November 27, 2024
আঞ্চলিকলেটেস্টশিক্ষা

খুলনায় দুই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে পৃথক যৌন হয়রানির অভিযোগ, তদন্তে কমিটি

দ. প্রতিবেদক
খুলনায় দুই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে পৃথক যৌন হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে একজন ডুমুরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি খান আবুল বাশার, অপরজন কয়রা উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক বাদল। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা উদঘাটনে ইতোমধ্যে দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা ছাত্রলীগ। আর কয়রার বাদল ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কয়রা থানায় মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী কলেজছাত্রী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়রা উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক বাদলের বিরুদ্ধে ইভটিজিং, যৌন হয়রানি, ছিনতাই মারপিট ও পরবর্তীতে হুমকি ধামকির অভিযোগ এনে গত ৬ জুন খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের কাটমার চর গ্রামের এক কলেজছাত্রী। সাংবাদিকদের কাছে তিনি দাবি করেন, গত ২৪ মে রাতে নিজ বাড়িতে যাওয়ার সময় উত্তর বেদকাশী গ্রামস্থ কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে পৌছালে মোটরসাইকেলে আসা আমিনুল হক বাদল ও তার সঙ্গীরা ওই কলেজছাত্রীর পথরোধ করে এবং মোটরসাইকেলে উঠতে বলে। না ওঠায় তার ওড়না ধরে টান দেয়। একহাত দিয়ে ওড়না রক্ষা করতে গেলে তাকে চড় মারে এবং অন্যরা শরীরের বস্ত্র ধরে টানাটানি করে। এসময় তার কাছে থাকা ২৯শ টাকাও ছিনিয়ে নেয়। লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে সাথে সাথে তারা পালিয়ে যায়। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্যকে জানানো হলেও কোন প্রতিকার পাননি বলে তিনি দাবি করেন। এর পরের দিন (৭ জুন) কয়রা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যে প্রণোদিত বলে দাবি করেন ছাত্রলীগ নেতা বাদল। ওই সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম টিংকুসহ অন্য নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তী গত ১০ জুন বিষয়টি নিয়ে কয়রা থানায় ইভটিজিং, যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন অভিযোগে বাদলসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন ওই কলেজ ছাত্রী। মামলা নং ১৪।

এ বিষয়ে দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনকে তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে নেতাদের জানিয়ে কোন সুরাহা না পেয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেবকে জানালে তার হস্তক্ষেপে মামলা দায়ের করেছি। আমি ন্যায্য বিচার চাই। যাতে আমার মতো আর কোন মেয়ে এমন পরিস্থিতির শিকার না হয়।

এদিকে সম্প্রতি ডুমুরিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি খান আবুল বাশারের একই সাথে একাধিক মেয়েদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার কলরেকর্ড ভাইরাল হয়েছে। তাতে দেখা গেছে সে মেয়েদের মেসেঞ্জারে বিভিন্ন সময়ে অশ্লীল ছবি পাঠিয়েছে। কখনো কখনো অসামাজিক কাজের প্রস্তাবও দিয়েছে। আবার একটি কল রেকর্ডে পাওয়া গেছে, তাতে একটি মেয়েকে চাকরী দেওয়ার প্রস্তাবে শারীরিক সম্পর্ক করতে চেয়েছে। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমত সমালোচনার ঝড় বইছে। এ প্রেক্ষিতে ওই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে জেলা ছাত্রলীগ। তদন্ত করতে মো: মারুফ হোসাইন ও এস এম তানভীর রহমান আকাশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একই সাথে আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তাদেরকে সরেজমিনে অনুসন্ধান করে তথ্য ও উপাত্তসহ তদন্ত রিপোর্ট জেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সেলে জমা দিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. পারভেজ হাওলাদার দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিনকে বলেন, দুটি বিষয় নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কয়রা উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তাই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ডুমুরিয়া ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ দেয়নি। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি দেখে সংগঠনের ইমেজ রক্ষার্থে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। তাদের রিপোর্ট পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *