May 2, 2024
জাতীয়লেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

সোনালী ব্যাংকের ঋণখেলাপি নিয়ে উদ্বেগ, খোঁজ নেই অনেক গ্রাহকের

একে একে দেশের ব্যাংকিংখাতে নৈরাজ্যের খবর বের হচ্ছে। গণমাধ্যমের খবরে বেসরকারি একাধিক ব্যাংক থেকে নামসর্বস্ব কোম্পানি খুলে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার ঘটনা সামনে আসছে। তবে এমনটা শুধু বেসরকারি নয়, রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকেও ঘটছে। জামানত ছাড়া অনেক গ্রাহককে ঋণ দিয়েছে সোনালী ব্যাংক। আবার যাদের ঋণ দেওয়া হয়েছে এমন অনেকের কোনো খোঁজও নেই। এমন অবস্থায় সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অনুমিত হিসাব সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি।

সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকটির শুধু ঋণ বিতরণই নয়, খেলাপিদের থেকে বার্ষিক আদায়ের অবস্থাও নাজুক।

সোমবার (২৮ নভেম্বর) কমিটির এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

এমন অবস্থায় সাব কমিটি প্রতিবেদনে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ ও ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ঋণ প্রদাণের ক্ষমতা সীমিত করণসহ ১৪ দফা সুপারিশ করেছে।

সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক থেকে নাম ঠিকানাহীন কিছু প্রতিষ্ঠান বিপুল পরিমাণ টাকা ঋণ নিয়েছে বলে গণমাধ্যমে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালত উষ্মাও প্রকাশ করেছেন।

কমিটি জানিয়েছে, ব্যাংকের অনেক গ্রাহককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকগুলোর ক্ষেত্রে ঋণের বিপরীতে জামানত নেই। ব্যাংকটির বড় খেলাপিদের থেকে বার্ষিক আদায়ের হার এক শতাংশেরও কম।

সোনালী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, ন্যাশনাল ফিন্যান্স লিমিটেড, প্রিমিয়াম লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স লিমিটেডের খেলাপি ঋণের আর্থিক অনিয়ম যাচাই বাছাইয়ে ২০২১ সালের ৩ জানুয়ারি সংসদীয় কমিটি একটি সাব কমিটি গঠন করে।

কমিটির সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খানকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা ছিলেন আহসান আদেলুর রহমান ও খাজিদাতুল আনোয়ার।

কমিটি দীর্ঘ যাচাই বাছাই করে সোমবার অনুষ্ঠিত মূল কমিটির বৈঠকে প্রতিবেদন জমা দেয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাব কমিটির প্রধান ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, আমরা প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এটা নিয়ে পরবর্তী সময়ে আলোচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংককে সুপারিশ জানানো হবে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সোনালী ব্যাংকের ২০২০ সালের ডিসেম্বরে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার খেলাপি ঋণ গ্রাহকের সংশ্লেষ অর্থের পরিমাণ ১৭ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা। ডিসেম্বর ২০২১ এ খেলাপি ঋণ গ্রাহক কমে দাঁড়ায় তিন লাখ ৭৬ হাজার। কিন্তু খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয় ১৮ হাজার ৭৮৬ কোটি। এ বছর এপ্রিল পর্যন্ত খেলাপি ঋণ গ্রাহক কিছুটা বেড়ে হয় তিন লাখ ৯৭ হাজার। আর খেলাপি ঋণ কিছুটা কমে হয় ১৮ হাজার ৭১২ কোটি।

২০২০ সালের (৬ দশমিক ২২ শতাংশ) তুলনায় ২০২১ সালে (৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ) খেলাপি ঋণ আদায় কিছুটা বেড়েছে।

ডিসেম্বর ২০২০ সালে ১০ কোটি তদুর্ধ্ব ২৩৭ ঋণ খেলাপির সংশ্লেষ অর্থ ১১ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। ডিসেম্বর ২০২১ খেলাপির সংখ্যা বেড়ে হয় ৩০৮। একই সাথে খেলাপি ঋণের পরিমাণও বেড়ে হয় ১৩ হাজার ৪৭ কোটি টাকা। এপ্রিল ২০২২ এ খেলাপির সংখ্যা হয় ৩০৯ এবং খেলাপি ঋণের পরিমাণ হয় ১২ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা।

আর ব্যাংকটির মোট ঋণের বিপরীতে খেলাপি ১৬-১৭ শতাংশ। এসব খেলাপি ঋণের মধ্যে বছরে আদায়ের হার এক শতাংশেরও কম। যা মোটেও সন্তোষজনক নয়।

সাব কমিটি বলেছে- ব্যাংকটির অনেক গ্রাহকদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকগুলোর ক্ষেত্রে জামানত নেই। জামানত থাকলেও বিক্রির প্রক্রিয়া জটিল। জামানতের পরিমাণ ও আদায়ের হার আপাত দৃষ্টিতে ভালো দেখালেও ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের প্রকৃত অবস্থা যথেষ্ট উদ্বেগজন।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *