হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় রোগী মারা গেলে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ
কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে যাওয়া রোগীদের চিকিৎসায় অনীহা প্রকাশ করার কারণে যদি রোগীর মৃত্যু হয় তাহলে তা ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হবে বলেছেন হাইকোর্ট। তাই চিকিৎসার ক্ষেত্রে অবহেলার অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা দুটি নির্দেশনার আলোকে চিকিৎসা সেবা দেয়াসহ আট দফা নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।
করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনের আলোকে দেশের সব হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে সাধারণ রোগীদের (নন-কোভিড) ফিরিয়ে না দিয়ে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার নির্দেশনা চেয়ে করা রির্টের শুনানি শেষে সোমবার (১৫ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট এএম জামিউল হক ফয়সাল এবং ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান।
আদালতে আজ ভার্চুয়ালে রিটের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট এএম জামিউল হক ফয়সাল, মো. নাজমুল হুদা, মোহাম্মাদ মেহেদী হাসান এবং ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মুরাদ রেজা ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট অমিত তালুকদার।
এর আগে রোববার (১৪ জুন) এ রিটের শুনানি নিয়ে আদেশ দেয়ার জন্য সোমবার (১৫ জুন) দিন ঠিক করেন হাইকোর্ট।
তার আগে শনিবার (১৩ জুন) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপনের আলোকে দেশের সব হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে সাধারণ রোগীদের ফিরিয়ে না দিয়ে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদনটি করা হয়। রিটে রোগীদের চিকিৎসা না দিয়ে হাসপাতাল থেকে ফেরত দেয়ার ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে জনস্বার্থে রিটটি করেন সুপ্রিম কোর্টের চার আইনজীবী। আইনজীবীরা হলেন-অ্যাডভোকেট এএম জামিউল হক ফয়সাল, মো. নাজমুল হুদা, মোহাম্মাদ মেহেদী হাসান এবং ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান।
রিটে স্বাস্থ্য সচিব, অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) এবং উপ-সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ও পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।
গত ১১ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়া হয় দেশের হাসপাতালগুলোকে। মন্ত্রণালয়ের এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন চেয়ে রিট করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান ও এএম জামিউল হক ফয়সাল।
রিট আবেদনে বলা হয়, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে করোনা বা অন্যান্য রোগের উপসর্গ নিয়ে দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক ঘুরে ঘুরে মানুষ চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পেরে গত ১১ মে দেশের সকল হাসপাতাল ও ক্লিনিকে আগত রোগীদের ফেরত না পাঠিয়ে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা জারি করে সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতর। ওই নির্দেশনা অমান্য করলে লাইসেন্স বাতিলসহ প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও অধিদফতর থেকে জানানো হয়।
‘অথচ সরকারের সেসব নির্দেশনা উপেক্ষা করে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক সাধারণ রোগীদের করোনা সার্টিফিকেট ছাড়া ভর্তি নিচ্ছে না। সেক্ষেত্রে একটি করোনা টেস্ট করাতে রোগীর জন্য চার থেকে পাঁচদিন সময় লাগতে পারে। অথচ গুরুতর অসুস্থ রোগীর ক্ষেত্রে টেস্ট করানো এবং সে রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই প্রতিদিনই চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর ঘটনায় দেশের সংবাদমাধ্যমে উঠে আসছে।’
গত ১১ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে-
১. সকল সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিকে সন্দেহভাজন কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকতে হবে।
২. চিকিৎসা সুবিধা থাকা সত্ত্বেও জরুরি চিকিৎসার জন্য আগত কোনো রোগীকে ফেরত দেয়া যাবে না। রেফার করতে হলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ‘কোভিড হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণ কক্ষের’ সাথে যোগাযোগ করে রোগীর চিকিৎসার বিষয়টি সুনিশ্চিত করে রেফার করতে হবে।
৩. দীর্ঘদিন ধরে যে সকল রোগী কিডনি ডায়ালাইসিসসহ বিভিন্ন চিকিৎসা গ্রহণ করছেন তারা কোভিড আক্রান্ত না হয়ে থাকলে তাদের চিকিৎসা অব্যাহত রাখতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, দেশের কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে উল্লিখিত নির্দেশনা অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রচলিত বিধান অনুসারে লাইসেন্স বাতিলসহ প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।