May 9, 2024
আঞ্চলিকলেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

স্বপ্নদ্রষ্টা হয়ে এসেছিল সিএসআর প্রকল্প

দ. প্রতিবেদক
বাবা মারা গেছে ৫ বছর আগে। মা পেটের দায়ে মিলে কাজ করে। যা আয় হয় তাতে কোন মতে পেট চলে। তাতে দু’ভাই বোনের লেখাপড়া করা সম্ভব না। শুধু দিন পার করা। পড়ালেখার তুমুল আগ্রহ থাকলেও সম্ভব হয় না। সব আশা ছিকেই তুলে সংসারের কাজে মাকে সহায়তা করতে থাকি। অন্য বন্ধুদেরকে পড়ালেখা করতে দেখে নিরবে ডুকরে কাদি। এমন সময় যেন দেবদূত হয়ে আমার সামনে আসে পরিবর্তন-খুলনা। আমি নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। আমাকে আবার স্কুলে ভর্তি হতে বলে। আমি আর দেরি করি না। ভর্তি হই খুলনা পাওয়ার কোম্পানী লিমিটেডের সহযোগিতায়। আমাকে ভর্তির খরচ, পরীক্ষার ফিস এমনকি ফরম ফিলাপের টাকাও দেয়। আমি এসএসসি পাশ করে এখন খুলনা সরকারি মহিলা কলেজে পড়ছি। বলছিলেন, নগরীর ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা তাসনিম। দু’ভাই বোনের মধ্যে তাসনিম বড়। ছোট ভাই মারুফ শেখ এখন ৮ম শ্রেণীর ছাত্র। সেও কেপিসিএল এর সিএসআর প্রকল্প থেকে টাকা পেয়ে পড়ালেখা করছে।
জানা গেছে, খুলনা পাওয়ার কোম্পানী লিমিটেড (কেপিসিএল) এর আর্থিক সহায়তায় পরিবর্তন-খুলনা নগরীর ৭নং ওয়ার্ড এলাকায় সিএসআর প্রকল্পটি গত ২০১৩ সাল থেকে বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের আওতায় দর্জি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে ৫৬০ জনকে, বেসিক কম্পিউটার প্রশিক্ষণ পেয়েছে ৪৮৭, গ্রাফিক্স ডিজাইন ১৭৬, কম্পিউটার হার্ডওয়ার প্রশিক্ষনে ৩৩, স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হয়েছে ১৫ হাজার ৫৪৭, ব্লাড গ্রুপিং ২ হাজার ৩৯, বিভিন্ন উৎসবে প্রবীনদেরকে সহযোগিতা ৫৩৫, শীতবস্ত্রসহ শীতকালিন সামগ্রী বিতরণ ৩১৫, শিক্ষার্থীদেরকে স্কুল ড্রেস বিতরণ ৭ হাজার ৮৭২, নোট বুক ৫০ হাজার ৬ শত, কলম ৬৫ হাজার ৭৮০, শিক্ষার্থীদেরকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ২১৬, শিক্ষার্থীদেরকে মেধা ভিত্তিক উৎসাহ বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে ৪৩৩ জন শিক্ষার্থীকে, অত্র এলাকার ৬৫৫টি পরিবার থেকে প্রতিদিন বর্জ্য সংগ্রহ করে নিদির্ষ্টস্থানে ফেলা হয় এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ১ হাজার ৩৯০টি ফলজ, বনজ, ঔষধিসহ বিভিন্ন প্রকার বৃক্ষ রোপণ করা হয়।
খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী তাসনিম জানান, বাবা মারা যাওয়ার পর মা যে কাজ নিয়েছিলেন, সে কাজটিও এখন বন্ধ হয়ে গেছে। তাই বাসার সামনে মা পিঠা, পিয়াজু বানিয়ে বিক্রি করে। কোন মতে সংসার চলছে। আর এমন সময় শুনলাম সিএসআর প্রকল্পও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কেপিসিএল কি আমাদের কান্না শুনতে পায় না? আমার মতো অনেক অসহায়, দরিদ্র মানুষ রয়েছে যারা কেপিসিএল’র সিএসআর প্রকল্পের কারণে নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছে।
পরিবর্তন-খুলনার প্রোগ্রাম ম্যানেজার শিরিন পারভীন জানান, কেপিসিএল-সিএসআর প্রকল্পের প্রথম থেকেই আমি কাজ করছি। এ প্রকল্পের মাধ্যমে হতদরিদ্র মানুষদেরকে কাছ থেকে সহায়তা করার সুযোগ ছিল। অনেক মানুষ এ প্রকল্প থেকে উপকৃত হয়েছে। প্রকল্পটি চলতি মাসেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। খবরটি কর্ম এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। সবাই মন খারাপ করে আছে।
স্থানীয় বেসরকারি সংগঠন ছায়াবৃক্ষ’র প্রধান নির্বাহী মোঃ মাহবুব আলম বাদশা জানান, সিএসআর প্রকল্প থেকে এলাকার অনেকেই উপকৃত হয়েছে। এ এলাকার এমন কোন গরীব-দুঃখী বা অসহায় মানুষ নেই, যারা এ প্রকল্প থেকে উপকৃত হয়নি। এ প্রকল্প আরও কিছুদিন চললে ভাল হতো। এলাকার মানুষ আরও বেশি বেশি উপকৃত হবে।
তাসনিম, মারুফ শেখ, সামিয়া সুলতানার মতো অনেকেই সিএসআর প্রকল্পের সাহায্যে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। যারা আজ প্রকল্প বন্ধের খবরে হতাশ।

দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *