May 3, 2024
জাতীয়

হরেক রকমের পেঁয়াজ, দাম ১০০ থেকে ২৫০

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

ভারতের বিকল্পে বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে সরকার উদ্যোগী হওয়ার পর বাজারে এখন সাত-আট ধরনের পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে আমদানি করা কোনো কোনো পেঁয়াজ কিছুটা কম দামে পাওয়া গেলেও দেশি নতুন-পুরান পেঁয়াজ এখনও দুইশ’র উপরে।

আমদানি করা পেঁয়াজ ৪৫ টাকা কেজি দরে টিসিবির ট্রাক থেকে বিক্রি হলেও বাজারে চীন, মিশর, তুরস্ক, মিয়ানমার ও পাকিস্তানের পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। এর সঙ্গে দেশি পুরান পেঁয়াজের সঙ্গে এসেছে মুড়িকাটা পেঁয়াজ। এর পাশাপাশি রয়েছে কলিসহ তুলে আনা পেঁয়াজ, সবচেয়ে কম দামের হওয়ার এর প্রতিও চাহিদা রয়েছে বেশ।

আমদানি বৃদ্ধিতে তিন থেকে চার দিনের মধ্যে মিশর ও চীনা পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা করে কমেছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।

মিরপুর বড়বাগের খুচরা বিক্রেতা মিজানুর রহমান (মিজান স্টোর) জানান, চীনা পেঁয়াজ এখন প্রতিকেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিশরের পেঁয়াজের দামও কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমেছে। বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১২০ টাকায়।

এছাড়া মিয়ানমারের পেঁয়াজ প্রতিকেজি ২২০ টাকায়, পুরান দেশি পেঁয়াজ ২৪০ টাকায়, নতুন দেশি পেঁয়াজ ১৮০ টাকায় এবং কলিসহ দেশি পেঁয়াজ ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা বাবু শেখ বলেন, দেশি পেঁয়াজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকলেও বিক্রি একেবারেই কমে গেছে। আমার দোকান থেকে দৈনিক ৪০ থেকে ৫০ বস্তা পেঁয়াজ বিক্রি হত। সেখানে এখন এক বস্তাও দিনে বিক্রি করতে পারি না। দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষ পেঁয়াজ খাওয়া অনেক বেশি পরিমাণে কমিয়েছেন।

এদিকে বাজারে নতুন করে চীনা রসুনের দাম কমেছে। এক সপ্তাহ আগে মিরপুর বড়বাগে প্রতিকেজি ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া চীনা রসুন এদিন বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকা থেকে ১৩৫ টাকায়। আবার দেশি রসুন কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

মিরপুর- ১ নম্বর সেকশনের আড়ৎদার আব্দুল লতিফ মোল­া বলেন, এদিন আড়তে নতুন পেঁয়াজ ১৬০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। এই বাজারে একমাত্র তার দোকানেই ১৪ বস্তা পুরানো পেঁয়াজ এসেছে যার মান খুব খারাপ। দাম পড়েছে প্রতিকেজি ২২০ টাকা করে।

এই পেঁয়াজ ব্যবসায়ী বলেন, এ বছর পেঁয়াজের সঙ্কটে সর্বশেষ ভূমিকা রেখেছে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। বুলবুলের প্রভাবে ভারি বৃষ্টি হওয়ায় মুড়িকাটা পেঁয়াজের ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নইলে অনেক আগেই প্রচুর পরিমাণে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে চুলে আসত।

ঘর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে গত নভেম্বরের ৯ থেকে ১১ তারিখ পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে টানা ভারি বর্ষণ হয়েছিল। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বাজারে দেশি পেঁয়াজ পুরোদমে আসা শুরু হবে বলে মনে করছেন আব্দুল লতিফ। আর তখনই বাজারে পেঁয়াজের দাম একটা সহনীয় পর্যায়ে বলে ধারণা এই ব্যবসায়ীর।

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির হিসাব মতে, এক বছর আগে এই দিনে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকায় এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।

রাজধানীর শ্যামবাজারের আমদানিকারক আব্দুল মজিদ বলেন, সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া দেশি পুরানো পেঁয়াজ এখন প্রায় শেষের দিকে। এই পরিস্থিতি আরও অন্তত ১০ দিন চলতে থাকবে। এর পরে হয়ত সব ধরনের পেঁয়াজের দাম একশ টাকার নিচে নামতে পারে।

শ্যামবাজারে এদিন চীন থেকে আসা পেঁয়াজ কেজিতে ২০ টাকা কমে ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকায়, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৯০ টাকা, মিশরের পেঁয়াজ ১০৫ টাকা থেকে ১১০ টাকায়, পাকিস্তানের পেঁয়াজ দেড়শ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে জানান তিনি।

দীর্ঘদিন ধরে পেঁয়াজের চড়া দামের ক্ষেত্রে সরবরাহ ঘাটতিকে দায়ী করা হলেও সবজির দাম মেনে নিতে পারছেন না অনেক ক্রেতা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী শাহরিয়ার শুক্রবার মিরপুর বড়বাগ বাজারে এসে  বলেন, পেঁয়াজ আমদানি নির্ভর পণ্য হলেও সবজিতো দেশেই উৎপাদিত হয়। তাহলে এসব পণ্য কেন ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে খেতে হবে। গতবছর এই সময়ে যে ফুলকপি ২০ টাকায় পাওয়া যেত, সেটার দাম এখনও ৩০ টাকা থেকে ৩৫ টাকা। গত কয়েক মাস ধরে সবজির বাজার এমন চড়া।

তার সঙ্গে দ্বিমত করে এই বাজারের বিক্রেতা সুমন বলেন, বাজারে সরবরাহের চাপ না বাড়লে শাক সবজির দাম কমবে না। তবুও গত কয়েক সপ্তাহে কয়েকটি সবজির দাম কমেছে। গত ১০ দিনে সিম ১০ টাকা কমে প্রতিকেজি ৪০ টাকা হয়েছে। মুলার দাম কমে প্রতিকেজি ৩০ টাকা হয়েছে। এছাড়া ফুলকপি ৪০ টাকায়, বেগুন প্রতিকেজি ৪০ টাকায়, বরবটি ৬০ টাকায়, দেশি টমেটো ১২০ টাকায়, ভারতীয় টমেটো ১০০ টাকায়, দেশি গাজর ৬০ টাকায়, খিরা ৬০ টাকায় কেজি বিক্রি হচ্ছে।

ব্রয়লার মুরগি গত সপ্তাহের মতোই প্রতিকেজি ১২০ টাকা আর সোনালি মুরগি ২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফার্মের মুরগির ডিমের দাম প্রতি ডজনে ৫ টাকা কমে এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়।

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *