April 24, 2024
জাতীয়

২৪৩ স্থানে ৮৯ কিমি বাঁধ ভেঙে দিয়ে গেছে ফণী

 

 

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে সারাদেশে বাঁধগুলোর ক্ষতির যে হিসাব শুরুতে করা হয়েছিল, তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে এখন দেখা যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাওয়ার দুদিন পর মঙ্গলবার পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ২৪৩ স্থানে ৮৯ দশমিক ১২ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া তথ্য দিয়েছে। ঝড়ের পরদিন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্র (এনডিআরসিসি) ২২ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য জানিয়েছিল।

এর পরদিন সোমবার পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক বৈঠকে জানিয়েছিলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন উপকূলীয় অঞ্চলে ৪ হাজার ৬৬৫ কিলোমিটার বাঁধের ২৪৩টি স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে দুটি বাঁধে বড় ধরনের ক্ষতি হয়। অবশিষ্ট ২৪১টি বাঁধ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে। তার একদিন বাদে এক প্রতিবেদনে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ৪ হাজার ৬৬৫ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য জানাল।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বরিশাল জোনের ৬টি জেলায় ২৩টি স্থানে ১২ .৬৭ কিলোমিটার বাঁধ, খুলনা জোনে ৬টি জেলায় ১৪৬টি স্থানে ৫৪.৭০২ কিলোমিটার, ফরিদপুর জোনে ১টি জেলার ৭টি স্থানে ০.৪৯২ কিলোমিটার, কুমিল­া জোনের তিনটি জেলার ১৮টি স্থানে ২.০৯০ কিলোমিটার বাঁধ, চট্টগ্রাম জোনের ৩টি জেলায় ৪৯টি স্থানে ১৯.৭৭৭ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কুমিল­া ও চট্টগ্রাম জোনে ২টি করে রেগুলেটরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সারা দেশের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ নির্মাণের জন্য ২৫১ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে তারা। এর মধ্যে বরিশাল জোনের জন্য ৯৯ কোটি ৮২ লাখ, খুলনার জন্য ৫৫ কোটি ৫ লাখ, কুমিল­ার জন্য ১৬ কোটি ৪২ লাখ, চট্টগ্রামের জন্য ৭৫ কোটি ৮০ লাখ, ফরিদপুরের জন্য ৪ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে।

সারাদেশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীনে ১৯ হাজার ৭৩২ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে বলে জানান পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম। ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় দেশের বাঁধগুলো বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবার বর্ষা মৌসুমের আগে ‘বিশেষ গুরুত্ব’ দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো মেরামত করা হবে বলে জানান তিনি।

শামীম বলেন, ফণীর কারণে বন্যায় যেসব বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো মেরামত করতে হবে জরুরি ভিত্তিতে। আশা করি, বর্ষার আগে যত দ্রুত সম্ভব এগুলো মেরামত করে ফেলব।

উপমন্ত্রী বলেন, প্রতি বছর বন্যায় উপকূলীয় অঞ্চলে ও হাওরে বাঁধগুলো ভেঙে প্লাবিত হয় বেশকিছু অঞ্চল। এ বাঁধগুলো নির্মিত হয়েছে অনেক আগে, ৬০-৭০ সনে। আমি মনে করি, প্রতিটি বাঁধের উচ্চতা ও প্রশস্ততা বাড়ানো দরকার। মন্ত্রণালয়ে সেগুলো নিয়ে কথা হয়েছে। বেশ কয়েকটি স্থানে জরুরি আপদকালীন কাজ হাতে নিয়েছে পাউবো।

ভোলা শহর সংরক্ষণ প্রকল্পের জন্য ৪৮ কোটি; দৌলতখান এলাকায় মেঘনা-তেঁতুলিয়া ভাঙন রোধ প্রকল্পের জন্য ৪ কোটি ৫ লাখ; বোরহানউদ্দিন উপজেলায় বাঁধ সংস্কারে ৩৫ লাখ টাকা,; খুলনার তেরখাদা উপজেলার ৯টি স্থানে বাঁধ মেরামতে ৫ লাখ টাকা; খুলনার পাইকগাছা উপজেলার ৪৮টি স্থানে বাঁধ মেরামতে ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে।

যশোরের মনিরামপুর উপজেলার বিল কেদারিয়া, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ৭টি স্থানে বাঁধে মেরামতের জন্য ১ কোটি ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ৯টি স্থানে বাঁধ মেরামতের জন্য ৪০ লাখ টাকা,; বাঁশখালী উপজেলার জন্য ৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, সন্দীপ উপজেলার জন্য ৬০ লাখ টাকা; কক্সবাজারের মহেশখালীর জন্য ৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার মেইন্দাবাদ-রাণীপুরে পায়রা নদীতে পাউবো বাঁধ নির্মাণ করতে চাইলে জমির মালিকরা জমি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এই জেলার কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের রাবনা নদীর পাড়ে বাঁধ নির্মাণ করতে চাইলে বন্দর কর্তৃপক্ষ পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ এখনো সাড়া দেয়নি ।

এ বিষয়ে পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, পায়রা বন্দরের সঙ্গে আইনি জটিলতা আছে। তবে আশা করি আমরা এটার সমাধান করতে পারব। আর পটুয়াখালীতে জমির মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি আমরা, আমরা দ্রুতই জমি পাব।

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *