হামলাকারী ‘৫ জঙ্গি চিহ্নিত’; লক্ষ্য আলো-আঁধারিতে থাকা পুলিশ
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
এবছর ঢাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে যে বোমা হামলাগুলো হয়েছিল, তাতে ৫ জঙ্গির জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যালনাল ক্রাইম ইউনিট। ‘নব্য জেএমবি’র এই পাঁচ সদস্যের মধ্যে দুজন ফতুলায় অভিযানের আগে গ্রেপ্তার হন; বাকি তিনজনকে এখনও ধরতে না পারলেও তাদের চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছেন কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।
নারায়ণগঞ্জের ফতুলায় অভিযানের পরদিন মঙ্গলবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আসেন তিনি। ওই অভিযানে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক পাওয়া গেছে, যার সঙ্গে পুলিশের উপর হামলায় ব্যবহৃত বিস্ফোরকের মিল পাওয়ার কথা আগেই জানিয়েছিলেন মনিরুল।
২০১৬ সালে গুলশান হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে বিভিন্ন জেলায় অনেক জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মেলে এবং নিহতও হন শীর্ষ জঙ্গিনেতারা। তখন পুলিশ কর্মকর্তারা বলছিলেন, জঙ্গিদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু স¤প্রতি ঢাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে কয়েকটি বোমাহামলার পর ফের আলোচনা শুরু হয় জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে; এসব হামলার পর জঙ্গি সংগঠনের নামে দায় স্বীকারের বার্তার খবরও আসে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিল থেকে পরবর্তী মাসগুলোতে পাঁচটি হামলা হয়। এগুলোতে জঙ্গিদের যোগসাজশের কথা বলা হলেও কারা তারা সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যাচ্ছিল না।
এর মধ্যেই রোববার মধ্যরাতে ফতুলার সেয়াচর এলাকায় একটি বাড়ি ঘিরে অভিযান চালায় পুলিশ। বলা হয়, মিজানুর রহমান (মিশুক খান মিজান) নামে নব্য জেএমবির এক সদস্যকে ঢাকায় গ্রেপ্তারের পর তার কাছে পাওয়া তথ্যে ওই অভিযান চলে।
ফতুলার ওই বাড়িতে তিনটি ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসের (আইইডি) পাশাপাশি বোমা তৈরির আরও বিস্ফোরক ও রাসায়নিক পাওয়া যায়। ওই বাড়ির মালিকের ছেলে ফরিদউদ্দিন রুমিকে গ্রেপ্তার করা হয়। রুমি ঢাকার আহসানউলাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ও প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষক।
সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল বলেন, এদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছি যে, গত পাঁচটি ঘটনায় পাঁচজনের একটি সেল কাজ করেছে। এই পাঁচজনই পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন এবং আইইডি তৈরি করেছে।
মিজান ও রুমি ওই দলেরই দুজন জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বাকি তিনজনকেও চিহ্নিত করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত দুজনের উপরে একজন নেতা রয়েছে এবং তাদের একজন আমির আছে। তাদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
গত ২৯ এপ্রিল গুলিস্তানে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর পর ২৬ মে মালিবাগে এসবি কার্যালয়ের সামনে পুলিশের পিকআপ ভ্যানে বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
জুলাইয়ে রাজধানীর খামারবাড়ি ও পল্টনে পুলিশ বক্সের সামনে দুটি প্যাকেটে বোমা পাওয়া যায়। এরপর গত ৩১ অগাস্ট সাইন্সল্যাবে পুলিশ বক্সের সামমে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, যাতে দুই পুলিশ সদস্য আহত হন।
গ্রেপ্তার মিজান ও রুমিকে গুলিস্তানে বিস্ফোরণের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়ে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজত চাওয়া হবে বলে মনিরুল জানান। তিনি বলেন, রুমি ও মিজান গুলিস্তানের ঘটনায় সরাসরি সম্পৃক্ত। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বাকিদের সম্পর্কে তথ্য পাব এবং আর যে চারটি মামলা, সেগুলোর তদন্ত সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।