স্বামীকে খুন করে ওয়ার্ডরোবে রেখে কাজে গেলেন স্ত্রী
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
গাজীপুরে ছয় টুকরো লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তার স্ত্রী স্বীকার করেছেন, তিনি তার স্বামীকে খুন করে ওয়ার্ডরোবে রেখে কাজে যান। সেখান থেকে ফিরে বঁটি দিয়ে কেটে ছয় টুকরো করে বাগানে ফেলে দেন।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার শাসসুন্নাহার শনিবার বেলা ১২টার দিকে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ওই নারী তার স্বামীকে বেতনের টাকা না দেওয়ায় কলহের জেরে হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটে। গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার গিলারচালা এলাকা থেকে শুক্রবার রফিকুল ইসলাম (৩৫) নামে এক ব্যক্তির ছয় টুকরো লাশ উদ্ধার করা হয়। একই সঙ্গে তার স্ত্রী জীবন্নাহারকে আটক করে পুলিশ।
পুলিশ সুপার প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য দিয়ে বলেন, রফিকুল ও জীবন্নাহার গিলারচালা এলাকায় আব্দুল হাইয়ের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। রফিকুল ওই এলাকার ‘হাউ আর ইউ’ নামে একটি টেক্সটাইল কারখানায় লোডার পদে আর জীবন্নাহার একই এলাকায় মেঘনা নিট কম্পোজিট কারখানায় সুয়িং অপারেটর পদের শ্রমিক।
রফিকুল বেতন পেতেন সাত হাজার টাকা আর জীবন্নাহারের বেতন ১৩ হাজার টাকা। স্বামী তার স্ত্রীর বেতনের টাকা তার কাছে দিতে বলতেন। কিন্তু জীবন্নাহার তার বেতনের টাকা তার মায়ের কাছে রাখেন। এনিয়ে স্বামী-স্ত্রীর প্রায়ই কলহ বাধত।
জীবন্নাহারের উপস্থিতিতে পুলিশ সুপার বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে স্ত্রীকে থাপ্পড় মেরে স্বামী খাটে শুয়ে থাকেন। এ সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই জীবন্নাহার ইট দিয়ে স্বামীর মাথায় আঘাত করলে তিনি খাট থেকে নিচে পড়ে যান। জীবন্নাহার উপর্যুপরি আরও আঘাত করলে রফিকুল অচেতন হয়ে পড়েন।
একপর্যায়ে গামছা দিয়ে শ্বসরোধ করে তাকে হত্যার পর ঘরের ওয়ার্ডরোবে লাশ লুকিয়ে রেখে জীবন্নাহার কারখানায় চলে যান। সেখান থেকে ফিরে পাশের বাসায় বোনের ঘরে রাতের খাবার খান। রাত ১১টার দিকে লাশ ওয়ার্ডরোব থেকে বের করে বঁটি দিয়ে দুই হাত কুনই থেকে, দুই পা হাঁটু থেকে এবং ঘাড় থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। পরে পা দুটি অদূরে টয়লেটের পাশে, মাথা আর হাত দুটি নর্দমায় এবং দেহ বস্তায় ভরে পাশের বাঁশঝাড়ে ফেলে দেন। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে জীবন্নাহার বিভিন্ন সময় নির্যাতিত হওয়ার কথা জানান।
পাঁচ বছর আগে ময়মনসিংহের তারাকান্দা থানার উলামাকান্দি এলাকার আব্দুল লতিফের ছেলে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে এই নারীর বিয়ে হয়। তিনি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার বিষমপুর গ্রামের চাঁন মিয়ার মেয়ে। এই দম্পতির মারিয়া আক্তার রোজা নামের চার বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। সে বেশির ভাগ সময় তার নানির কাছে থাকে। ঘটনার দিনও বাসায় ছিল না।
শ্রীপুর থানার ওসি মো. জাবেদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় রফিকুলের বাবা লতিফ বাদী হয়ে জীবন্নাহারকে আসামি করে শ্রীপুর থানায় মামলা করেছেন। মামলায় জীবন্নাহারকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। পুলিশ ঘটনা গভীরভাবে তদন্ত করছে বলে তিনি জানান।