April 25, 2024
লাইফস্টাইল

করোনা আতঙ্কে হতে পারে হার্টের সমস্যা

ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে করোনাভাইরাস তাণ্ডব। ইতোমধ্যেই অনেকে আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন অনেকে। মৃতের তালিকাও দীর্ঘ। মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া এই জীবাণু আমাদের জন্য যথেষ্ট দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা বাহুল্য, এর কারণে মানসিক চাপের মাত্রাও দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। নিজের এবং প্রিয়জনদের সুরক্ষার কথা ভেবে উদ্বিগ্ন হলে সেখান থেকে আসতে পারে স্ট্রেস। যা আমাদের জীবনে বিধ্বংসী প্রভাব ফেলতে পারে।

আপনি যদি সারাক্ষণ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্কে থাকেন এবং একারণে সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখেন তবে আরেকবার ভাবুন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, করোনাভাইরাসের কারণে ক্রমবর্ধমান মানসিক চাপ হৃদরোগের সমস্যা বা কুখ্যাত ‘ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোম’কে ডেকে আনতে পারে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই বিজ্ঞানীরা আমাদের শরীরে এর প্রভাব নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে, আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে, করোনা আতঙ্কে ক্রমবর্ধমান মানসিক চাপের কারণে ‘ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোম’ নামক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

যদিও বিজ্ঞানীরা দৃঢ়তার সাথে দাবি করেছেন যে, ‘ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোম’ সাধারণত সংক্রমণের লক্ষণ নয়, মহামারী দ্বারা প্রকাশিত শারীরবৃত্তীয় এবং মানসিক চাপ অনেক লোককে এই সমস্যায় ভুগিয়েছে এবং অবস্থাটি বেশ মারাত্মক।

ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোম কী?
ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোম বড় ভোগান্তির করাণ হতে পারে এবং এর স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোম এমন একটি অবস্থাকে বোঝায় যা হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলোর সঙ্গে হুবহু মিলে যায়, যা ট্রমা বা তীব্র চাপের কারণে উদ্ভূত হতে পারে। যদিও অবস্থাটি হার্ট অ্যাটাকের মতো মারাত্মক বা প্রাণঘাতী নয়, তবে কম ভয়ঙ্করও নয়।

হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে পার্থক্য
হার্ট অ্যাটাক এবং ‘ব্রোকেন হার্ট’ এর মধ্যে একমাত্র পার্থক্যটি হলো হার্ট অ্যাটাক ধমনীতে বাধা সৃষ্টি করে, ব্রোকেন হার্ট অনেকটাই হার্ট অ্যাটাকের মতো অনুভব করে তবে ব্লকের মতো সমস্যা সৃষ্টি করে না।

লক্ষণগুলো কী?
হার্ট অ্যাটাক এবং ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোম- উভয় সমস্যার ক্ষেত্রেই বুকে ছুরিকাঘাতের মতো ব্যথা, শ্বাসকষ্ট হওয়া, ঘাম হওয়াসহ একই ধরণের লক্ষণ দেখা যায়। অ্যারিথমিয়াস, শক, জমে থাকা অস্থিরতা এবং অনিয়মিত হৃদস্পন্দনও এই সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। আপনার কোনোরকম হৃদরোগের ইতিহাস বা পরিবারের কারো কার্ডিয়াক অসুস্থতা না থাকলেও আপনি এতে আক্রান্ত হতে পারেন।

মেডিক্যালি, একে স্ট্রেস কার্ডিওমিওপ্যাথি বা টাকোটসুবো সিনড্রোম হিসাবেও ধরা হয়, যেহেতু বেশিরভাগ পরিস্থিতি স্ট্রেস বা কোনো আঘাতজনিত, যার ফলে হার্টের উপর অসহনীয় চাপ দেয়।

কীভাবে এটি করোনাভাইরাসের সাথে সম্পর্কিত?
‘ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোম’ সাধারণত প্রিয়জনের হারিয়ে যাওয়া, ব্রেকআপ, ধ্বংসাত্মক যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির ফল হিসেবে দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, করোনার কারণে অনিশ্চয়তা এবং মানসিক চাপও সমান কষ্টদায়ক। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের শীর্ষস্থানীয় লেখকরা যে সমীক্ষা করেছেন, তাও একই দাবি করেছে।

গবেষকরা মহামারী শুরুর আট সপ্তাহ আগে এবং সংক্রমণের শিখরে ওঠার আট সপ্তাহ আগে ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোমের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ইতিহাস তুলনা করেছিলেন। মহামারীর আগে ৫-৮টি কেস নথিভুক্ত করা হয়েছিল, মহামারীর পঞ্চম সপ্তাহের শুরুতে ব্রোকেন হার্ট সম্পর্কিত অসুস্থতা নিয়ে প্রায় ২০ জন ভর্তি হয়েছেন।

এখনই কেন ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রোম বৃদ্ধি পাচ্ছে?
করোনাভাইরাস মহামারী পৃথিবীকে অনেকটাই অচল করে দিয়েছে যেন। অনেকেই বেঁচে থাকার জন্য কঠোর সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। কেউ পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুকে হারিয়েছেন, কেউ-বা চাকরির হারিয়েছেন বা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সামাজিক দূরত্বও আমাদের মধ্যে চাপ সৃষ্টি করেছে। মহামারীর কারণে চারপাশ থাকে নানারকম চাপই এই হৃদরোগের কারণ হতে পারে।

চাপ উপেক্ষা করবেন না
‘ব্রোকেন হার্ট’ এর মতো পরিস্থিতি স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বা স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে পরিণত হতে পারে- এমনটি তুলে ধরে গবেষণাটি এর আগেও বলেছিল যে, এটি কখনো উপেক্ষা করা উচিত নয়। যেকোনো ধরণের স্ট্রেসের ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা করানো উচিত।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *