রাজাকারের তালিকা: তিন মন্ত্রণালয়ে গোলাম আরিফ টিপুর চিঠি
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় প্রকাশিত স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর নাম আসায় ওই তালিকা সংশোধন, প্রত্যাহার ও বাতিল চেয়ে তিন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে মঙ্গলবারই স্বরাষ্ট্র, আইন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে এ আবেদন করা হয়।
প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, গত ১৫ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত রাজাকারদের তালিকায় রাজশাহী বিভাগের রাজাকারদের অংশে মো. গোলাম আরিফ অ্যাডভোকেট লেখা আছে। এই তালিকাটি সংশোধন, বাতিল প্রত্যাহার চাওয়া হয়েছে আইন মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের কাছে।
পাশাপাশি যেসব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে তার অনুলিপি চাওয়া হয়েছে বলে জানান জেয়াদ আল মালুম। মঙ্গলবার আবেদন পাঠানো হলেও বুধবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানানো হয়। চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপুর সঙ্গে জেয়াদ আল মালুম ছাড়াও প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
গোলাম আরিফ টিপুর স্বাক্ষরে আইন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো আবেদনে বলা হয়েছে, তালিকায় আমার নাম যুক্ত থাকায় আমি হতবাক, বিস্মিত, মর্মাহত ও অপমানিত। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সীমাহীন অযতœ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করে অত্যন্ত অবহেলার সাথে এ তালিকা প্রচার-প্রকাশ করেছে।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের নিকট আমার জোর দাবি, তারা তাদের ভুলটি অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন এবং অনতিবিলম্বে ভুল সংশোধন করে আমার নাম মো. গোলাম আরিফ অ্যাডভোকেট বাতিল ও প্রত্যাহারপূর্বক প্রজ্ঞাপন জারি করে গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ করার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।’ আবেদনের অনুলিপি অ্যাটর্নি জেনারেল, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার ও তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ককেও পাঠানো হয়েছে।
বিজয় দিবসের আগের দিন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ১০ হাজার ৭৮৯ জন ‘স্বাধীনতাবিরোধীর’ ওই তালিকা প্রকাশ করে। কিন্তু সেখানে বরিশাল, বরগুনা, রাজশাহী, বগুড়া ও ঝালকাঠি জেলার মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্য, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও একাত্তরের আওয়ামী লীগ নেতাদের কয়েকজনের নাম দেখে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন স্থানীয় নেতাকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধারা। কোথাও কোথাও বিক্ষোভ কর্মসূচিও দেওয়া হয়।
ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য চলতি বছর একুশে পদক পাওয়া গোলাম আরিফ টিপু ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ গেরিলা বাহিনীর হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। রাজশাহীতে বাংলা ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার পর থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া পর্যন্ত সকল গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন প্রায় ৮৯ বছর বয়সী এই আইনজীবী।
২০১৩ সালে ৭ জুলাই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে তিনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত। ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে তিনি প্রসিকিউশনের প্রধান কৌঁসুলির দায়িত্ব পালন করছেন।
মঙ্গলবার চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে ক্ষোভ প্রকাশোর পাশাপাশি বিতর্কিত এ তালিকা তৈরিতে জড়িতদের খুঁজে বের করার আহŸান জানান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা।
গোলাম আরিফ টিপু বলেন, বুঝে পেলাম না কোথা থেকে এই শক্তিটা তারা পেলেন। মনে হয় মুক্তিযোদ্ধা সংস্থায় (মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়) যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের অশুভ বা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধ শক্তির অবস্থান কিছুটা রয়ে গেছে এবং সেখান থেকেই এই ব্যাপারগুলো হচ্ছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে।