May 2, 2024
আঞ্চলিকলেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

কান্না না থামায় বিরক্ত হয়ে জমজ শিশুকে হত্যা, মায়ের স্বীকারোক্তি

দ. প্রতিবেদক
খুলনার তেরখাদায় জমজ শিশু হত্যার দায় স্বীকার করেছেন মা কনিজ ফাতেমা কনা। শনিবার আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪ এর বিচারক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এর আগে তাকে বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে বিচারকের খাস কামরায় নেওয়া হয়। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও তেরখাদা থানার এসআই এনামুল হক।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই এনামুল বলেন, চার বছর আগে তেরখাদা উপজেলার ছাগলাদাহ ইউনিয়নের কুশলা গ্রামের খায়ের শেখের মেয়ের সঙ্গে বাগেরহাটের মোল্লারহাট উপজেলার মাতারচর গ্রামের মোল্লা আবু বক্কারের ছেলে মাসুম বিল্লাহর বিয়ে হয়। তিনি চাঁদপুরে একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন। বিয়ের তিন বছরের মাথায় কণা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সন্তান জন্মের পর থেকে গত দুই মাস ১১ দিন বাবার বাড়িতে অবস্থান করেন তিনি। যমজ শিশু জন্মের পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। মাসুম বিল্লাহ সন্তানদের দেখতে আসতেন না। নিজের বাড়িও নিয়ে যেতেন না। তাদের লালন-পালন করাও কণার একার জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।
তেরখাদা থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) মো. মাসুম কাজী সাংবাদিকদের বলেন, কানিজ ফাতেমা কনা দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে স্বামী মাসুম বিল্লাহকে মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠায় কনা। শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার জন্য স্বামীকে বলেন। মাসুমের মা অসুস্থ থাকায় বাড়িতে নিতে পারেনি কনাকে। পরে তাকে নেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। তাছাড়া জমজ শিশুর কান্নাকাটিতে তিনি বিরক্ত হতেন। ওই দিন রাতে মেয়েদের দুধ খাওয়ানোর পর কান্না থামছিল না। অনেক কষ্ট করে তাদের ঘুম পাড়ানো হয়। রাত আড়াইটার পর ঘুম থেকে জেগে আবারও কান্না শুরু করলে তাদের হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। হত্যার পর কিছুক্ষণ শিশুদের কাছে অবস্থান করেন তিনি। ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার সব পরিকল্পনা তিনি করেছিলেন। পরে পুকুরে ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এরপর দু’ঘণ্টা পর বাচ্চা নিখোঁজের নাটক সাজিয়ে চিৎকার করে। পাড়া প্রতিবেশীরা ছুটে আসে। মসজিদের মাইকে ঘোষণা করা হয়। পরে ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে পুকুরে বাচ্চা দু’টির লাশ ভেসে থাকতে দেখা যায়।
তদন্ত কর্মকর্তা মো: এনামুল হক জানান, শুক্রবার বিকেলে কনাসহ বাবা ও মাকে থানায় ডেকে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় শিশু দু’টির মা অসংলগ্ন কথা বলতে থাকলে তাদের সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। একপর্যায়ে শিশু হত্যার কথাও স্বীকার করেন তিনি। তার সাথে আর কেউ জড়িত না বলে তিনি আরও জানিয়েছেন।
এর আগে বিকেলে তেরখাদা উপজেলার ছাগলাদাহ ৩নং ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের সদস্য উজ্জল শেখ বলেন, কনা আমার প্রতিবেশী। শুক্রবার ফজরের আযানের সময় হঠাৎ বাড়ি থেকে চিৎকারের শব্দ পেয়ে বাইরে আসেন। এসে ঘটনাটি শুনে থানায় খবর দেন। পুলিশের সাথে শিশু দু’টির খোঁজে তিনিও অংশ নেন। পরে সকালে পুকুরে লাশ পাওয়া যায়। কনা যে নিজের শিশুকে হত্যা করবে তা তিনি বিশ্বাস করতে পারেনি। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন।
শনিবার দুপুর পৌনে তিনটার দিকে তেরখাদা থানা থেকে ইজিবাইকযোগে কানিজ ফাতেমাকে আদালতে আনা হয়। বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে বিচারকের খাস কামরায় নেওয়া হয়। রাত সাড়ে আটটার দিকে তাকে আদালত থেকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *