April 19, 2024
খেলাধুলা

২০২০ সালে মারা গেছেন ক্রীড়াঙ্গনের যেসব কিংবদন্তি

মহামারি করোনাভাইরাসে জর্জরিত হয়ে কেটে গেছে ২০২০ সালের প্রায় পুরোটা সময়। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের সংক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। এর বাইরেও ২০২০ সালটি বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের জন্য হয়ে থাকবে এক শোকাবহ মাস। কেননা বছরের শুরুর মাস থেকে শেষপর্যন্ত অনেক তারকা ক্রীড়াবিদ চলে গেছেন না ফেরার দেশে।

জানুয়ারিতে বাস্কেটবল কিংবদন্তি কোবি ব্রায়ান্টকে দিয়ে শুরু, সবশেষ ডিসেম্বরে মারা গেছেন ইতালিয়ান ফুটবল কিংবদন্তি পাওয়া রসি। না ফেরার দেশে পাড়ি জমানোর এ তালিকায় নাম লিখিয়েছেন ফুটবল ঈশ্বরখ্যাত দিয়েগো ম্যারাডোনা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি ক্রিকেটার স্যার এভারটন উইকস, অস্ট্রেলিয়ার ডিন জোনসরাও।

 

কোবি ব্রায়ান্ট (২৩ আগস্ট ১৯৭৮-২৬ জানুয়ারি ২০২০)

চলতি বছরের শুরুটাই হয়েছিল বাস্কেটবল কিংবদন্তি কোবি ব্রায়ান্টের মর্মান্তিক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা দিয়ে। গত ২৬ জানুয়ারি ক্যালিফোর্নিয়ায় হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় পড়ে নিহত হন ৪১ বছর বয়সী কোবি ব্রায়ান্ট ও তার ১৩ বছরের মেয়ে জিজি ব্রায়ান্ট। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে।

নিজের বাস্কেটবল ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় এলএ লেকারসের হয়ে খেলেছেন ব্রায়ান্ট। তিনি পাঁচবার জিতেছেন এনবিও চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ১৮ বার ছিলেন অলস্টার দলের সদস্য। এছাড়া দেশের হয়ে ২০০৮ ও ২০১২ সালের অলিম্পিকে স্বর্ণপদকও জিতেছেন এই কিংবদন্তি বাস্কেটবল খেলোয়াড়।

স্যার এভারটন উইকস (২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯২৫ – ১ জুলাই ২০২০)

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের বিখ্যাত ‘থ্রি ডব্লিউ’ এর শেষ সদস্য ছিলেন স্যার এভারটন উইকস। চলতি বছরের ১ জুলাই দীর্ঘ অসুস্থতা থেকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ২০১৯ সালে হার্ট অ্যাটাক করেছিলেন স্যার এভারটন উইকস। এরপর থেকেই তিনি অসুস্থতায় ভুগছিলেন।

১৯৪৮ সালে টেস্ট অভিষেকের বছরেই মার্চ থেকে ডিসেম্বরের ভেতরে টানা পাঁচ টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। যা এখনও বিশ্বরেকর্ড হয়ে আছে। ষষ্ঠ টেস্টে আম্পায়ারের ভুলে আউট হন ৯০ রান করে। মাত্র ১২ ইনিংসে পূরণ করেছিলেন ক্যারিয়ারের ১০০০ রান। এর চেয়ে দ্রুত আর কেউ এই মাইলফলকে পৌঁছতে পারেননি।

ক্যারিয়ার শেষে ৪৮ টেস্টে ১৫ সেঞ্চুরি ও ১৯ হাফসেঞ্চুরিতে ৫৮.৬১ গড়ে ৪৪৫৫ রান করেন উইকস। টেস্ট ক্রিকেটে অন্তত ২০ ইনিংস ব্যাট করা ক্রিকেটারদের মধ্যে উইকসের গড় দশম সর্বোচ্চ। উইকসের ব্যাটিংয়ের মধ্যে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের ছায়া দেখতে পেতেন অনেকেই।

১৯৫১ সালে উইজডেনের বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মান পান এভারটন উইকস। পরে ১৯৯৫ সালে ক্রিকেটে অবদানের জন্য নাইটহুড উপাধি লাভ করেন তিনি এবং নামের সামনে যোগ হয় ‘স্যার’ শব্দটি।

চেতন চৌহান (২১ জুলাই ১৯৪৭ – ১৬ আগস্ট ২০২০)

চলতি বছরের ১৬ আগস্ট ৭৩ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার চেতন চৌহান। হৃৎযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি। জুলাইয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে তার। ভেন্টিলেটর সাপোর্ট দেয়া হলেও বাঁচানো যায়নি তাকে।

১৯৬৯ থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত সময়ে ৪০ টেস্ট খেলে ২০৮৪ রান করেছেন চেতন। এছাড়া ৭ ওয়ানডেতে তার সংগ্রহ ছিলে ১৫৩ রান। সুনিল গাভাস্কারের সঙ্গে টেস্টে সফল জুটি গড়েছিলেন তিনি। দুজন মিলে টেস্ট ক্রিকেটে ১০টি শতরানের জুটিতে ৩ হাজারের বেশি রান যোগ করেন। ১৯৮১ সালে অর্জুনা পুরস্কার লাভ করেন তিনি।

ডিন জোনস (২৪ মার্চ ১৯৬১ – ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০)

বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনকে হতবিহ্বল করে দিয়ে গত ২৪ সেপ্টেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন ডিন জোনস। আগেরদিন আইপিএলে ধারাভাষ্য দিয়ে, পরেরদিন হার্ট অ্যাটাকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

সকালের নাস্তার পর বেলা ১১টার দিকে হোটেলের করিডোরে দাঁড়িয়ে কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে ব্যাট-বল নিয়ে মেতে উঠেছিলেন জোনস। এ সময় হঠাৎ বুকে ব্যথা উঠলে মেঝেতে পড়ে যান তিনি। তড়িঘড়ি করে হাসপাতালে নেয়া হলেও বাঁচানো যায়নি তাকে।

অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের হয়ে ১৯৮৪ থেকে ১৯৯২ সালের মধ্যে ৫২ টেস্ট ও ১৬৪ ওয়ানডে খেলেছেন জোনস। টেস্ট ক্রিকেটে ১৪ হাফসেঞ্চুরির সঙ্গে ১১ সেঞ্চুরিতে করেছেন ৩৬৩১ রান, ওয়ানডেতে ৪৬ ফিফটির সঙ্গে ৭ সেঞ্চুরিতে তার জুলিতে জমা পড়েছিল ৬০৬৮ রান। ওয়ানডে ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ের প্রথাগত ধারা ভেঙে আক্রমণাত্মক খেলার প্রচলন তিনিই করেছিলেন।

দিয়েগো ম্যারাডোনা (৩০ অক্টোবর ১৯৬০ – ২৫ নভেম্বর ২০২০)

গত ২৫ নভেম্বর বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে ৬০ বছর বয়সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন ফুটবল ঈশ্বরখ্যাত আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনা। নিজের বাসভবনে দীর্ঘ অসুস্থতা থেকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চলাকালীন হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান তিনি। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অসুস্থতার কারণেই মূলত প্রাণ হারিয়েছেন তিনি।

১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে একক নৈপুণ্যে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ শিরোপা জিতিয়েছিলেন ম্যারাডোনা। ১৯৯০ বিশ্বকাপেও আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুলেছিলেন তিনি। সেবার জার্মানির কাছে হেরে শিরোপা হাতছাড়া করতে হয় তাকে। এছাড়া ইউরোপিয়ান ফুটবল ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলির অবিসংবাদিত কিংবদন্তি ছিলেন তিনি।

পাওলো রসি (২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫৬ – ৯ ডিসেম্বর ২০২০)

২০২০ সালে না ফেরার দেশে পাড়ি জমানোদের তালিকায় সবশেষ নাম লিখিয়েছেন ইতালিয়ান ফুটবল কিংবদন্তি পাওলো রসি। গত ৯ ডিসেম্বর দুরারোগ্য এক সমস্যায় ভুগে ৬৪ বছর বয়সে মারা যান ইতালিকে বিশ্বকাপ জেতানো নায়ক রসি।

১৯৮২ সালের বিশ্বকাপে ইতালির শিরোপা জেতার নায়ক ছিলেন রসি। সে আসরে ৬ গোল করে নিজ দেশকে বিশ্বকাপ জেতান তিনি। এছাড়া ক্লাব ফুটবলে জুভেন্টাসের হয়ে ২টি সিরি ‘আ’, ১টি ইউরোপিয়ান কাপ ও ১টি কোপা ইতালিয়া জিতেছেন রসি। তবে বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকসহ মোট ৬ গোলের জন্য অধিক সমাদৃত তিনি।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *