পরীক্ষার পর রিপোর্ট পজিটিভ আসে। খুমেকের উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মঙ্গলবার খুমেকের আরটি-পিসিআর মেশিনে মোট ২৭৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে খুলনার নমুনা ছিলো ২৪৪টি। এদের মধ্যে মোট ৭৯ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। যার ৭২ জন খুলনা জেলা ও মহানগরীর। এছাড়া যশোরের ৪ জন ও বাগেরহাটের ৩ জন রয়েছেন।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *