May 19, 2024
আন্তর্জাতিক

ক্ষমতা না ছাড়ার ঘোষণায় নিজ দলেই তোপের মুখে ট্রাম্প

নির্বাচনে হারলেও সহজে ক্ষমতা ছাড়তে না চাওয়ায় নিজ দলের ভেতরই তোপের মুখে পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার এধরনের বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য করে এর বিরোধিতা করেছেন বেশ কয়েকজন শীর্ষ রিপাবলিকান নেতা।

সিনেটে রিপাবলিকানদের নেতা মিচ ম্যাককনেল ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে জানিয়েছেন, নির্বাচনে তাদের দল হেরে গেলে নিয়মতান্ত্রিকভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।

বৃহস্পতিবার এক টুইটে ম্যাককনেল বলেন, ‘৩ নভেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী অভিষিক্ত হবেন ২০ জানুয়ারি। সেসময় নিয়মতান্ত্রিকভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তর হবে, যেমনটা ১৯৭২ সাল থেকে প্রতি চার বছর পরপর হয়ে আসছে।’

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ আরেক সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামও প্রায় একই কথা বলেছেন। টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত করছি, এটি শান্তিপূর্ণভাবেই হবে। রিপাবলিকানরা হেরে গেলে আমরা ফলাফল মেনে নেব। সুপ্রিম কোর্ট যদি জো বাইডেনের পক্ষে রায় দেন, আমি তা মেনে নেব।’

তবে রিপাবলিকান সিনেটর মিট রমনে বেশ কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। গত বুধবার তিনি বলেছেন, ‘একজন প্রেসিডেন্ট সাংবিধানিক নিশ্চয়তাকে সম্মান করছেন না এমন যেকোনও বিষয়ই অভাবনীয় এবং অগ্রহণযোগ্য।’

কী বলেছিলেন ট্রাম্প?
শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রশ্নে আগেও মার্কিন প্রেসিডেন্টের উত্তর ছিল, কেবল ফলাফল দেখেই তিনি বলতে পারবেন ক্ষমতা ছাড়বেন কিনা। বুধবার হোয়াইট হাউসের সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক ট্রাম্পকে আবারও প্রশ্ন করেন, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করছেন কিনা?

জবাবে ট্রাম্প বলেন, তার বিশ্বাস মহামারির সময় ডাকযোগে বর্ধিত ভোট না হলে ক্ষমতা হস্তান্তরেরই কোনও দরকারই হবে না।

যুক্তরাষ্ট্রে সাপ্তাহিক কর্মদিবসে নির্বাচন হয় বলে অনেক মানুষ সশরীরে ভোট দিতে পারেন না। এমন সব মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে ডাকযোগে ব্যালট পাঠানোর বিধান রয়েছে দেশটিতে। এবছর করোনা সংকটের কারণে অসংখ্য ভোটার সেই সুযোগ গ্রহণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ডেমোক্র্যাটরা ডাকযোগে বা মেইল ইন ভোটের পক্ষে হলেও ট্রাম্প শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করছেন। এমনকি ভোট-জালিয়াতি হতে পারে বলে ডেমোক্র্যাটদের দিকে আঙুলও তুলেছেন তিনি।

ডাকযোগের ব্যালট সরিয়ে নিলেই সব শান্তিপূর্ণভাবে হবে বলে মত ট্রাম্পের। বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে ক্ষমতা হস্তান্তরেরই প্রয়োজনই হবে না; অর্থাৎ তার পরাজিত হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।

তার এমন অনিশ্চিত বক্তব্যের পর থেকেই শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। ডাকভোটের কারণে ফলাফল চূড়ান্ত হতে বিলম্ব হলে এ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঝামেলা করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে বিশেষজ্ঞ এবং ভোট কর্মকর্তারা ট্রাম্পের অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে বলছেন, এই প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি কিংবা ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেও এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করেছেন।

এর আগে, ২০১৬ সালে নির্বাচনের আগেও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের কাছে হেরে গেলে ফলাফল মেনে না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ডেমোক্র্যাটরা কী বলছেন?
ওয়াশিংটনের তৃতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদ মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, ট্রাম্পের মুখ থেকে এ ধরনের কথায় মোটেও অবাক হননি তিনি।

এ ডেমোক্র্যাট নেতা বলেন, সরকারে যারা নিজেদের অবস্থান চিরস্থায়ী করতে চায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাদের প্রশংসা করেন। যেমন রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন, উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন, তুরস্কের রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান।

তিনি বলেন, ‘আমি তাকে (ট্রাম্প) মনে করিয়ে দিচ্ছি, আপনি উত্তর কোরিয়ায় নেই, তুরস্কে নেই, রাশিয়ায় নেই। সুতরাং আপনি শপথগ্রহণের মুহূর্তটাকে কেন সম্মান করার চেষ্টা করছেন না?’

আগামী নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রশ্নে প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকে অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন।

বাকি ডেমোক্র্যাটদেরও দাবি, ‘হোয়াইট হাউসে অনুপ্রবেশকারীকে’ বের করে দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে মার্কিন প্রশাসনের হাতে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *